ছবি সংগৃহীত

অন্য যে কোন পেশার চেয়ে ফ্যাশনে কাজ করা অনেক সম্মানের: শাহীন আহম্মেদ

Mahmud Ullah
লেখক
প্রকাশিত: ১৪ জানুয়ারি ২০১৬, ১৪:৫৯
আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৬, ১৪:৫৯

ছবি: শামসুল হক রিপন

(প্রিয়.কম) শাহীন আহম্মেদ। অঞ্জনস ফ্যাশন হাউজের কর্ণধার। ১৯৯৪ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি অঞ্জনস ফ্যাশন হাউজ সিদ্ধেশ্বরী থেকে যাত্রা শুরু করে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে সারা দেশে অঞ্জনসের ১৭টি শো-রুম আছে। কথা হয় শাহীন আহম্মেদের সঙ্গে। অঞ্জনসের শুরুর গল্প শোনান তিনি। পাশাপাশি দেশের ফ্যাশন হাউজগুলোর বর্তমান অবস্থানও তুলে ধরেন। প্রিয়.কমের ফ্যাশন বিভাগের পাঠকদের জন্য তাই আজকের আয়োজন, অঞ্জনসের কর্ণধার শাহীন আহম্মেদ। তাহলে আসুন জেনে নেই দেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান হালচাল। 

প্রিয়.কম: অঞ্জনসের শুরুটা কেমন ছিল?

শাহীন আহম্মেদ: আমরা ১৯৯৪ সনে ব্যবসায়ীকভাবে না শখের বসেই শুরু করি। রোজার মাসে প্রথম আমরা একটা প্রদর্শনীর মতো করি। সেখানে রোজার মাসে ক্রেতাদের কাছ থেকে ভালই সাড়া পাই। এরপর আমরা আর দোকানটা বন্ধ করলাম না। এভাবে চার বছর কেটে গেল। ১৯৯৮ সনে আমরা ভাবলাম এটাকে আর একটু বড় করি। এরপর ধানমন্ডিতে একটি নতুন শোরুম নিয়ে শুরু করি। এরমাঝে বিভিন্ন পত্র পত্রিকা আমাদের নিয়ে লেখারেখি করার কারণে সবার মাঝে একটা জনপ্রিয়তা তৈরি হয়। ফলে ধানমন্ডিতে শুরু করার পর আরো ভালভাবে রেসপন্স তৈরি হয়। ওখানে অঞ্জনস, ওজি ও কে ক্রাফট মিলে আলাদা আলাদা শোরুম নেই। এর বাইরেও আমরা আর একটা কাজ করতাম তা হলো বিভিন্ন ফ্যাশন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতাম। বিভিন্ন প্রত্রিকা, ম্যাগাজিন এই ফ্যাশন প্রতিযোগিতার আয়োজন করতো। এর ফলে আমরা সেখানে চেষ্টা করতাম যেনো ভাল করতে পারি। এভাবে আমরা নিজেরাও আস্তে আস্তে ভাল করতে থাকি। 

প্রিয়.কম: তাহলেতো খুব বেশি স্ট্রাগলের মধ্য দিয়ে যেতে হয়নি।

শাহীন আহম্মেদ: স্ট্রাগলটা ছিল অন্য জায়গায়। তখনও বিদেশি পোশাক মার্কেটে ছিল। সেখান থেকে নিজেকে পরিচয় করানো একটু কঠিনও ছিল। তবে একটা সুবিধাও ছিল যে সবার পাঞ্জাবী প্রায় এক। তার মাঝে আমাদের ডিজাইন করা পাঞ্জাবী ভাল চলছিলো। এর পাশাপশি আরো সমস্যায় ছিল তখনও রাজনৈতিক হরতাল ও বিভিন্ন সমস্যা ছিল। বড় বড় কারখানা আমাদের পোশাক বানিয়ে দিতে চাইতো না, এছাড়া তখন বিভিন্ন জায়গায় কোথায় কোথায় কাজ হতো তা খুঁজে বরে করে করে কাজ করাতে হতো। এখনকার নতুন যারা কাজ করতে আসছে, তারা এখন জানে যে কোথায় গেলে কি পাওয়া যায়। তখন আমাদেরকে সব খুঁজে খুঁজে করতে হয়েছিলো। মিরপুর এক জায়গায় কারচুপির কাজ করাতাম, আড়ং এর কাজ করতো, সে আমাদের কাজ করতেই চাইলো না, এক বছর পরে অবশ্য করেছে। ব্যাংকগুলো লোন দিতে চাইতো না। এই ধরনের সমস্যার মুখে আমাদের পরতে হয়েছিলো। 

