উদ্ভট উটের পিঠে চলেছি সবাই!
আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৩, ০৮:৫৬
ফেসবুকে সট্যাটাস, ফ্রেন্ড/আনফ্রেন্ড, ব্লক করা~~~~মাঝে মাঝে মনে হয়, এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয় নয়, আবার কখনও কখনও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলেই মনে হয়। এগুলো দিয়ে মানুষের জীবন, মানুষের প্রকৃতি, পরিবেশ-পরিস্থিতি, অনেক কিছুর আন্দাজ পাওয়া যায়। তিনটি উদাহরণ দেইঃ আমাকে এ পর্যন্ত আমার খুব প্রিয় তিনজন মানুষ, আমাকে না জানিয়েই তাদের ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে 'আনফ্রেন্ড' করে দিয়েছে। 'কবে আনফ্রেন্ড করেছে জানতে পারিনি, অথবা খেয়াল করিনি। নানা উছিলায় ব্যাপারটি জেনেছি। ১)আমার এক কাজিনকে ভুমিকম্প হওয়ার সময় কি কি প্রিকশান নিতে হয়, তেমনই একটি লিঙ্ক পাঠাতে গিয়ে দেখি, ওর নাম কোথাও নেই। পরে দেখলাম, কাজিন আমাকে 'আনফ্রেন্ড' করে দিয়েছে। ফোন করে জেনেছি, আমি ব্লগে লেখালেখি করি বলে ও ভয় পেয়েছে, বাংলাদেশে ব্লগার মানেই তো 'নাস্তিক', নাস্তিকদের তো বাংলাদেশে জায়গা নেই, নাস্তিকের 'কাজিন' হওয়ার অপরাধে নিশচয়ই তারও ঠাঁই হবেনা কোথাও, তার চেয়ে আমাকে 'আনফ্রেন্ড' করে দেয়াটাই সর্বোত্তম পন্থা মনে হয়েছে। আমার ফোন পেয়ে অবশ্য চক্ষুলজ্জায় কাজিন আবার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে, কিন্তু আমি তাকে বলেছি, যে দেশের মানুষ, দেশের ক্রমাবনতিতে নিজের বোনের সাথে যোগাযোগ রাখতে ভয় পায়, সেই দেশে শান্তি ফিরে আসুক, তারপর ভেবে দেখবো তোর সাথে যোগাযোগ রাখবো কিনা! **উপসংহারঃ উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ! ২) আমার এক বন্ধু, জাহাঙ্গীরনগরিয়ান, আমার সাথে ফেসবুকে দারুণ যোগাযোগ ছিল, প্রতিদিন অনলাইন চ্যাটিং হতো, জীবনের কত গল্প শেয়ার করতাম। দেশে গিয়ে ওর সাথে দেখা হলো, ও আমাকে একটি শাড়ী উপহার দিল, শাড়ী পড়ে আমি তো মহাখুশী, বন্ধুর পছন্দের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলাম। ্মা মারা গেলো, লেখালেখিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম, তাই অনলাইন চ্যাটিং কমে গেলো। একদিন বন্ধুকে মনে পড়লো, ওকে একটি মেসেজ পাঠাতে গিয়ে ওর নাম আর খুঁজে পাইনা। আমি চিন্তাও করিনি, বন্ধু আমাকে 'আনফ্রেন্ড' করে দিয়েছে। তার নাম খুঁযে বের করে মেসেজ পাঠালাম, " তুমি আমাকে 'আনফ্রেন্ড করে দিয়েছো?? কিন্তু কেন?" উত্তর এলো, " একান্ত বাধ্য হয়ে তোমাকে আনফ্রেন্ড করেছি। শুধু তোমাকে নয়, সকল মেয়ে বন্ধুকে, এমনকি আমার খালাকেও। কারণ আমার বউ'কে অ্যাড করতে হয়েছে আমার ফ্রেন্ড লিস্টে! এটাই আমাদের সংসার টিকিয়ে রাখার শর্ত, বউ ছাড়া আর কোন নারী থাকবেনা আমার ফ্রেন্ড লিস্টে। বন্ধু তুমি আমাকে ই-মেইল করো, প্লীজ"। জিজ্ঞেস