বাঙালি জেহাদি নিয়োগে আল কায়েদার বাংলায় প্রচার সামগ্রী
আল কায়েদা ভারতের বাংলাভাষী অঞ্চলে সংগঠন বিস্তÍারের পরিকল্পনা করেছে জানিয়ে ভারতকে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে ইসরাইল ও আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থাগুলি। ভারতকে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে জানানো হয়েছে, ভারতে আল কায়েদার সংগঠন বিস্তারে মূল টার্গেট দুই এলাকায়। এক, কাশ্মীর ও দ্বিতীয়ত পশ্চিমবঙ্গ সমেত পূর্ব ভারতের বাংলাভাষী অঞ্চল। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে এসব কথা জানা গেছে।গোয়েন্দাদের ধারণা, বাংলাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আল কায়েদা দুই বাংলাতেই জিহাদি নিয়োগ শুরু করেছে। আর সেই নিয়োগে সাহায্য করছে জামাতুল মুজাহিদিনের মতো সংগঠন। গত কয়েকমাসে ভারতে ধৃত জেএমবি জঙ্গীদের জেরা করে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। গোয়েন্দা সূত্রে বলা হয়েছে, সংগঠনের জন্য ইতোমধ্যেই আল কায়েদা জেহাদির খোঁজে আদর্শ আচরণবিধি প্রকাশ করেছে। বাংলা ভাষায় ওই আচরণবিধি একটি অডিও বার্তার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে আল কায়েদার অন্যতম শীর্ষনেতা আনওয়ার আল আওলাকির বিভিন্ন ভাষণ সঙ্কলিত করে বাংলায় ‘দ্য বুক অব জিহাদ’ নামে একটি বই প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়াও আওলাকির ভাষণের বাংলা অনুবাদ করে সিডিও তৈরি করেছে এই জঙ্গি সংগঠন। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ইসলামিক স্টেট (আইএস) জমি হারানো শুরুর পরই পশ্চিম এশিয়ার একাধিক দেশের বিভিন্ন প্রকাশ্য সংগঠনের মাধ্যমে আল কায়েদার তহবিলে বিপুল অঙ্কের টাকা ঢালা হচ্ছে। সেইসঙ্গে অনলাইনে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার চালানো হচ্ছে। গোয়েন্দাদের মতে, প্রায় দু’ডজন ওয়েবসাইটকে চিহ্নিত করা হয়েছে যেখানে প্রকাশ্যে আল কায়েদার হয়ে প্রচার চালানো হচ্ছে। তার মধ্যে এক ডজনের বেশি ওয়েবসাইট বাংলায়। বাংলা ওই ওয়েবসাইটগুলি আল কায়েদার মতাদর্শ থেকে শুরু করে সংগঠনের শীর্ষ জিহাদি নেতাদের আরবি বক্তব্যকে বাংলায় অনুবাদ করে প্রচার করছে। সেইসঙ্গে ওই ওয়েবসাইটে দেয়া হচ্ছে অনলাইন প্রশিক্ষণ, কীভাবে ফোন এবং ইন্টারনেটের উপর নজরদারি এড়ানো সম্ভব বা কীভাবে নিজের মোবাইলে কোনো নির্দিষ্ট ফাইল গোপনে রাখা সম্ভব হবে।গোয়েন্দা সূত্রে আরো জানা গেছে, ওয়েবসাইটগুলির বেশিরভাগই পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। আইএস বা আল কায়েদার মতো সংগঠনে এতদিন বাঙালিদের আলাদা কোনো গুরুত্ব দেয়া হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের বিভিন্ন রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল, আইএস শিবিরেও, মূল বাহিনীতে ভারতীয় এবং বাঙালিদের যোদ্ধা হিসাবে কোনো সম্মান ছিল না। মূলত পশ্চিম এশিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং আফ্রিকার মুজাহিদরাই বেশি গুরুত্ব পেয়েছে ওই দুই সংগঠনে। কিন্তু আল কায়েদার সাম্প্রতিক কার্যকলাপ থেকে গোয়েন্দারা নিশ্চিত যে এবার তারা সংগঠন বিস্তার করার লক্ষ্যে বাংলাভাষী মুজাহিদদেরই গুরুত্ব দিচ্ছে। তারা তাদের প্রচারে বাংলাভাষী ‘শহীদদের’ কথাও ফলাও করে প্রচার করছে। আফগানিস্তানে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের এক জিহাদি আল কায়েদার হয়ে লড়াই করতে গিয়ে মারা যান। তার নামে গজল তৈরি করে প্রচার করা হচ্ছে। এদিকে, ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আল কায়েদা প্রতি সপ্তাহে একটি উপ-মহাদেশীয় সংবাদ বুলেটিন প্রচার করছে। আর এই বুলেটিনে পশ্চিমবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ থাকছে। সম্প্রতি কলকাতায় ট্রেনের মধ্যে এক মাদরাসা শিক্ষকের ওপর হামলার ঘটনাও জায়গা পেয়েছে ওই বুলেটিনে। গোটা প্রক্রিয়াটিকে উস্কানিমূলক খবর দিয়ে পরিকল্পিত ভাবে মগজধোলাই করার পরিকল্পনা বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।