ছবি সংগৃহীত

আশারায়ে মুবাশশিরিন-৮ : আমিনুল উম্মাহ আবু উবাইদা ইবনে জাররাহ (রা.)

priyo.Islam
লেখক
প্রকাশিত: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, ০৭:৫৬
আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, ০৭:৫৬

পুরো নাম আমির ইবনে আবদুল্লাহ ইবনুল জাররাহ আল ফিহ্রি আল কোরাইশি। তবে তিনি আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ নামে ইতিহাসে সমধিক খ্যাত। তাঁর বাবার নাম আবদুল্লাহ ইবনুল জাররাহ। তাঁর মা-বাবা উভয়েই ছিলেন 'ফিহ্র' খান্দানের লোক। হজরত আবু উবাইদা (রা.)-এর পঞ্চম ঊর্ধ্বতন পুরুষ 'ফিহ্র'-এ গিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বংশধারার সঙ্গে মিলিত হয়। তিনি ছিলেন দীর্ঘদেহী, প্রশস্ত ললাটবিশিষ্ট, উজ্জ্বল বর্ণ, মেদহীন সুঠাম দেহের অধিকারী। মায়াবী চেহারার কারণে প্রথম দর্শনেই দর্শকমাত্র আকৃষ্ট হতো তাঁর প্রতি। আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন ও চারিত্রিক দৃঢ়তার কারণে সবার কাছে তিনি ছিলেন বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। তিনি ছিলেন সমকালীন কোরাইশ যুবকদের মধ্যে সবচেয়ে সুদর্শন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেছেন, কোরাইশদের মধ্যে তিনজন ছিলেন অন্য সবার চেয়ে সুদর্শন। উত্তম চরিত্র ও লজ্জাশীলতার জন্য তাঁরা ছিলেন সবার ঊধর্ে্ব। তাঁরা কখনো মিথ্যা কথা বলেন না। তাঁরা হলেন আবু বকর সিদ্দিক, উসমান ইবনে আফ্ফান ও আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রিসালাত লাভের পর অল্প দিনের মধ্যেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। হজরত আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ 'সাবেকিনে আওয়ালিনের' অন্যতম। হজরত আবু বকর (রা.)-এর ইসলাম গ্রহণের পরদিন তিনি ইসলাম কবুল করেন। আবু বকর (রা.)-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের কারণে প্রথমে তিনি তাঁর হাতেই ইসলাম গ্রহণ করেন। অতঃপর হজরত আবু বকর (রা.) আবদুর রহমান ইবনে আউফ, উসমান ইবনে মাজউন, আল আরকাম ইবনে আবিল আরকাম ও আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহকে সঙ্গে নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে সম্মিলিতভাবে কালেমায়ে শাহাদাৎ পাঠ করে ইসলামের ঘোষণা দেন। এই ছিল সম্মিলিতভাবে ইসলাম গ্রহণের প্রথম ঘোষণা। আর তাঁরাই হলেন ইসলামের বুনিয়াদি স্তম্ভ। ইসলামের সূচনালগ্নে যাঁরা মুসলমান হয়েছিলেন, তাঁদের জন্য মুশরিক কোরাইশদের অত্যাচার আর নির্যাতন ছিল একটি অপরিহার্য বিষয়। হজরত আবু উবাইদা (রা.) ছিলেন সংকল্পে অত্যন্ত দৃঢ়। কাফিরদের শত নির্যাতনেও তিনি ইমানের পথ থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হননি। সব সংকট ও পাহাড়সম প্রতিকূলতায় তিনি আল্লাহর রাসুলকে ছায়ার মতো অনুসরণ করেছেন। ইমানের ওপর ইস্পাতসম দৃঢ়তা আর রাসুল (সা.)-এর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার কারণে তাঁর জীবনে আগত সব ইমানি পরীক্ষায় তিনি শতভাগ কামিয়াব হয়েছেন। দ্বীন ও ইমান রক্ষায় তাঁকে দুবার হাবশায় হিজরত করতে হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মদিনায় হিজরতের পর তিনি সেখানে হিজরত করেন। 