
ছবি সংগৃহীত
আমি খুব প্রেমে পড়ি : মুসাফির
আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৬, ০৮:৫১
ছবি : শামছুল হক রিপন
(প্রিয়.কম) অভিনেতা মুসাফির সৈয়দ। কবিতা লেখার প্রতি আগ্রহ ছিল বেশি। ছিল বললে ভুল হবে এখনও আছে। তখন নিজের মধ্যে আবিষ্কার করেন কবি হয়ে যাবেন। আর কবি মানেই যেন বইয়ের লেখার মধ্যে ফুটে উঠা কোন এক মানুষ। তবে অভিনেতা, কবি, গীতিকার মারজুক রাসেলের সঙ্গে যখন পরিচয় হয় তার তখন যেন কবিদের নিয়ে চিন্তা ভাবনা বদলে যায় তার। কবি মানে জীবন্ত সেটি বুঝতে পারেন। এটা ছিল অভিনয়ে আসার আগের কথা। তবে অভিনয়ের কথা বললে ‘ফার্স্ট ডেট’ নাটক তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। তবে টো টো করে ঘুরে বেড়ানো যার কাজ তিনি কি কোন কাজে স্থির হতে পারেন। যখন যে কাজে যান তখন সে কাজেই মনে করেন এটিই তার জন্য ভালো। আড্ডা হৈ চৈ আর হাসি ঠাট্টায় বেশিরভাগ সময় কাটতো তার। শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট তখন কবি সাহিত্যিক আর পরিচালকদের আড্ডাখানা। তবে এখন নিজেকে অনেকটা গুছিয়ে নিয়েছেন। কারণ নিজেকে এখন অলরাউন্ডার হিসেবে গড়ে তুলতে চান তিনি। তাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণেই রাখতে হয়। সম্প্রতি প্রিয়.কম-এর নিয়মিত আয়োজন প্রিয় কথা’র জন্য কথা বলেছেন তিনি। যেখানে তার অভিনয়, ব্যস্ততা এবং ব্যক্তিগত বিষয় সবকিছুই উঠে এসেছে।
প্রিয়.কম: অভিনয়ের শুরুটা...
মুসাফির: আমি খুব ভবঘুরে ধরণের ছেলে ছিলাম। এর জন্য কত যে পরিবারের কাছে বকা খেতে হয়েছে। প্রতিদিন কোন না কোন গল্প বলে মায়ের কাছ টাকা নিয়ে বের হতাম। কিন্তু দিন শেষে কোন কাজই হত না। তবে হাল ছাড়ি নাই। কারণ কবি যে হতে হবে। কবিরা এমনই হয়। কিন্তু একদিন আমার বন্ধু জীবন দা আমাকে বলল এক জায়গায় কালকে যাবো, তুইও যাবি আমার সঙ্গে। আমি বললাম ঠিক আছে। যেমন কথা তেমন কাজ। চলে গেলাম তার সঙ্গে। গিয়ে দেখি সেখানে শুটিং হচ্ছে। আমি তো সেই শুটিং দেখেই অবাক। যাদের পর্দায় দেখেছি তাদেরকে সামনে দেখে একটু অন্যরকম ভাব লাগছে। শুটিংয়ের সবাইকে দেখে একটা পরিবারের মতো মনে হল। তখন মনে হল এটাই আমার জন্য ঠিক। যাই হোক পরের দিন আমাকে লুঙ্গি পরিয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁরা করায় দিল। আমি তো বললাম আমি তো অভিনয় পারি না। তারপরও কাজটি করতে হল। সেটা ছিল প্রথম কাজ। অভিনয়ের শুরু।
প্রিয়.কম: ‘ফার্স্ট ডেট’-এ অভিনয়ের গল্পটা...
মুসাফির: একবার তো চিন্তা করেছিলাম অভিনয় আমার দ্বারা হবে না। তাই অভিনয় থেকে একরকম বিদায় নিয়েছিলাম মনে মনে। কারণ যেখানে নাকি বাবাকে ভাই বলতে, বন্ধুকে বাবা বলতে হয় সেই কাজ আমাকে দিয়ে হবে না। তবে যাই হোক পরে অবশ্য সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করি ফারুকী বসের সঙ্গে। তখন হটাত একদিন বস আমাকে ফোন করে বলল তুমি ফার্স্ট ডেট-এ অভিনয় করবা। তখনকার সময় এমন নতুন কাউকে নিয়ে কাজ করাটা খুবই সাহসের ব্যাপার ছিল।আর এই নাটকটি আমার সবকিছুই পাল্টে দিয়েছে। রাতারাতি মনে হল আমি তারকা হয়ে গেছি। কারণ নাটকটি যখন প্রচার হল তার পরের দিন বাস কাউন্টারে গিয়ে টিকিট কাটা থেকে শুরু করে বাসে এবং রাস্তায় সব জায়গায় মানুষ দেখি আমাকে ঘুরঘুর করে দেখছে। মনে হচ্ছে আমাকে চারপাশ থেকে সিসি ক্যামেরা ঢেকে রেখেছে। এই ভালো লাগাটা বুঝাবার মত নয়। প্রথমে একটু অবাক হয়ে ছিলাম কারণ আমি তো সবসময় চঞ্চল প্রকৃতির মানুষ, কোথায় আমি দুষ্টামি করব সেখানে দেখি মানুষ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এছাড়াও আমার অভিনীত উল্লেখযোগ্য কাজগুলো হলো- টেলিফিল্ম ‘এমন দেশটি কোথায় খুঁজে পাবে না কো তুমি’, ‘উচ্চতর শারীরিক বিজ্ঞান’, ‘মোটরযান’, ‘ধারাবাহিক মুকিম ব্রাদার্স’। এছাড়া আমার গল্পে গোলাম কিবরিয়া ফারুকীর পরিচালনায় নাটক ‘বিক্রির জন্য নহে’ তুমুল দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে।
প্রিয়.কম: অনেকদিন ধরেই অভিনয়ে অনিয়মিত আপনি, কেন?