তখন লিডিং পর্যায়ে অনেক হাউজই ছিল যেমন আড়ং, কুমুদিনী, কারুপণ্য, প্রবর্তনা। কিন্তু আমরা যখন আসি তখন ফ্যাশনটা সাধারণ মানুষের আওতায় চলে আসলো। রঙ ছিল, নিপূণ ছিল। তখন কেউ কল্পনা করতে পারতো না যে, এমন ছোট করেও শুরু করা যায়। তখন আমরা এই কয়েকটা হাউজই এরকম ছোটভাবে শুরু করি। 

প্রিয়.কম: এই সেক্টরে কাজ নিয়ে ভাল লাগা?

শাহীন আহম্মেদ: আসলে এটা এমন একটি সেক্টর যে এখানে ভাল না লাগলে কেউ খুব ভাল করতে পারবে না। আমাদের এমনও হয়েছে যে সোবহানবাগে লাইন ধরে প্রোডাক্ট বিক্রি করেছি। আরো একটা ভাল লাগা আছে আমাদের, দেখা গেলো প্রোডাক্ট একটা কিন্তু কোস্টামার দু’জন। তখন টস করেও প্রোডাক্ট বিক্রি করেছি। বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ফোরাম এর জরিপে সেরা ফ্যাশন হাউজের আড়ং এর পরই আমরা আছি। তৃতীয় সারিতে আছে ক্যাটস আই। আর আড়ংকে আমরা ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি, তাই তার পাশে আমাদের নাম চলে আসছে দেখে ভাল লেগেছে।

প্রিয়.কম: অঞ্জনসের বিশেষত্ব কি? 

শাহীন আহম্মেদ: অঞ্জনস ডিজাইন নিয়ে বেশি কাজ করে, আমরা কোয়ালিটির দিকেও বেশি নজর দেই। এগুলোই আমাদের এগিয়ে থাকার প্রধান কারণ। 

প্রিয়.কম: দেশে বর্তমান ফ্যাশন হাউজগুলোর অবস্থান কিরুপ বলে আপনি মনে করেন?

শাহীন আহম্মেদ: গামের্ন্টে আমরা বিশ্বে একটা বড় জায়গায় আছি, কিন্তু ফ্যাশনে বাংলাদেশ সেরকম জায়গায় বিশ্বে নেই। সেই জায়গা থেকে বলতে পারি বাংলাদেশ ফ্যাশন অনেক ভাল করছে।বাংলাদেশের শেষ বিশ বছরে ফ্যাশনের অবস্থান অনেক ভাল হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে আমরা অনেক ভাল অবস্থানে আসছি। মানুষের বাহ্যিক অবস্থান হচ্ছে ফ্যাশন। এই জন্য পোশাক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আগে ফ্যাশনের খুব ভাল ইন্সটিটিউট ছিলো না। এখন ইন্সটিটিউট থেকে অনেক ছেলে মেয়েরা বের হচ্ছে। অনেক ডিজাইনার বের হচ্ছে। ২০ বছরের আগের চেয়ে এখন মানুষ ফ্যাশন বিষয়ে অনেক বেশি সচেতন। 

