ছবি সংগৃহীত

আল্লাহর ঘরে হাজরে আসওয়াদ পাথরে চুমা দেয়ার সহজ উপায় (ভিডিও)

সেলিম আহমেদ
লেখক
প্রকাশিত: ২২ জুলাই ২০১৪, ০৩:৩২
আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৪, ০৩:৩২

প্রত্যেক মুসলমানের পবিত্র হজ্জ ও উমরাহ পালনের সময় মনে মনে ইরাদা থাকে তাওয়াফের সময় পবিত্র হাজরে আসওয়াদ চুমা দেয়ার। কিন্তু তাওয়াফের সময় আল্লাহর ঘরে এতো প্রচণ্ড ভীড় হয় যে, সাধারণ কোন মানুষের পক্ষে হাজরে আসওয়াদ চুমো দেয়াতো দূরে থাকুক, এর ধারে কাছেও যেতে পারেননা। অনেকেই পারেন-তারা আল্লাহর তরফ থেকে অনুগ্রহপ্রাপ্ত ও সৌভাগ্যবান বান্দা বা বান্দি। যারা গিয়েছেন নিশ্চয়ই একমত হবেন সেখানে হাজরে আসওয়াদে চুমা দেয়ার জন্যে হাজি সাহেব ও সাহেবানদের মধ্যে কেমন মল্লযুদ্ধ ও ধাক্কাধাক্কি হয়। অনেকেই সেখানে ভীড়ের চাপে বেহুশ হয়ে যান। এমন দৃষ্টান্তও রয়েছে।আমি এখানে শুধু আমার নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে সম্পূর্ণ বিনা বাঁধায় ও কোন প্রকারের ঝামেলা ছাড়াই আল্লাহ পাকের অশেষ মেহেরবানী ও কৃপায় তাওয়াফের সময় পর পর তিনদিন কিভাবে অতি সহজে প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যেও হাজরে আসওয়াদে চুমো দিতে পেরেছি- সেই অভিজ্ঞতা আল্লাহর রহমতে আপনাদের সাথে শেয়ার করছি এই জন্যে যে, এতে যদি মুসলমান ভাই বোনদের সামান্য উপকার হয় এবং সহজেই সেই দুর্লভ পাথরে চুমো দেয়ার সৌভাগ্য হয়ে যায়। আমি এখানে মহান আল্লাহ পাক, যার হাতে আমার জান কবজ ও হায়াত মৌউত ও উন্নতি অবনতি সব কিছুর মালিক সেই রাব্বুল আলামীনকে খালিক আর মালিক জেনেই ইমানের সাথে ঠিক যে ভাবে আমি চুমো দিতে পেরেছিলাম, সেটাই বলছি। এখানে বিন্দু মাত্র বাড়িয়ে কোন কথা বলছিনা- এটা হলফ করেই বলছি। আমি হারাম শরীফে ঢুকে দু রাকায়াত নামায প্রথমে আদায় করে নেই। নামাজের পড়ে আমি আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করে বড় তৃপ্তির ও আনন্দ চিত্তে এবং একই সাথে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের জন্য পেছনের জিন্দেগীর গোনাহখাতা স্মরণ করে অনুতপ্ত হতে থাকি। অটোমেটিক আল্লাহর দরবারে সেজদায় পড়ে কাঁধতে থাকি। মসজিদে হারাম শরীফের মধ্যে এবং আল্লাহর ঘরের তাওয়াফের মধ্যে এতো প্রচণ্ড ভীড় দেখে মনের মধ্যে ভয় ও শঙ্কা এসে যায় আমার মতো লোকের পক্ষে হাজরে আসওয়াদ পাথর চুমা দেয়া সম্ভব হবেনা। সাথে সাথে আল্লাহর দরবারে মোনাজাতের জন্য হাত উঠাই আর শুরুতে দুরুদ শরীফ ইচ্ছে মতো যত খুশী পড়ে নেই। মোনাজাতে কান্না জড়িত কণ্ঠে নিজের গোনাহ মাফের সাথে এটাও বলি হে আল্লাহ তুমি আমাকে এতো এহসান, এতো মেহেরবানী করেছ তোমার ঘর পর্যন্ত আমাকে নিয়ে এসেছ, আল্লাহ বাকি কাজটুকু সহি ভাবে এবং সহজে সম্পন্ন করে দাও।