লর্ডসে সান্ত্বনা খোঁজার মিশন
কত আয়োজন বার্মিংহামে! গ্যালারি আকাশি রংয়ে ঢেকে ফেলতে লাল-সবুজের কতনা চেষ্টা। ১১৫ পাউন্ডের টিকিট ১০ প্রবাসী বাঙালি মিলে কিনলেন ২৫০ পাউন্ডে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার দাম প্রায় ২৭ হাজার টাকা। মাঠে পাঠালেন তাদের একজনের ক্রিকেট পাগল সন্তানকে। বাইরে অপেক্ষায় রইলেন সন্তান যেন জয়ের উল্লাস নিয়ে বেরিয়ে আসে ‘বাংলাদেশ’ ‘বাংলাদেশ’ স্লোগান দিয়ে। কিন্তু হলো না, ১৭ কোটি বাঙালির প্রার্থনাকে বিফল করলেন মাঠে থাকা তাদের ১১ প্রতিনিধি। ভারতের বিপক্ষে ৩১৫ রান তাড়া করতে নেমে হেরে গেল ২৮ রানে। সেই সঙ্গে নিভে গেল বিশ্বকাপে জ্বলতে থাকা বাংলাদেশের স্বপ্নের প্রদ্বীপ। শেষ চারের আশা মিলিয়ে গেছে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই। এবার সুযোগ পঞ্চম হওয়ার। পাকিস্তানকে হারাতে পারলে মিলবে সেই সুযোগ। সেই সান্ত্বনার খোঁজে এবার ক্রিকেটের মক্কায় বাংলাদেশ। গতকাল দুপুর একটায় হৃদয় ভাঙার গল্প উপহার দিয়ে বার্মিংহাম ছেড়ে লন্ডনের পথ ধরে বাংলাদেশ দল। স্বপ্ন শেষ হয়ে গেলেও হার ভেঙে পড়তে নারাজ টাইগারদের প্রধান কোচ স্টিভ রোডস। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের বিপক্ষে শুক্রবারের ম্যাচটার দিকে তাকিয়ে আছি আমি। পাকিস্তান খুব কঠিন প্রতিপক্ষ। আমরা জানি তারা কতটা ভালো দল। তবে আমরা আত্মবিশ্বাসী। জানি জেতা সহজ হবে না। জিততে কঠিন লড়াই করতে হবে। শেষ ম্যাচে দুটি পয়েন্ট পাওয়ার জন্য আমরা উন্মুখ।’ হ্যা, শেষ দুই ম্যাচে পয়েন্ট পেলে অন্তত নিশ্চিত হবে পঞ্চম স্থান। কারণ আর কোনো সমীকরণই বাংলাদেশকে নিতে পারবে না সেমিফাইনালে। ১৪ পয়েন্ট নিয়ে প্রথমে অস্ট্রেলিয়া নিশ্চিত করেছে শেষ চার। মঙ্গলবার টাইগারদের হারিয়ে ১২ পয়েন্ট নিয়ে সেই দলে যোগ দিয়েছে ভারত। এবার অপেক্ষা শেষ দুই দলের। নিউজিল্যান্ড-ইংল্যান্ড যারাই জিতবে তৃতীয় দল হিসেবে সেই দল নিশ্চিত করবে শেষ চার। ইংল্যান্ড জিতে যাবে ১২ আর নিজিল্যান্ড জিতলে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে। এই দুই দলের যেই হারুক তাদের পিছনে ফেলতে সুযোগ থাকবে ৯ পয়েন্ট পাওয়া শুধুই পাকিস্তানের। কারণ শেষ ম্যাচ জিতলে তাদের হবে ১১ পয়েন্ট। যদি নিউজিল্যান্ড জিততে না পারে তাহলে দুই দলের পয়েন্ট হবে সমানে সমান। সেই ক্ষেত্রে প্রথম হিসেব হবে দুই দলের কার জয়ের পাল্লা ভারি সেটি নিয়ে। সেখানেও সামান হলে রান রেট এরপর মুখোমুখি লড়াইয়ের জয়-পরাজয়। আর ইংল্যান্ড শেষ ম্যাচে হেরে গেলে ১০ পয়েন্টই থাকবে। তখন পাকিস্তান জিতলেই শেষ চার। তাই চতুর্থ দল কে হচ্ছে তার ভাগ্য নির্ধারণ হবে মূলত বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচেই। বলার অপেক্ষা রাখেনা এই ম্যাচ বাংলাদেশের চেয়ে পাকিস্তানের জেতা কতটা প্রয়োজন। অন্যদিকে শেষ ম্যাচ জিততে পারলে আন্ততো শান্তনা নিয়ে দেশে ফিরতে পারবে মাশরাফির দল। শুধু তাই নয়, ৩’ জয়ে আটকে পড়ার রেকর্ড থেকেও টাইগারদের বিশ্বকাপ রেকর্ড থেকেও মুক্তি মিলবে। এবারই প্রথম মিলবে বাংলাদেশের আছে চতুর্থ জয় নিয়ে বিশ্বকাপের আসর শেষ করার সুযোগ। এছাড়াও আছে মার্যাদা রক্ষার চ্যালেঞ্জও। বিশ্বকাপে সেমিফাইনালিস্ট নির্ধারণের প্রথম নিয়ম হল পয়েন্ট। সেটি যদি দুই দলের সমান সামান হয়ে যায় তাহলে বিবেচনাতে আসবে দুই দলের মধ্যে কে বেশি জয় জয় পেয়েছে। আর তাও যদি সমান হয় তাহলে বিবেচনাতে আসবে রান রেট। সেই হসেবে ৮ পয়েন্ট নিয়ে শ্রীলঙ্কা শেষ ম্যাচ জিতে ১০ পয়েন্ট হলে পেলেও সেমিতে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। কারণ ৮ ম্যাচে মধ্যে তারা জিতেছে ৩টিতে জয় নিয়ে। বাকি দুই পয়েন্ট এসেছে না খেলেই বৃষ্টিতে ম্যাচ ভেসে যাওয়াতে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে। তবে টাইগারদের ৫ম স্থান তারা ঠিকই কড়ে নিতে পারে যদি শেষ ম্যাচে ভারতকে হারাতে পারে। আর পাকিস্তান মাশরাফিদের কাছে হারলেও একই বিশ্বকাপকে বিদায় বলার শেষ দল হবে তারা। কারণ এরই মধ্যে টাইগাররা সহ দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে এরই মধ্যে। অন্যদিকে তামিম ইকবালের ক্যাচ ছাড়া অধিনায়ক মাশরাফির টানা ব্যর্থতার পরও শিষ্যতের সঙ্গ ছাড়লেননা প্রধান কোচ স্টিভ। সেই সঙ্গে দলের তরুণ সৌম্য সরকার, লিটন কুমার দাস, মোসাদ্দেক হোসেন, সাব্বির রহমানদের উপরও আবস্থা হারাননি। বিশেষ করে তামিমের ক্যাচ নিয়ে কোচ ছাড়া নিয়ে কোচ বলেন, ‘এত বছর ধরে ক্রিকেট দেখছি, খেলেছি। কাজেই জানি, ক্যাচ মিস কতটা মূল্য দিতে হতে পারে। তবে জানতাম না, কতটা মূল্য দিতে হবে। আশায় ছিলাম যে দ্রুতই আরেকবার সে ক্যাচ দেবে। ক্যাচটি ছেড়েছে তামিম, আউটফিল্ডে আমাদের সবচেয়ে নিরাপদ ফিল্ডারদের একজন সে। এজন্যই তার মিস কিছুটা বিস্ময়কর। তবে সেও মানুষ, আমরা সবাই মানুষ। আমিও জীবনে অনেক ক্যাচ ছেড়েছি। ক্রিকেট যারা খেলেছে, সবাই ছেড়েছে। তবে কখনও কখনও ক্যাচ মিসের চড়া মূল্য দিতে হয়, এখানে যেমনটি হয়েছে।’ আর অধিনায়কের বিদায় ও ওয়ানডে ছাড়ার বিষয়টিও তিনি ছেড়েছেন বোর্ড ও মাশরাফির সিদ্ধান্তের উপরই।