আরেকটা বিষয় এখন যেসব ইন্সটিটিউট আছে, তা সব প্রাইভেট কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে যদি ফ্যাশন বিষয়ক বিভাগ চালু করে তাহলে আমরা ইন্টারন্যাশনাল লেভেলের অনেক ভাল ডিজাইনার পাবো। এখন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলোতে যাদের অনেক টাকা আছে তারাই সেখানে ভর্তি হচ্ছে। কিন্তু সারা দেশ থেকে যদি মেধাবীরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালযে ফ্যাশন ডিজাইন বিষয়ে পড়তে পারে তাহলে তারা নিজেরাই ভেবে বের করবে যে কিভাবে গ্লোবাল মার্কেট ধরা যাবে। এভাবে আন্তর্জাতিক ভাল উদ্যোক্তাও খুঁজে পাবো। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়াররা যদি বিদেশে গিয়ে কাজ করতে পারে তাহলে ডিজাইনাররা কেন বিদেশে কাজ করতে পারবে না। যেমন আমাদের যে বিজনেসটা, আমাদের লোকাল মার্কেটেই দেশিও পোশাকের চাহিদা আছে। তাই আন্তর্জাতিক মার্কেটে গিয়ে পোশাক বিক্রির কোন ইন্টারেস্ট নাই আমাদের। যদি দেশিও জায়গা ফিলআপ হয়ে যায় তখন আন্তর্জাতিক মার্কেট ধরার চেষ্টা করবো। এখানো এখানেই অনেক সুযোগ আছে। ঠিক তেমনই ডিজাইনারদের কথাও একই। আগে কোন ফ্যাশন পাতা ছিল না কোন পত্রিকার। আগে ভোরের কাগজে যেতাম তখন সঞ্জীব চৌধুরী ফিচারের দায়িত্বে ছিলেন। আমরা বিনোদন পাতায় আমাদের নিউজ ছাপাতে যেতাম। কিন্তু এখন কিন্তু নতুন যারা আসছে তারা এই সুবিধাটা পাচ্ছে। আর তাঁতীদেরকে আধুনিক প্রযুক্তি দিতে পারলে, তাদেরকে ট্রেইনিং দিতে পারলে আরো ভাল করা সম্ভব। 

প্রিয়.কম: নতুন যারা এই সেক্টরে কাজ করতে আসতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।

শাহীন আহম্মেদ: ইউরোপিয়ানরা যে কোন ফ্যাশন তিন বছর আগে থেকে প্রোডাকশনে যায়। আমাদের দেশে ছয় মাস এক বছর আগে থেকে ঈদ বা ওকেশনের জন্য প্রোডাকশন করি। এখন আপনি কোন পোশাক তৈরিকারক প্রতিষ্ঠানে গেলে শুনতে পাবেন যে ২০১৭ সালের প্রোডাকশন হচ্ছে। তাই বলবো একজন ফ্যাশন ডিজাইনার বা উদ্যোক্তাকে অনেক দূরদর্শী হতে হবে। যদি কেউ এই সেক্টরে কাজ করতে চায় তাহলে আমি বলবো ফ্যাশন ডিজাইনে পরে নেয়া ভাল। কমপক্ষে ডিপ্লোমা করে নেয়া ভাল। পৃথিবীর যেসব দেশেই বড় ফ্যাশন ডিজাইনার আছে তারা অনেক বেশি সামাজিক সম্মান পায়। যেমন দেখেন অনেক পেশাই দেশে আছে তাদের চেয়ে আমরা এই ব্যাবসায় যারা আছি তারা মিডিয়ায় বেশি ফোকাস। অনেকটা আর্টিস্টদের মতো। অথবা শিক্ষকদের মতো। তারা সামাজিকভাবেই অনেক বেশি সম্মানিত। 

প্রিয়.কম: আপনাকে ধন্যবাদ। 

শাহীন আহম্মেদ: আপনাকে ও প্রিয়.কমকেও ধন্যবাদ।