যুক্তরাষ্ট্র-ইরান বাকযুদ্ধ
ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাকযুদ্ধ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কিছু আক্রান্ত হলে ইরানের অংশবিশেষ ধ্বংস করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। অন্যদিকে তার দেয়া নতুন অবরোধকে হোয়াইট হাউজের মানসিক ভারসাম্যতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে ইরান। ইরানের সঙ্গে আলোচনার আহ্বান আসা সত্ত্বেও ইরান তা প্রত্যাখ্যান করেছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু নতুন করে অবরোধ দেয়াকে কূটনৈতিক উপায়ের মৃত্যু ঘটানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে ইরান। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের রিপোর্টে এমনটা বলা হয়েছে। ইরানের বিরুদ্ধে অবরোধ দেয়ার পরেও আলোচনার দরজা খোলা রেখেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, উত্তেজনা প্রশমনে শান্তিপূর্ণ উপায়ে আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসা উচিত ইরানের এবং কার্যকরভাবে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবরোধ প্রত্যাহারের পথ করে নেয়া উচিত। তিনি সোমবার ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ও সিনিয়র কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ করেন। এ বিষয়ে তিনি একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। এর মধ্য দিয়ে ইরানের ওপর শাস্তি বাড়াতে চেয়েছেন তিনি। এর আওতায় রয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভাদ জারিফও। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ড্রোন ভূপাতিত করে ইরান। এর প্রতিশোধ হিসেবে ইরানে হামলা চালানোর নির্দেশ দেন ট্রাম্প। কিন্তু এমন হামলা চালালে বহু মানুষের প্রাণহানী ঘটবে এমন আশঙ্কায় শেষ মুহূর্তে তিনি সেই নির্দেশ প্রত্যাহার করে নেন। যদি হামলা চালানোই হতো, তাহলে দুই দেশের মধ্যে চার দশক ধরে যে শত্রুতাপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছে, তার মধ্যে এটাই হতো ইরানে প্রথম হামলা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর আগে উত্তর কোরিয়াকে হুমকি ধমকি দেয়ার ক্ষেত্রে যে ধরণের কর্কশ ভাষা ব্যবহার করেছেন, সেই একই রকম ভাষা ব্যবহার করেছেন ইরানের ক্ষেত্রে। তিনি টুইটে বলেছেন, আমেরিকার যেকোনো কিছুর বিরুদ্ধে ইরানের যেকোনো হামলার জবাব দেয়া হবে ভয়াবহভাবে ও প্রচুর শক্তি নিয়ে। কোনো কোনো এলাকা একেবারে ধ্বংস করে দেয়া হবে। ওদিকে মঙ্গলবার টেলিভিশনে ভাষণ দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। তিনি ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির বিরুদ্ধে দেয়া অবরোধে কোনোই ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে না বলে মন্তব্য করেন। বলেন, দেশের এই শীর্ষ ধর্মীয় নেতার বিদেশে কোনো সহায় সম্পদ নেই। বিশ্বের কাছে ইরানকে উন্মুক্ত করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দু’বার ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন রুহানি। তিনি ওই ভাষণে বলেছেন, হোয়াইট হাউস যে কাজ করেছে তা মানসিক ভারসাম্যহীনতা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে হেয় করতে অতীতে এ ধরণের মন্তব্য করেছেন ইরানের অন্য নেতারা। উল্লেখ্য, ইরানের মন্ত্রীপরিষদ নিয়ে প্রেসিডেন্ট রুহানি তার প্রতিদিনের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে পরামর্শ করেন খামেনির সঙ্গে। রুহানি বলেছেন, তেহরানের কৌশলগত ধৈর্য্যধারণের অর্থ এই নয় যে, আমরা ভীত। তবে হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের জানাতে হবে যে, আলোচনা সহ তারা কি কি করতে চায়। তারা যা করতে চান, তার জন্য আমরা প্রস্তুত। ট্রাম্প আরো বলেন, অর্থনৈতিকভাবে ইরান ভাল নেই। এ অবস্থা অত্যন্ত দ্রুত ও অত্যন্ত সহজে পরিবর্তন করা যেতে পারে। কিন্তু নেতৃত্ব থেকে আসা শত্রুতাপূর্ণ আচরণ থেকে মুক্ত হবে তাদেরকে। আমি আশা করি, তাদের নেতৃত্ব শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের সঙ্গে আলোচনায় আসতে পারেন।