মুসাফির: আসলে আমি এখন পরিচালনা নিয়ে ব্যস্ত। তাই অভিনয় থেকে একটু দূরে। তবে আবারো অভিনয়ে নিয়মিত হবে। তবে আমার প্রতিনিয়ত অভিনয় করতে পছন্দ না।আমার কাছে মনে হয় আমি যেন আরেকজনের কাছে বন্দী হয়ে গেলাম। অভিনয় আমি উপভোগ করতে চাই। তবে এখন মনমতো গল্প পাই না। যেখানে আমি নিজেকে ভাঙতে পারবো।
প্রিয়.কম: শোনা যাচ্ছে আপনি চলচ্চিত্র বানাতে যাচ্ছেন, সেটার কি খবর?
মুসাফির: চলচ্চিত্র করা তো সহজ নয়। আমার কাছে এক সময় অনেক কঠিন মনে হত। কিন্ত যখন ফারুকী বসের সঙ্গে কাজ করা শুরু করলাম তখন তিনি একটা কথা বলেছিলেন যদি তুমি কোন কাজ মেধা, শ্রম, মনোযোগ দিয়ে করো তাহলে খুব সহজেই হয়ে যাবে। তবে একটা চলচ্চিত্র বানাতে চাচ্ছি। গল্প লেখা শেষ। আমি আসলে এমন কিছু বানাতে চাই যা বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের নাম তুলে ধরবে। এখন দেখা যাক কি হয়। তবে আমার প্রোডাকশন হাউজ থেকে বিজ্ঞাপন, নাটক বানাচ্ছি।
প্রিয়.কম: অভিনয়ে তো আছেনই, এখন পরিচালনাও করছেন। কোনটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
মুসাফির: আসলে দুইটা দুইরকম ভালো লাগা। অভিনয় তো অবশ্যই ভালো লাগে। আর পরিচালনা হচ্ছে একেকটা সন্তানের মত। যখন আমার পরিচালনায় কোন কাজ হয়। তখন খুবই ভালো লাগে। তাই দুই কাজই আমি উপভোগ করি।
প্রিয়.কম: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
মুসাফির: একজন অলরাউন্ডার হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে চাই। আমি হার মানতে রাজি না। যখন যেটাই করি না কেন এর শেষ পর্যন্ত আমি লেগে থাকি। এখন চলচ্চিত্র নিয়ে স্বপ্ন দেখছি। আন্তর্জাতিক মানের চলচ্চিত্র বানাতে চাই। বিশ্বের পাঁচটি ফিল্ম ফেস্টিভেলে আমার ছবি দেখতে চাই।
প্রিয়.কম: অভিনয় জীবন বাদে ব্যক্তি মুসাফির কেমন?
মুসাফির: আমি অনেক সরল মনের মানুষ। তবে আমার অনেক রাগ। বলতে গেলে আমার ঘাড়ের একটা রগ ট্যারা। এবং কেন যেন আমার প্রচণ্ড অভিমান।
প্রিয়.কম: ছোটবেলায় কি হওয়ার ইচ্ছা ছিল?
মুসাফির: একেক সময় একেক রকম হতে চাইতাম। কখনও পাইলট আবার কখনও আর্মি আবার কখনও কবি। কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল না।
প্রিয়.কম: প্রেম-বিয়ে...
মুসাফির: আমি প্রেমিক প্রকৃতির মানুষ। খুব প্রেমে পড়ি। সুন্দর জায়গা থেকে শুরু করে ভালো খাবার সব কিছুর প্রতিই কেন জানি প্রেমে পরে যাই। আর মেয়েদের কথা বললে সিনিয়রদের প্রেমে বেশি পড়ি। আর বিয়ে নিয়ে খুব একটা চিন্তা নাই। কারণ এটার বিরোধী আমি। তবে এখন কি করব এই বিষয়টা নিয়ে বুঝতেছি না।
প্রিয়.কম: বর্তমান ব্যস্ততা?
মুসাফির: একটা সিরিয়ালে অভিনয় করছি। সঙ্গে আমার পরিচালনার কিছু কাজ আছে। এগুলো নিয়েই একটু ব্যস্ত।
- ট্যাগ:
- তারকার জীবন
- বিনোদন
- মুসাফির সৈয়দ