করলাম, " বাঁচবে কয়দিন? সংসার কত বছরের? এত বছরেও পারস্পরিক বিশ্বাস জন্মালোনা? তাহলে আর বন্ধুত্ব করে কাজ নেই, বন্ধুত্বে আমি কোন গোপনীয়তা রাখিনা, বন্ধু সবাই হয়ওনা, তুমি আমার বন্ধু হলে আমাকে জানিয়ে তবেই আমাকে আনফ্রেন্ড করতে! তাছাড়া তোমার বউ তো একজন অধ্যাপিকা, কি শেখাচ্ছেন ছাত্রীদেরকে? যার নিজের আত্মবিশ্বাস কম, সে ছাত্রীদেরকে কি ভাবে আত্মবিশ্বাস শেখাবেন? তার ভয়ে তুমি আমাকে চোরের মত ই-মেইলে যোগাযোগ রাখতে বলছো? আমি কেন চোরের মত তোমার সাথে যোগাযোগ রাখবো? এমন প্রস্তাব দিলেইবা কীভাবে? সে বলে, " বন্ধু, আমাকে ভুল বুঝোনা, প্লীজ, আমার সাথে যোগাযোগ ছেড়ে দিওনা"। " আমার নিজেরই ইচ্ছে নেই এভাবে চোরের মত কোন কাজ করা। যে তার স্ত্রী বা স্বামীর কাছে নিজের স্বচ্ছতা আড়াল করে রাখে, তারা দাম্পত্য জীবনে সুখী হয়না। তোমার স্ত্রী ফার্স্ট প্রায়োরিটি, সুতরাং আপাতত বিদায়। তোমার সাথে আবার যোগাযোগ হবে যদি তোমার স্ত্রী আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। কি আশ্চর্য্য! এই একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও ,জীবনের মাঝপথে পৌঁছেও পারস্পরিক অবিশ্বাস, পরস্পরকে হারাণোর ভয়'! ** উপসংহারঃ উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে 'সংসার'! ৩) আমার এক বন্ধু, মিসিসিপিতেই পরিচয়, বন্ধুটি খুবই স্মার্ট, রুচিশীলা, উচ্চশিক্ষিতা, আমাকে 'দিদি' বলে ডাকতো, ফেসবুকেও যোগাযোগ ছিল। কয়েকমাস আগেও এক অনুষ্ঠানে দেখা হলো, গল্প হলো, হাসাহাসি হলো। গতমাসে লক্ষ্য করেছি, আমারই কোন একটি ছবিতে বন্ধুটির কমেন্ট এর পাশে দেখাচ্ছে মিউচ্যুয়াল ফ্রেন্ড নাম্বার, ভালো করে তাকিয়ে দেখি, ও আমাকে 'আনফ্রেন্ড' করে দিয়েছে। অবাক হয়েছি, ও তো বাংলাদেশের মেয়ে নয়, কাজেই আমার লেখালেখির কারণে ওকে কেউ 'নাস্তিক' বলবেনা, তাহলে আমাকে আনফ্রেন্ড করলে কেন? মেসেজ পাঠালাম, আমাকে আনফ্রেন্ড করে দিয়েছো? কেন? আমি কি নিজের অজান্তে তোমাকে কষ্ট দিয়েছি মনে?" নো রিপ্লাই। আজকেই ওর আরেক বন্ধুর কাছ থেকে জানতে পারলাম, আমার লেখা ওর পছন্দ হয়না, বোরিং লাগে, তাই 'আনফ্রেন্ড' করে দিয়েছে। হাসবো না কাঁদবো? আমার লেখার মান খারাপ হতে পারে, একঘেঁয়ে, ফালতু মনে হতেই পারে, ভাল না লাগলে পড়োনা, অথবা বন্ধুর ভাল চাইলে লেখায় ভুল গুলো ধরিয়ে দাও, তা না করে এমন চুপিসারে 'আনফ্রেন্ড' করে দিলে? তাও আবার এমন খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে? আবার হয়তো কোন অনুষ্ঠানে দু'জনের দেখা হয়ে যাবে। তখন কি আর বন্ধুত্বের বিশ্বাসী হাসি দিয়ে এগিয়ে আসতে পারবে আমার কাছে? যা আমার ভালোলাগা, আনন্দ, পরিশ্রম, সাধনার বিষয়, সেই লেখালেখির দোহাই দিয়ে আমাকে না-বন্ধু করে দিলে বন্ধন আর থাকলো কই? **উপসংহারঃ উদ্ভট উটের পিঠে চলেছি সবাই
- ট্যাগ:
- জীবন চর্চা