'জুল হিজরাতাইন' হিসেবেও সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে তাঁর বিশেষ মর্যাদার আসন ছিল। আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রা.) ছিলেন আল্লাহর অকুতোভয় সৈনিক। বদর, উহুদ, খন্দক, তাবুক, হুনায়েনসহ রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে প্রায় সব যুদ্ধেই তিনি অসীম সাহসিকতায় লড়াই করেছেন কাফিরদের বিরুদ্ধে। তাঁর চৌকস রণকৌশল খোদার দুশমনদের হৃদয়ে কম্পন সৃষ্টি করত। শত্রুসেনার তীর-বর্শার আঘাতে জখম হয়েও রক্তাক্ত অবস্থায়ও বীরবিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়তেন শত্রুসেনাদের ওপর। তবে তাঁর ইমানের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষাটি হয়েছিল বদর যুদ্ধের দিনে। আর তিনি সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন শতভাগ সাফল্যের সঙ্গে। হজরত আবু উবাইদা (রা.) ছিলেন তীক্ষ্ন বুদ্ধিসম্পন্ন ও বিচারিক দক্ষতায় পরিপূর্ণ এক ব্যক্তি। একবার খ্রিস্টানদের এক প্রতিনিধিদল রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে এসে বলল, 'হে আবুল কাসিম, আপনার সাথিদের মধ্য থেকে একজন বিশ্বস্ত ও আপনার মনোনীত ব্যক্তিকে আমাদের সঙ্গে পাঠান, যিনি আমাদের মধ্যে বিতর্কিত সম্পদের বিষয়ে ফয়সালা দান করবেন। কারণ এ বিষয়ে আপনাদের ইসলামের বিধান আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য ও মনঃপূত।' তাদের কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, 'তোমরা সন্ধ্যায় আবার আমার কাছে আসবে। আমি তোমাদের সঙ্গে একজন দৃঢ়চেতা ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে পাঠাব।' হজরত উমার ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, "আমি সেদিন সকাল সকালই মসজিদে নববীতে উপস্থিত হলাম। আর সেদিনের মতো অন্য কোনো দিনই আমি নেতৃত্বের জন্য এতটা লালায়িত হইনি। কারণ ছিল আমি যেন রাসুল (সা.) কর্তৃক প্রশংসিত ব্যক্তিটি হতে পারি। নামাজ শেষে রাসুলুল্লাহ (সা.) ডানে-বাঁয়ে তাকাতে লাগলেন। আর আমিও তাঁর নজরে আসার জন্য আমার গর্দানটি উঁচু করতে লাগলাম। কিন্তু তিনি চোখ ঘোরাতে ঘোরাতে একসময় আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহকে ডেকে নিলেন। রাসুল (সা.) তাঁকে বললেন, 'তুমি তাদের সঙ্গে যাও এবং সত্য ও ন্যায়ের ভিত্তিতে তাদের বিতর্কিত বিষয়টি মীমাংসা করে দাও।' হজরত উমার (রা.) বলেন, আমি তখন মনে মনে বললাম, আবু উবাইদা এ মর্যাদাটা ছিনিয়ে নিয়ে গেল।" রাসুলে করিম (সা.)-এর ইন্তেকালের পর যখন সাকিকায়ে বনি সায়েদায় রাসুল (সা.)-এর উত্তরাধিকারী মনোনয়নের বিষয়ে মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে তুমুল বিতর্ক চলছিল, তখন হজরত আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রা.) সেখানে আনসারদের উদ্দেশে এক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন। তিনি বলেন, 'হে আনসার সম্প্রদায়! তোমরাই ইসলামের প্রথম সাহায্যকারী। আজ তোমরা খলিফা নির্বাচনের বিষয়ে প্রথম বিভেদ সৃষ্টিকারী হয়ে যেয়ো না।' এভাবে তিনি ভাষণ দিচ্ছিলেন। এ অবস্থায় হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) সেখানে উপস্থিত হন। হজরত আবু বকর (রা.) সেখানে কিছু কথা বলেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে আনসাররা তাদের দাবি থেকে ফিরে আসে এবং মুহাজির তথা কোরাইশদের অগ্রাধিকার মেনে নেয়। অতঃপর আবু বকর (রা.) বলেন, "হে আবু উবাইদা! আপনার হাতটি বাড়িয়ে দিন, আমি আপনার হাতে বায়াত গ্রহণ করি। কারণ আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, 'প্রত্যেক উম্মতেরই একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি আছে, তুমি এ উম্মতের বিশ্বস্ত ব্যক্তি'।" হজরত আবু বকর (রা.)