ছবি সংগৃহীত

আল্লাহ মহান কোথায় থাকেন?

মাওলানা মনযূরুল হক
লেখক
প্রকাশিত: ০৪ জুন ২০১৫, ০২:০৭
আপডেট: ০৪ জুন ২০১৫, ০২:০৭

এমন একটা প্রশ্ন আমাদের মনে অনেক সময়ই ঘুরপাক খায়। আল্লাহ আমাদের প্রভু, আমাদের একমাত্র প্রতিপালক । আমাদের সবচেয়ে আপনজন তিনি । আমরা তারই ইবাদত করি । তিনি কোথায় আছেন, কোথায় থাকেন তিনি, সে সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা রাখা তার একজন বান্দা হিসেবেই আমাদের জন্য জরুরি বৈ কি। বান্দা যার বন্দেগি করে, তার সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ জানাশোনা না থাকলে তার বন্দেগিতে সংশয় থেকে যাওয়া বিচিত্র নয়। ১. এ ব্যাপারে কোরআন কী বলে আল্লাহ কোথায় আছেন, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি নিজেই বলছেন- الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى অর্থাৎ, পরম করুণাময় আরশের উপর আছেন। (সুরা তাহা, আয়াত ৫) এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, وَهُوَ اللَّهُ فِي السَّمَاوَات অর্থাৎ আর তিনিই আল্লাহ যিনি আসমানে আছেন। (সুরা আনআম, আয়াত ৩) এ আয়াতে জানা যায়, আল্লাহ আসমানে আছেন। তার আরশ আসমানে। কোরআনে এ-ও বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়লার ‘কুরসি’, যেখানে তিনি সমাসীন আছেন, তা আসমান ও জমিনব্যাপী বিস্তৃত । আল্লাহ তায়ালা যে আসমানে আছেন, এর সমর্থনে আরো একটি আয়াত পাওয়া যায়, সুরা নাহলে আল্লাহ তায়লা ইরশাদ করেন, ‘তারা তাদের উপরের প্রতিপালককে ভয় করে ।’ (সূরা নাহল, আয়াত ৫০) ২. হাদিসের ভাষ্য হাদিসের দিকে তাকালেও দেখবো, আল্লাহ তায়ালা যে আসমানে আছেন, তার প্রমাণ পাওয়া যায় রাসুলের [সা.] অনেক বাণী ও সাহাবের উক্তি থেকেও । রাসুলকে [সআ.] আল্লাহ সপ্তম আকাশের উপরে উঠিয়ে নিয়েছিলেন মেরাজের উদ্দেশ্যে । সেখানেই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করা হয়েছিল। (বুখারী ও মুসলিম) এক হাদিসে তিনি ইরশাদ করেন, ارْحَمُوا مَنْ فيِ الارضِ يَرْحَمكٌمْ مَنْ في السَّمَاء অর্থাৎ যারা জমিনে আছে তাদের প্রতি দয়া করো, তবে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। (তিরমিযি) রাসুল [সা.] একবার এক ক্রীতদাসীকে জিজ্ঞেস করলেন, বলতো আল্লাহ কোথায়? সে বললো, আসমানে। তারপর তিনি বললেন, বলতো আমি কে? সে বলল, আপনি আল্লাহর রাসুল। রাসুল [সা.] বললেন, একে মুক্ত করে দাও, কারণ সে মুমিনা । (মুসলিম) ৩. সাহাবিদের বক্তব্য রাসুলের [সা.] সাহাবিরাও এ ব্যাপারে একই মত পোষণ করতেন । আবু বকর [রা.] বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদত করে (সে জেনে রাখুক) নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা আসমানের উপরে জীবিত আছেন, কখনোই মৃত হবেন না। (সুনানে দারেমি) ৪. ইমামদের অভিমত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারককে [রহ.] আল্লাহ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আল্লাহ আসমানে আরশের উপর আছেন, সৃষ্টি হতে আলাদা হয়ে।’ অর্থাৎ তার এই উপরে থাকা সৃষ্টির থাকার মতো নয় নয়। চার মাযহাবের ইমামগণও এ ব্যাপারে একমত যে, তিনি আরশের উপর আছেন, তিনি তাঁর কোনো সৃষ্টির সাথে তুলনীয় নন। ৪. আরো কিছু অভিমত ইবনে কাসির [রহ.] বলেন, তাফসিরকারকগণ এ ব্যপারে একমত পোষণ করেন যে, জাহমিয়ারা আল্লাহ সম্বন্ধে বলে যে, আল্লাহ সর্বত্র আছেন, আল্লাহ তাআলা তাদের এ জাতীয় কথা থেকে পবিত্র ও অনেক ঊর্ধ্বে। আর আয়াতের ব্যখ্যা হলো, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা আমাদের সাথে আছেন দেখার দ্বারা, শ্রবণের দ্বারা । এই আয়াতের পূর্বের ও শেষের অংশ এ কথারই প্রমাণ বহন করে । (তাফসিরে জালালাইন, ইবনে কাসির) হাদিসে আছে, রাসুল [সা.] বলেছেন, ‘আল্লাহ আরশের উপর আছেন । তবে তোমরা কী করো বা না করো তিনি তা জানেন।’ (আবু দাউদ) ৫. মূল কথা কী? সুস্থ বিবেকও বলে যে, আল্লাহ যদি তিনি সর্বত্রই বিরাজমান থাকেন তার সত্তাগতভাবে, তবে অবশ্যই রাসুল [সা.] তা জানতেন এবং সাহাবিদের শিক্ষা দিতেন। পৃথিবীতে অনেক অপবিত্র জায়গা আছে যেখানে তাঁর থাকার প্রশ্নই ওঠে না। আল্লাহ তায়ালার সত্তা একক ও অভিন্ন । কিন্তু সর্বত্র বলতে বহু জায়গা বুঝায় । তাকে কোনো অবস্থাতেই বহুভাগে বিভক্ত করা যায় না। সুতরাং এটাই সত্য যে, তিনি আসমানে আরশের উপর আছেন। তবে তিনি তার দেখা, শোনা ও জ্ঞানের দ্বারা সকল বিষয় সম্পর্কে পূর্ণরূপে অবহিত আছেন । মাওলানা মনযূরুল হক লেখক পরিচিতি [মাওলানা মনযূরুল হক- বর্তমানে তিনি দেশের খ্যাতনামা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘আল ফাতাহ পাবলিকেশন্সের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগে লেখক ও সম্পাদক হিসেবে নিয়োজিত আছেন। তিনি একজন হাফেজ, আলেম এবং লেখক-সাংবাদিক। পড়াশুনা করেছেন ঢাকার শীর্ষস্থানীয় কওমি মাদরাসা দারুল উলুম মাদানি নগর, কাকরাইল মাদরাসা ও জামেয়া কুরআনিয়া লালবাগে। বেশ কয়েকটি মৌলিক ও অনুবাদিত গ্রন্থ রয়েছে তার। আহলে হাদিস সমস্যার সমাধান তার লেখা আলোড়ন সৃষ্টিকারী একটি বই। এছাড়াও প্রকাশের অপেক্ষায় আছে, ফিলিস্তিনের গল্প সংঙ্কলন আশিক মিন ফিলিস্তিন, শিশুতোষ গল্প এই পৃথিবীর পাতায়, নবিয়ে রহমত, সিরাজাম মুনীরা, খোদার আজব বান্দা এরা সহ আরো বেশ কিছু গ্রন্থ।]