
ছবি সংগৃহীত
ইসলামের দৃষ্টিতে পাপের পরিতাপ ও তওবা
আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৪, ০২:৫৫
তাওবা করা ওয়াজিব কুরআন, হাদীস ও উম্মাতের ঐক্যমতে প্রমাণিত হয়েছে যে, পাপ থেকে তাওবা করা ওয়াজিব। মানুষের কর্তব্য হল, সে সকল প্রকার পাপ থেকে তাওবা করবে, যা সে করেছে। যদি সে এক ধরনের পাপ থেকে তাওবা করে, অন্য ধরনের পাপ থেকে তাওবা না করে তাহলেও সে পাপটি থেকে তাওবা হয়ে যাবে। তবে অন্যান্য পাপ থেকে তওবা তার দায়িত্বে থেকে যাবে। একটি বা দুটো পাপ থেকে তাওবা করলে সকল পাপ থেকে তাওবা বলে গণ্য হয় না। যেমন এক ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলে, ব্যভিচার করে, মদ্যপান করে। সে যদি মিথ্যা কথা ও ব্যভিচার থেকে যথাযথভাবে তওবা করে তাহলে এ দুটো পাপ থেকে তওবা হয়ে যাবে ঠিকই। কিন্তু মদ্যপানের পাপ থেকে তওবা হবে না। এর জন্য আলাদা তওবা করতে হবে। আর যদি তাওবার শর্তাবলী পালন করে সকল পাপ থেকে এক সাথে তাওবা করে তাহলেও তা আদায় হয়ে যাবে। তওবা করে আবার পাপে লিপ্ত হয়ে পড়লে আবারও তাওবা করতে হবে। তওবা রক্ষা করা যায় না বা বারবার তওবা ভেঙ্গে যায় এ অজুহাতে তওবা না করা শয়তানের একটি ধোকা বৈ নয়। অন্তর দিয়ে তওবা করে তার উপর অটল থাকতে আল্লাহ তাআলার কাছে তাওফীক কামনা করা যেতে পারে। এটা তাওবার উপর অটল থাকতে সহায়তা করে। তওবা পরিচিতি তওবা শব্দের আভিধানিক অর্থ - ফিরে আসা। পরিভাষায় তওবা হল : যে সকল কথা ও কাজ মানুষকে আল্লাহর নৈকট্য থেকে দূরে সরিয়ে দেয় তা থেকে ফিরে এসে ঐ সকল কথা ও কাজে লেগে যাওয়া, যা দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় ও তাঁর অসন্তুষ্টি থেকে বেঁচে থাকা যায়। এক কথায় পাপ-কর্ম থেকে ফিরে এসে সৎকাজে প্রবৃত্ত হওয়া। পাপ বা অপরাধের প্রকারভেদ এবং তাওবার শর্ত এক. যে সকল পাপ শুধুমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের হক বা অধিকার সম্পর্কিত। যেমন শিরক করা, নামাজ আদায় না করা, মদ্যপান করা, সুদের লেনদেন করা ইত্যাদি। দুই. যে সকল পাপ বা অপরাধ মানুষের অধিকার সম্পর্কিত। যে পাপ করলে কোন না কোন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেমন, জুলুম-অত্যাচার, চুরি-ডাকাতি, ঘুষ খাওয়া, অন্যায়ভাবে সম্পদ আত্নসাৎ ইত্যাদি। প্রথম প্রকার পাপ থেকে আল্লাহর কাছে তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করার সাথে তিনটি শর্তের উপস্থিতি জরুরী। শর্ত তিনটি হল : (১) পাপ কাজটি পরিহার করা। (২) কৃত পাপটিতে লিপ্ত হওয়ার কারণে আন-রিকভাবে অনুতপ্ত হওয়া। (৩) ভবিষ্যতে আর এ পাপ করব না বলে দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা। দ্বিতীয় প্রকার পাপ থেকে তাওবা করার শর্ত হল মোট চারটি: (১) পাপ কাজটি পরিহার করা। (২) কৃত পাপটিতে লিপ্ত হওয়ার কারণে আন-রিকভাবে অনুতপ্ত হওয়া। (৩) ভবিষ্যতে আর এ পাপ করব না বলে দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা। (৪) পাপের কারণে যে মানুষটির অধিকার ক্ষুন্ন করা হয়েছে বা যে লোকটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার পাওনা পরিশোধ করা বা যথাযথ ক্ষতিপুরণ দিয়ে তার সাথে মিটমাট করে নেয়া অথবা তার কাছে ক্ষমা চেয়ে দাবী ছাড়িয়ে নেয়া। বার