প্রেক্ষাগৃহ সংকটে পড়তে যাচ্ছে ঈদের ছবি
রোজা শুরু হতে কয়েকদিন বাকি। আর রোজার পরই আসবে খুশির ঈদ। বরাবরের মতো এই উৎসব শুরুর আগে থেকেই শুরু হয় নতুন ছবি সিনেমা হলে মুক্তি দেয়া নিয়ে হিসাব-নিকাশ। আর ঈদ মানেই বড় বাজেটের ছবি। তাই সব প্রযোজকেরই দৃষ্টি থাকে দেশের বড় এবং ভালো মানের প্রেক্ষাগৃহগুলোতে নিজেদের বড় বাজেটের ছবিগুলো মুক্তি দেয়ার। এদিকে চলচ্চিত্র ব্যবসায়ীদের হিসাব মতে, সারাদেশে ২৭৪টি প্রেক্ষাগৃহ থাকলেও ভালো মানের সিনেমা হলের সংখ্যা অনেক কম। আসছে ঈদে ঢালিউড কিংখ্যাত তারকা শাকিব খান অভিনীত ও প্রযোজিত এবং মালেক আফসারী পরিচালিত ‘পাসওয়ার্ড’, ওপার বাংলার নির্মাতা রাজা চন্দের পরিচালনা ও জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রযোজনায় ‘বেপরোয়া’, সাকিব সনেটের প্রযোজনা ও পরিচালনায় ‘নোলক’ ও অনন্য মামুনের ‘আবার বসন্ত’ ছবিগুলো আপাতত মুক্তির তালিকায় রয়েছে। হয়তো সামনে মুক্তির তালিকা দীর্ঘও হতে পারে। এরমধ্যে জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রযোজনায় ‘বেপরোয়া’ ছবিতে অভিনয় করেছেন ববি ও রোশান। তবে কয়টা প্রেক্ষাগৃহে এ ছবিটি মুক্তি পাবে জানতে চাইলে জাজের সিইও আলিমুল্লাহ খোকন মানবজমিনকে বলেন, সারাদেশে ২৭৪টি প্রেক্ষাগৃহ এখন চালু আছে। ঈদের সময় এ সংখ্যা কিছু বাড়লেও সবমিলিয়ে ভালো মানের প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা খুবই কম। রাজধানীতে স্টার সিনেপ্লেক্স, ব্লকবাস্টার, মধুমিতা, শ্যামলী, বলাকা, ঢাকার বাইরে যশোরের মনিহার, চট্রগ্রামের মিনি সিনেপ্লেক্সসহ হাতে গোনা কয়েকটা ভালো প্রেক্ষাগৃহ আছে। তাই সিনেমা হল মালিকরা কোন ছবিটি ঈদে চালাবেন তা নিয়ে চাপে থাকেন। জাজের নিজস্ব ২২টি প্রেক্ষাগৃহ আছে এখন। তবে প্রেক্ষাগৃহ মালিকরা সব সময় ঈদে তাদের পছন্দমতো সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দিতে চান। এবার জাজ থেকে ‘বেপরোয়া’ ছবিটি মুক্তি দেয়ার পরিকল্পনা আছে। তবে কোন কোন সিনেমা হলে ছবিটি মুক্তি পাবে তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। আরেকটু সময় দিতে হবে। এদিকে ঈদে আগ্রহী চারটি ছবির মধ্যে দুটিই শাকিব খান অভিনীত। একটি ছবির নাম ‘পাসওয়ার্ড’ এবং অন্যটি ‘নোলক’। চলচ্চিত্র ব্যবসায়ীদের ভাষায় শাকিব খান অভিনীত ছবি প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শনে চলচ্চিত্র ব্যবসায়ীদের আগ্রহ অনেক বেশি থাকে। এদিকে ভালো একটা অবস্থান রয়েছে জাজ মাল্টিমিডিয়ার ছবি ‘বেপরোয়া’। এ ছবিতে দর্শকরা প্রথমবার ববি ও রোশানকে একসঙ্গে দেখতে পাবেন। এ ছবি নিয়েও প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের আগ্রহ রয়েছে বলে জানায় প্রযোজনা সংস্থা জাজ। এ ছবির বাজেট প্রায় চার কোটি টাকা। তবে কাকরাইলের চলচ্চিত্র ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, যে হারে ভালো মানের প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা কমছে তাতে ঈদে তিনটির বেশি ছবি মুক্তি পাওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। তাদের মতে, ডিজিটাল প্রযুক্তিতে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের সুযোগ সীমিত হয়ে আসছে। যে ক’টি প্রেক্ষাগৃহে এ প্রযুক্তিতে ছবি প্রদর্শনের সুযোগ রয়েছে তাতে খুব বেশি হলে ঈদে তিনটি ছবি ভাগাভাগি করে মুক্তি পেতে পারে। এদিকে তারিক আনাম খান ও স্পর্শিয়া অভিনীত ‘আবার বসন্ত’ ছবিটি কয়টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে জানতে চাইলে এ ছবির পরিচালক অনন্য মামুন বলেন, আমার ছবির বাজেট ৬৫ লাখ টাকা। আর ঈদ আসলে তো সিনেমা হল সংকট থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এটা নিয়ে আমি ভাবছি না। কারণ আমার টার্গেট মাল্টিপ্লেক্স। ঢাকা ও চট্রগ্রাম মিলে পাঁচটি মাল্টিপ্লেক্স (প্রেক্ষাগৃহ) কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তারা সকলে মোটামুটি কনফার্ম করেছে। মাল্টিপ্লেক্স মানের প্রেক্সাগৃহে আমার ছবিটি চললেই আমি খুশি। আমার টার্গেট এসব মাল্টিপ্লেক্সের দর্শকরাই। এদিকে প্রযোজক ও পরিচালক সাকিব সনেট ‘নোলক’ ছবিটি নিয়ে হাজির হচ্ছেন। চলচ্চিত্র ব্যবসায়ীদের সমর্থন পেলে ঈদ উৎসবে সিনেমাপ্রেমী দর্শকদের একটা ভালো সিনেমা উপহার দিতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি। তবে সমস্যা হচ্ছে প্রেক্ষাগৃহ সংকট। ডিজিটাল প্রযুক্তিতে ভালো মানের ছবি প্রদর্শন করার মতো প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা আশাব্যঞ্জক না হওয়ায় প্রেক্ষাগৃহ সংকটে পড়তে যাচ্ছে ঈদের ছবি।