-এর প্রস্তাবের জবাবে তিনি বলেন, 'আমি এমন এক ব্যক্তির সামনে আমার হাতকে বাড়িয়ে দিতে পারি না, যাঁকে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের নামাজের ইমামতি করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং যিনি রাসুলের ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত ইমামতির দায়িত্ব পালন করেছেন।' এ কথার পর আবু উবাইদা (রা.) আবু বকর (রা.)-এর হাতে বায়াতের প্রস্তাব করেন এবং আবু বকর (রা.)-এর খলিফা নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। তিনি প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) ও দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ফারুক (রা.)-এর অত্যন্ত আস্থাভাজন ও প্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। আবু উবাইদা (রা.) উভয়ের খেলাফতকালে বিশেষ পরামর্শকের ভূমিকা পালন করেন। হজরত আবু বকর (রা.) রাসুলে করিম (সা.)-এর অন্তিম ইচ্ছানুযায়ী সিরিয়া অভিযানের সিদ্ধান্ত নেন। ৬৩৩ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম সেনাদলকে তিন ভাগে ভাগ করে একটি সুপরিকল্পিত অভিযানের প্রস্তুতি নেন। তিন হাজার সেনার তিনটি বাহিনীর একটি আমর ইবনুল আসের নেতৃত্বে প্যালেস্টাইনের দিকে, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দল দুটি যথাক্রমে ইয়াজিদ ইবনে আবু সুফিয়ান ও সুরাহবিল ইবনে হাসানের নেতৃত্বে তাবুকের দিকে প্রেরণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে আবু উবাইদা (রা.) আরেকটি বাহিনী নিয়ে সিরিয়ার দিকে অগ্রসর হন। সব মুসলিম বাহিনীর সব অভিযানে বিজয়ের সংবাদে হিরাক্লিয়াস মুসলিম আধিপত্যকে সমূলে বিনাশের লক্ষ্যে দুই লাখ ৪০ হাজার সেনার এক বিশাল বাহিনী প্রস্তুত করে। তাদের মোকাবিলার জন্য ইয়াজিদ, সুরাহবিল ও আবু উবাইদার নেতৃত্বাধীন তিনটি বাহিনী একত্র হয়। আর খলিফার নির্দেশে খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) তাঁর বাহিনী নিয়ে বসরা থেকে এসে তাঁদের সঙ্গে মিলিত হন। সম্মিলিত মুসলিম বাহিনী সেনাসংখ্যা ছিল মাত্র ৪০ হাজার। ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জুলাই আজনাদাইন প্রান্তরে দুই বাহিনীর মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মুসলিম বাহিনী সিরীয় বাহিনীকে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত করে এবং পুরো প্যালেস্টাইনে মুসলিম আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ইতিহাসখ্যাত এ যুদ্ধে হজরত আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রা.) অসীম সাহসিকতা ও রণনৈপুণ্যের পরিচয় দেন। তিনিই এ যুদ্ধে সম্মিলিত মুসলিম বাহিনীর নেতৃত্ব দেন বলে জানা গেছে। ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.) হজরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদকে সিরিয়ার শাসনকর্তার পদ থেকে অপসারণ করে তাঁর স্থলে আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রা.)কে নিয়োগ দেন। হজরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) জনগণকে উদ্দেশ করে বলেন, "তোমাদের খুশি হওয়া উচিত, কারণ 'আমিনুল উম্মাহ' তোমাদের ওয়ালি নিযুক্ত হয়েছেন।" ৬৩৭ খ্রি. আবু উবাইদা (রা.)-এর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী জেরুজালেম অবরোধ করে এবং খ্রিস্টান ধর্মগুরু সাফ্রোনিয়াস জিজিয়া কর প্রদানের বিনিময়ে জান, মাল, গির্জা, বাসস্থানের নিরাপত্তা দেওয়ার শর্তে সন্ধিচুক্তি স্বাক্ষর করেন। খ্রিস্টানদের দাবি মতে, আবু উবাইদার আহ্বানে মুসলিম সাম্রাজ্যের প্রধান খলিফা ওমর (রা.) জেরুজালেম আগমন করে চুক্তিপত্রে মুসলমানদের পক্ষে স্বাক্ষর করেন। ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে রোমান সম্রাটের প্ররোচনায় ৩০ হাজার জাজিরাবাসী মুসলিম আধিপত্য নির্মূলে অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। মুসলিম সাম্রাজ্যের নিরাপত্তাবিধানে আবু উবাইদা (রা.) তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে জাজিরা দখল করে নেন। এভাবে একের পর এক অভিযান পরিচালনা করে আবু উবাইদা (রা.) মুসলিম সাম্রাজ্য বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছিলেন। এমন সময়ে সিরিয়া অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ ও মহামারি চরম আকার ধারণ করে। প্লেগে ব্যাপক জীবনহানির খবরে হজরত ওমর (রা.) আবু উবাইদার জীবন নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েন। তিনি কেন্দ্রীয় খেলাফতের জন্য তাঁর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে তাঁকে মদিনায় ডেকে পাঠান। খলিফা আবু উবাইদাকে পত্র লেখেন, 'আপনাকে আমার খুবই প্রয়োজন। অত্যন্ত জরুরি ভিত্তিতে আপনাকে আমি তলব করছি। আমার এ পত্রখানা যদি রাতের বেলায় আপনার হাতে পেঁৗছায়, তাহলে সকাল হওয়ার আগেই মদিনার উদ্দেশে রওনা দেবেন। আর যদি দিনের বেলা পেঁৗছায়, তাহলে সন্ধ্যা হওয়ার আগেই আপনি রওনা দেবেন।' খলিফা ওমর (রা.)-এর পত্রখানা হাতে পেয়ে আবু উবাইদা (রা.) মন্তব্য করেন, 'আমাকে দিয়ে আমিরুল মুমিনিনের প্রয়োজনটা কী তা আমি বুঝতে পারছি। যে বেঁচে নেই, তাকে তিনি বাঁচাতে চান।' অতঃপর তিনি হজরত ওমর (রা.)কে লেখেন : 'আমিরুল মুমিনিন, আমাকে আপনার প্রয়োজন কিসের, সেটা আমি বুঝতে পেরেছি। আমি তো মুসলিম মুজাহিদদের মধ্যে অবস্থান করছি। তাদের ওপর যে বিপদ আপতিত হয়েছে, আমি নিজেকে তা থেকে দূরে সরিয়ে নিতে চাই না। আমি তাদের ছেড়ে যেতে চাই না, যতক্ষণ না আল্লাহ আমার ও তাদের মধ্যে চূড়ান্ত ফয়সালা করে দেন। আমার এ পত্রখানা আপনার হাতে পেঁৗছার পর আপনি আপনার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুন এবং আমাকে এখানে অবস্থানের অনুমতি দিন।' আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রা.)-এর চিঠি হাতে পেয়ে হজরত ওমর (রা.) অঝোরে কাঁদতে শুরু করলেন। চোখের পানিতে তাঁর দাড়ি ভিজে যাচ্ছিল। আশপাশের লোকজন তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আবু উবাইদা কি মারা গেছেন? হজরত ওমর (রা.) উত্তর দিলেন না। তবে তিনি মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে উপনীত। হজরত ওমর (রা.)-এর অনুমান সত্যে পরিণত হয়। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রা.) প্লেগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর আগ মুহূর্তে তিনি সেনাবাহিনীকে উদ্দেশ করে সংক্ষিপ্ত এক ভাষণ দেন। হজরত আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রা.) ছিলেন তাকওয়া ও রাসুল (সা.)-এর সুন্নাতের অনুসরণের ক্ষেত্রে আদর্শ ব্যক্তিত্ব। একবার এক লোক তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখতে পান তিনি হাউমাউ করে কাঁদছেন। কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন, 'একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) মুসলমানদের বিজয় ও ধন-ঐশ্বর্যের আলোচনা প্রসঙ্গে সিরিয়ার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে বললেন, আবু উবাইদা, তখন যদি তুমি বেঁচে থাক, তাহলে তিনটি খাদেমই তোমার জন্য যথেষ্ট হবে। অনুরূপভাবে তিনটি ঘোড়াই যথেষ্ট মনে করবে। কিন্তু এখন দেখছি, আমার বাড়ি খাদেমে আর আস্তাবল ঘোড়ায় ভরে গেছে। হায়, আমি কিভাবে আল্লাহর রাসুলকে মুখ দেখাব!' মোহাম্মদ মাকছুদ উল্লাহ পেশ ইমাম ও খতিব, রাজশাহী কলেজ কেন্দ্রীয় মসজিদ