দোয়ার শেষে এসে আমি বলি হে আল্লাহ আমার কলিজার মধ্যে একটা আফসোস আর রক্তক্ষরণ হতে থাকবে, তোমার ঘরে তোমার মেহমান করে আমাকে নিয়ে এসেছো- অথচ তোমার এই গোলামকে তোমার পবিত্র হাজরে আসওয়াদ পাথর চুমা দেয়া থেকে বঞ্চিত করো- বড় আফসোস রয়ে যাবে আল্লাহ। হে আল্লাহ আমি এখনো জানিনা, কেমন করে ভিসা টিকেট সহ আমাকে তোমার ঘরে তুমি নিয়ে এলে। আল্লাহ আমাকে যখন এতো মেহেরবানী করেছ, তাহলে দয়া করে ভিসা টিকেটের মতোই তেমনিভাবে তোমার ঘর তাওয়াফের সময় রুকনে ইয়ামেনিতে দোয়া ও নামায, মাক্কামে ইবরাহীমের পেছনে নামায, তোমার ঘরের দরজা ধরে দোয়া আর সেই সাথে হাজরে আসওয়াদে চুমা দেয়ার ব্যবস্থা স্বয়ং তুমি রাব্বুল আলামীন করে দিও। মাওলা আমি আর কিছুই জানিনা। খোদার পবিত্র নামের ক্বসম, কে যেন আমার দিলে ও কানের কাছে এতো মন্ত্রমুগ্ধ ও মধুর আওয়াজ শুনালো- ঠিক এভাবে সৈয়দ- আর কান্না নয়, দিলের মধ্যে যা আছে আল্লাহর প্রশংসা যা জানা আছে ঢেলে দেও। বিশ্বাস করুন আমি একমুহুর্ত দেরী না করে সেজদায় পড়ে সুরা ক্কাহফের শেষ দশ আয়াত ইচ্ছে মতো পড়তে থাকি অগণিত পরিমাণে, সেই সাথে আল্লাহর যত নাম আমার মনে আসতে থাকে আমি সেই নামে ডাকতে থাকি।আমি তখনই কলিজার সবটুকু দরদ দিয়ে পড়তে থাকি, আফা হাসিবাল লাজিনা কাফারু থেকে সুরু করে ওয়ালা ইউসরিক বি ইবাদাতি রাব্বিহি আহাদা পর্যন্ত পড়লাম অগণিতভাবে। সেজদা থেকে উঠেই দেখি সিলেটের শাহজালাল দরগাহ মসজিদ ও মাদ্রাসার প্রয়াত খতিব হযরত মাওলানা আকবর আলী সাহেব সামনে থাকা জমজমের পানি হাতে।নিজেকে বিশ্বাস করতে পারিনি। আমার এখনো সেই দৃশ্য চোখে ভাসে, আমি তখন পাগলের মতো হয়ে যাই-এও কি সম্ভব। কাঁপা হাতে জমজমের পানি হাতে নিতেই আকবর আলী সাহেব হাওয়া, আর খুঁজে পাইনি।আমি যখন তাওয়াফের জন্য আল্লাহর নাম নিয়ে নীচে নামতে থাকি, তখন আল্লাহর নাম জিকির আর আল্লাহর সাহায্য বার বার চাইতে থাকি। কি এক বিদ্যুতের মতো সমগ্র দেহ ও মনে প্রাণচঞ্চল্য খেলে চলেছে, কিছু বুঝার আগেই প্রথম তাওয়াফেই আমি রুকনে ইয়ামেনীর কাছে যেতেই একেবারে ভিতরে নিজেকে আবিষ্কার করি।