বিচারাধীন মামলা ৩৫ লাখ ৮২ হাজার
আদালতে মামলাজট নিরসনে প্রচলিত আইনের সংস্কার জরুরি বলে মনে করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেছেন, মামলা জট নিরসনে প্রচলিত আইনের সংস্কার অনেক ক্ষেত্রে জরুরি এবং আইনের এ সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রচলিত আইনকে যুগোপযোগী করতে আইন সংশোধন ও বাস্তবতার নিরিখে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়। গতকাল সংসদে লিখিত প্রশ্নোত্তরে তিনি এসব কথা বলেন। মন্ত্রী জানান সারা দেশের আদালতসমূহে ৩৫ লাখ ৮২ হাজার ৩৪৭টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে এ সংক্রান্ত প্রশ্নটি উত্থাপন করেন সরকারি দলের সংসদ সদস্য মো. হাবিবুর রহমান। জবাবে মন্ত্রী বলেন, একটি আইনের সঙ্গে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার জড়িত থাকে। সকলের মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনে আইন সংশোধন বা নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়। ইতিমধ্যে বেশ কিছু আইনের সংস্কার করা হয়েছে। আরো কিছু আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনের কার্যক্রম চলমান আছে। সরকারি দলের বেনজীর আহমদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, বিচার ব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রিতা কমিয়ে বিচার কাজ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি ও এজলাস সংকট নিরসনে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বিচার কাজে গতিশীলতা বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকারের বিশেষ উদ্যোগে বিভিন্ন পর্যায়ে বিচারকের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনকে গতিশীল করা হয়েছে যাতে শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ দেয়া যায়। এ লক্ষ্যে ২০১৪-১৮ সাল পর্যন্ত সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগে ৬ জন ও হাইকোর্ট বিভাগে ২৮ জন বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনকে গতিশীল করা হয়েছে। আনিসুল হক বলেন, ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত অধঃস্তন আদালতে মোট ৫৭১ জন সহকারী জজ নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ৯৯ জন সহকারী জজ নিয়োগের কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আরো ১০০ জন সহকারী জজ নিয়োগের জন্য জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশন বরাবর চাহিদাপত্রও পাঠানো হয়েছে। সরকার নারী ও শিশু নির্যাতন অপরাধ সংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সারাদেশে আরো ৪১টি ট্রাইব্যুনাল সৃজন করা হয়েছে। নতুন সৃজিত এ ট্রাইব্যুনালসহ মোট ৯৫টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর অধীন দায়েরকৃত মামলাসমূহ নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। তাছাড়া ৭টি সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সৃজন করা হয়েছে। বিএনপি দলীয় এমপি মো. হারুনুর রশীদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, বার কাউন্সিলে সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ ১১৭ কোটি ৬৬ লাখ ৩২ হাজার টাকা। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে কাজ করছে কুশলী নির্মাতা লিমিটেড। আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ শহিদ ইসলামের প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, প্রাণঘাতি মাদকের অপব্যবহার রোধ ও মাদক প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ এর আওতায় মাদক বিরোধী আদালত, ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। সরকারি দলের সদস্য নূরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, নিবন্ধন অধিদপ্তরে কর্মরত সাব-রেজিস্ট্রারদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়। তবে বিগত ১০বছরে এ অপরাধে কাউকে চাকরিচ্যুত করা হয়নি। কারণ অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চাকরি বহাল রাখা হয়েছে। সরকারি দলের বেগম হাবিবা রহমান খানের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী জানান, গত ৩১শে মার্চ পর্যন্ত নিম্ন আদালত থেকে সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত অর্থাৎ দেশের আদালতসমূহে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩৫ লাখ ৮২ হাজার ৩৪৭টি। এর মধ্যে আপিল বিভাগে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ২১ হাজার ৮১৩টি। হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৫ লাখ ৬ হাজার ৬৬৪টি। আওয়ামী লীগের সদস্য হাজী মো. সেলিমের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী জানান, দেশের পারিবারিক আদালতে ৩১শে মার্চ পর্যন্ত মোট বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৫৯ হাজার ৮৬০টি। জেলা ভিত্তিক দেয়া হিসেব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সর্বাধিক বিচারাধীন মামলা ঢাকা জেলায়, ৫ হাজার ৫০৯টি। বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে কোনো মামলা বিচারাধীন নেই।