ছবি সংগৃহীত

উইপোকার প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক

প্রিয় লাইফ
লেখক
প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩, ১০:০৪
আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩, ১০:০৪

বিভিন্ন রকমের ক্ষতিকর পোকামাকড় দমনের জন্য রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারের বিপক্ষে রয়েছেন পরিবেশবাদীরা। এ কারনেই ভাইরাস এবং ছত্রাক জাতীয় জীবাণু ব্যবহার করে এদেরকে মেরে ফেলার প্রচেষ্টা চলছে। কিন্তু অনেক প্রাণীর ক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী হলেও পোকামাকড় দমনের এই জৈবিক পদ্ধতিটি উইপোকার ক্ষেত্রে ঠিক যেন কাজ করছিলো না। এবার তার কারণ বের করলেন গবেষকরা। উইপোকা নিজের বর্জ্য ব্যবহার করেই এসব জীবাণু থেকে নিজেকে রক্ষা করে থাকে! ইউনিভার্সিটি অফ ফ্লোরিডার পতঙ্গবিশারদরা এ নিয়ে গবেষণা করেন এবং রয়াল সোসাইটির জার্নাল প্রোসিডিংস এ প্রকাশিত হ��় এই গবেষণার তথ্য।

প্রতি বছর সারা বিশ্বে উইপোকারা প্রায় চল্লিশ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করে থাকে। বিগত পঞ্চাশ বছর ধরে ৩৫ টি দেশের প্রায় ১২৫ বিজ্ঞানীর চেষ্টার পরেও উইপোকা দমনের জৈব পদ্ধতি বের করা সম্ভব হচ্ছিল না। নিজেদের রক্ষার বিভিন্ন উপায় রয়েছে তাদের শরীরে। এ ব্যাপারে জানার জন্য এই গবেষকরা Formosan subterranean termite (Coptotermes formosanus) নামের উইপোকার জাতটি বেছে নেন। সারা বিশ্বে উইপোকা দিয়ে যত ক্ষতি হয় তার মাঝে সবচাইতে বেশি কুকর্ম করে থাকে এই জাতটিই। এগুলো মাটির নিচে বাসা বানায় যাতে এক মিলিয়ন পর্যন্ত উইপোকা বাস করতে পারে। এই বাসার টানেলগুলো হতে পারে ৪৯০ ফুট পর্যন্ত লম্বা! এরা বাসা বানানোর জন্য নিজের বর্জ্য মেশায় চিবানো কাঠের সাথে। এছাড়া এই বর্জ্য দিয়ে তারা টানেলের দেয়াল লেপে দেয়। গবেষকরা ধারণা করেন এই বর্জ্য লেপার মাধ্যমে তারা নিজেরাই এক ধরণের উপকারী জীবাণুর চাষ করে। গবেষকরা ফ্লোরিডার পাঁচটি উইপোকা বসতি থেকে এই জীবাণু সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করেন। এতে দেখা যায়, এর মাঝে ৭০ ভাগ জীবাণুই উইপোকার জন্য ক্ষতিকর ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়ার বিপক্ষে কাজ করে! উইপোকারা নিজেদের পেটে কাঠ হজম করার জন্য জীবাণুর সাহায্য নেয়। তারা যে রোগবালাই দমনের জন্য নিজেদের বাড়িতে জীবাণুর চাষ করে সেটা এবার দেখা গেলো। গবেষণার জন্য বিজ্ঞানীরা উইপোকার নকল বাসা তৈরি করেন এবং এতে উইপোকা ছেড়ে দিয়ে তাদের জন্য ক্ষতিকর একটি ছত্রাক প্রবেশ করানো হয়। দেখা যায়, যেসব বাসার দেয়ালে ওই উপকারী জীবাণু দেওয়া হয়েছিল সেসব বাসার উইপোকারা বেঁচে যায়।
“নিজেদের বর্জ্য ব্যবহার করে পরিবেশে পরিবর্তন আনার মাধ্যমে উইপোকারা কিছু উপকারী জীবাণুর বৃদ্ধি তরান্বিত করে”, বলেন এই গবেষণায় জড়িত থমাস শোভেঙ্ক। তিনি ইউনিভার্সিটি অফ ফ্লোরিডার একজন পতঙ্গবিদ। “নিজে থেকে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির চাইতে এভাবে অন্য কোনও প্রাণীর সাহায্য নেওয়া অনেক বেশি সহজ”। মানুষের পেটেও এমন অনেক জীবাণু বসবাস করে থাকে যাদের কল্যাণে আমরা অনেক ক্ষতিকর ইনফেকশনের হাত থেকে বেঁচে যাই। তবে উইপোকারা এসব জীবাণু নিজের শরীরের বাইরে ব্যবহার করে। গবেষকরা ধারণা করছেন এসব জীবাণুতে এমন কোনও রাসায়নিক পদার্থ তৈরি হয় যা উইপোকার স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং কাজ করে অনেকটা অ্যান্টিবায়োটিকের মতো । এই জীবাণু উইপোকা কোথা থেকে পায় তা অবশ্য সঠিক জানা যায় নি। এক বাসা থেকে আরেক বাসায় এটা আসতে পারে অথবা বাসার আশেপাশের মাটি থেকেও একে সংগ্রহ করা হতে পারে।