রুকনে ইয়ামেনিতে দোয়া আর নামায শেষ করে একেবারে আল্লাহর ঘরের দেয়াল ঘেঁষে ধরে পড়তে থাকি অন্যান্য দোয়ার সাথে সাথে আল্লাহু লাতিফু বি ঈবাদিহি ইয়ারজুক্কু মান ইশায়ূ ওয়াহুয়াল ক্কায়ুউইল আজিজু- এইভাবে যখন হাজরে আসওয়াদের কাছে যাই তখন প্রচন্ড ভীড় আর মারামারি দেখে ভয় পেয়ে যাই। সাহস হয়নি- সামনের এগুনোর। তবে ঐ সময় পাথর বরাবর হাত উঁচু করে আল্লাহ লাতিফু থেকে আজিজু পর্যন্ত পড়ি- পড়ার সাথে সাথে পড়তে থাকি সুরা ক্কাহফের আফাহাসিবা থেকে আহাদা পর্যন্ত। দ্বিতীয় তাওয়াফ দিয়ে পাথরের কাছে আসার একটু আগে থেকে দেখি এমন মারামারি আর ধাক্কাধাক্কি আর বাচাও বাচাও চিৎকার, তখন দৃশ্য দেখার জন্য পাথরের সামনে বরাবর থেকে অনেক পেছনে দাঁড়িয়ে থাকি আর একই আয়াত পড়তে থাকি। ঠিক তখনি কে যেন এসে হাত উঁচু করে ঠান দিলেন দেখি আমার হাত সকলের মাথার উপর দিয়ে একেবারে পাথরের সাথে লাগানো যে সাদা ঘের দেয়া অংশ সেখানে। কিছু বুঝার আগেই এতো মারামারি শুরু হয়ে গেলো- দুই দিক থেকে আর ঠিক পাথর বরাবর সরু চিকন রাস্তা হয়ে গেলো- যেখান দিয়ে সোজা আমি অনায়াসেই ঢুকেই আল্লাহু আকবর বলে চুমু দিলাম। বিশ্বাস করুন আল্লাহর নামের শপথ নিয়ে বলছি মিথ্যে বা বানানো গল্প বলছিনা- রোজ কেয়ামতে এই বক্তব্য সাক্ষী রইলো- হাজরে আসওয়াদে আল্লাহু আকবর বলে মনের স্বাদে সব টুকু দরদ ঢেলে দিয়ে চুমো দিলাম। এতো ধাক্কাধাক্কির মাঝেও পেছন থেকে কেউ আমাকে টান দিলোনা, কোন শব্দও উচ্চারণ করলোনা। চুমো দেয়ার পর মাথা বের করে বের হওয়ার জন্য যখন ঘাড় পেছনে ফিরালাম আল্লাহর হাজার শুকরিয়া ও মেহেরবানী যে অন্যান্যদের মতো বের হওয়ার সময় বিন্দু মাত্র কষ্ট বা তকলিফ বোধ করলামনা। কেমন করে বড় আরাম আয়াসে সেখান থেকে বের হলাম- আজও সেটাও স্বপ্নের মতোই মনে হচ্ছে।সেখান থেকে বের হয়ে এতো আনন্দ অনুভূত হলো, যেন সমগ্র পৃথিবী কেউ আমাকে দান করলেও এতো আনন্দ হতো কিনা জানিনা। আমি তখন আল্লাহর ঘরের ঠিক দরজায় ধরে শুকরিয়া আদায় করে মোনাজাত করলাম।তাওয়াফ চলতে থাকলো-রুকনে ইয়ামেনির সামনে গিয়ে অটোম্যাটিক জবান থেকে বেরিয়ে এলো- লা ইকাল্লুফুল্লাহু নাফসান থেকে শুরু করেফানসুরনা আলাল ক্কাউমিল কাফেরুন পর্যন্ত পড়ি। ঐ দিন সারাটা দিন যে আমার কিভাবে কেটেছে আমি কাউকে বুঝাতে পারবোনা। এর কোন ব্যাখ্যাও আমার জানা নেই। আমি প্রতিদিন এতো রিপোর্ট আর কলাম লেখি-অথচ এই বিষয়ের বর্ণনা আমি ঠিক আমার মনের মতো করে লিখতে বা বলতে পারতেছিনা- মনে হচ্ছে আমি যেভাবে চুমো দিয়েছিলাম সেরকম অবস্থা বর্ণনা করতে পারছিনা। এ কেবল আমার মন প্রাণ দিল আর চোখের মধ্যে অবিকল সেই সময়ের অবস্থা পরিষ্কার ভেসে চলছে অথচ আমি এর বর্ণনা দিতে অক্ষম। প্রিয় পাঠক- আমি সেদিন দিবাগত রাতে শেষ প্রহরে আবার তাওয়াফে নামি।আল্লাহর ঘরের প্রতিটি দেয়াল প্রতিটি স্থান বিশ্বাস করুন এতো ভিড়ের মধ্যেও আমি মনের স্বাদ মিঠিয়ে স্পর্শ করে মোনাজাত করার দুর্লভ সুযোগ পেয়েছি-যা ভাষায় বর্ণনা করে বুঝাতে পারবোনা। একেবারে ঘরের সামনে দেয়াল ঘেঁষে শান্তি পূর্ণভাবে নামায পড়েছি, দোয়া করেছি, আর কেধেছি। আবারো সেদিন ফজরের নামাযের পরেই যখন ভিড় সবচাইতে বেশী হয়, সেই সময় খোদার অশেষ মেহেরবানীতে একই কোরআনের আয়াত আর দোয়া পড়ে পড়ে কেমন করে যে বিনা বাধায় একেবারে পাথরের মধ্যে গিয়ে পড়লাম, ইচ্ছে মতো মনের তৃপ্তি মিঠিয়ে চুমো দিলাম আল্লাহু আকবর বলে তিনবার প্রতিবারই আল্লাহু আকবর বলে, তারপর আবারো বেরিয়ে আসলাম কেমন করে একেবারে নির্ঝঞ্জাট ভাবে- আজো তা বিস্ময় মনে হয় অথচ আমার জীবনে বাস্তবে তাই ঘটেছে, হাজারো লোক তখন সেই দৃশ্য দেখেছেন অনেকে বিস্ময়ে।তৃতীয় দিনের চুমোতে পাথরের হাত দিয়ে স্পর্শ করে সারা মুখমণ্ডল, মাথা, হাত কনুই পর্যন্ত মাসেহ করলাম- ভাবলাম আল্লাহ যখন মেহেরবানী করেছেন তাহলে বেহেশতে এই পাথরের স্পর্শ চুমোর সাথে সাথে মুখে মাথায় মেখে নেই। প্রিয় পাঠক- এই হলো আমার জীবনে হাজরে আসওয়াদ সহজে চুমো দেয়ার আল্লাহ পাকের অশেষ মেহেরবানী ও নেয়ামতের গোপন মিরাকল আপনাদের সাথে সম্পূর্ণ সওয়াবের উদ্দেশ্যে পেশ করলাম। যে কেউ যদি আল্লাহর নেয়ামত, এহসান আর মেহেরবানীতে এইভাবে আমল করে বিনা বাঁধায় অতি সহজে হাজরে আসওয়াদ চুমো দিতে সফল হন- তবে দয়া করে অন্যান্য মুসলিম ভাই বোন বিশেষ করে মা বোনদের-যারা সেখানে অনেক কষ্টের মধ্যে চেষ্টা করেও বিফল হন সেজন্যে উনাদের শেয়ার করবেন আর আমার জন্য, আমার মরহুম মা বাবার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করবেন- এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আল্লাহ আপনার আমার সকলের সহায় হউন আমিন। [video:https://www.youtube.com/watch?v=RPNzlqjqGJY] সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ-লন্ডন থেকে [email protected] Ramadanul Mubarok 2014