বার পাপ করে বার বার তওবা কেও একটি পাপ কাজ করার সাথে সাথে তওবা করলো, কিন্তু একই কাজ আবারো করলো, এভাবে কতবার পর্যন্ত তওবা আল্লাহের দরবারে কবুল হবে ? আমি শুনেছি ৩ বারের বেশী তওবা কবুল হয়না ? মৃত্যুর ডাক আসার আগ পর্যন্ত তওবা কবুল হবে। তওবার ৩ টি শর্ত খালেস ভাবে পুরন করার পর আমরন চেষ্টা করে সেই তওবা রক্ষা করে চলতে হবে। তবুও যদি ভঙ্গ হয়ে যায় তবে আবার তওবা করবে। অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে যায় গুনাহ হলো ঘৃণ্য আবর্জনা, সর্বাবস্থায় যা বর্জন করা আবশ্যক। গুনাহের এ আবর্জনা আমরা যদিও চোখে দেখি না, তার গন্ধ অনুভব করি না; কিন্তু মানুষের অন্তরে এর প্রভাব লক্ষণীয়। রাসুল [সা.] বলেছেন, ‘মুমিন বান্দা যখন কোনো গুনাহ করে, তখন তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে। আর যদি সে তওবা করে নেয়, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, তবে তার অন্তর মসৃণ হয়ে যায়। আর যদি সে আরো পাপ করে তবে দাগ আরো বেড়ে যায়, এটাই হলো বান্দার অন্তর আচ্ছাদিত হয়ে যাওয়া; যার উল্লেখ আল্লাহ পাক কোরানে করেছেন।’ [ইবনে মাজাহ] সকল মানুষই পাপ করে, গুনাহ করে সকল মানুষই পাপ করে, গুনাহ করে। তবে পার্থক্য হলো কেউ পাপ করার সঙ্গে সঙ্গে তওবা করে নেয়। কৃতপাপের জন্য ক্ষমা চায় এবং অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ফিরে আসার চেষ্টা করে। পক্ষান্তরে অনেকেই এমন আছে যাদের অন্তরে পাপ স্তূপীকৃত হতে থাকে অথচ সে তওবা করে নিজকে পবিত্র করে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ইমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা কর, খাঁটি তওবা; আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদের এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত। [সুরা আত-তাহরিম:৮] হজরত আবু হুরায়রা [রা.] বলেন, আমি রাসুলকে [সা.] বলতে শুনেছি, ‘নিশ্চয় আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, আমি তার কাছে দৈনিক সত্তর বারের বেশি তওবা করি। [বোখারী] সহিহ তওবার করা এবং পাঁচটি গুণের সমষ্টি সহিহ তওবার জন্য পাঁচটি গুণের কথা বলা হয়েছে। ১. একনিষ্ঠতার সঙ্গে তওবা করা। তওবায় আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও তার মহাত্ম্যেররে প্রতি সম্মান প্রদর্শন, তার কাছে কল্যাণের আশা করা এবং তার শাস্তি থেকে ভয় পাওয়া ইত্যাদির উপস্থিতি অত্যন্ত জরুরি। ২. কৃত গুনাহের জন্য লজ্জিত হওয়া ও হীনতা প্রকাশ করা এবং এ মনোভাব প্রকাশ করা যে, এ তওবা কবুল না হলে পুরো জীবনটাই বৃথা যাবে। ৩. অতি দ্রুত গুনাহের কাজ ত্যাগ করা। ৪. কৃত অপরাধে পুনরায় ফিরে না যাওয়ার সুদৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। ৫. তওবা কবুলের সময় শেষ হওয়ার আগেই তওবা করা। হজরত আলী [রা.] থেকে বর্ণিত, নবিজি [সা.] বলেছেন, কোনো ব্যক্তি যদি গুনাহ করার পর উত্তমরূপে অজু করে, অতঃপর দু’রাকাত নামাজ পড়ে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, তবে আল্লাহ তাকে অবশ্যই মাফ করে দেবেন। [আহমদ] আল্লাহ আমাদের সবাইকে পাপের পরিতাপ ও সঠিক সময়ে তওবা করার মাধ্যমে পাপ থেকে মুক্তি লাভের তওফিক দান করুন। আমিন। মাওলানা মিরাজ রহমান