স্বর্ণ আমদানির দুয়ার খুলছে
অবশেষে বাংলাদেশে স্বর্ণ আমদানির দুয়ার খুললো। এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করে স্বর্ণ আমদানির জন্যআগ্রহীদের কাছে লাইসেন্স দিতে আবেদনপত্র নেয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগ্রহীদের চলতি বছরের ৩০শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগে আবেদন করতে হবে। তবে বেশ কিছু শর্ত দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে আবেদনকারী নিবন্ধিত লিমিটেড কোম্পানি হলে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ন্যূনতম ১ কোটি টাকা থাকতে হবে। আমদানিকৃত স্বর্ণের বার ও স্বর্ণালঙ্কার নিরাপদে রাখতে সাড়ে ৭শ’ বর্গফুটের কার্যালয় থাকতে হবে। লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারীদের অফেরতযোগ্য পাঁচ লাখ টাকার পে-অর্ডার দিতে হবে। জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ২০ থেকে ৪০ টন স্বর্ণের চাহিদা রয়েছে। এরমধ্যে ৮০ শতাংশই আসে চোরাচালানের মাধ্যমে। বাকি ২০ শতাংশ স্বর্ণ আসে পুরনো ব্যবহৃত অলঙ্কার থেকে। চোরাচালানের মাধ্যমে স্বর্ণ আসতে থাকায় সরকার বিপুল অঙ্কের রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। এভাবে স্বর্ণ আসায় অর্থপাচার ও কালো টাকা ব্যবহার হচ্ছে বলেও জানা যায়। ২০১৮ সালের ৩রা অক্টোবর মন্ত্রিসভা প্রথমবারের মতো স্বর্ণ আমদানি-রপ্তানি নীতিমালার এ খসড়া অনুমোদন করে। নীতিমালার আলোকে স্বর্ণ ব্যবসা পরিচালিত হলে এই ব্যবসায় অর্থপাচার রোধ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, স্বর্ণ আমদানির অনুমোদন দেয়ায় দেশে বৈধ পথে স্বর্ণ আমদানি হবে। ফলে অর্থপাচার কমে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।পরিপত্রে বলা হয়, স্বর্ণ আমদানি করতে দুই বছরের জন্য লাইসেন্স দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। দুই বছর পর লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে। অনুমোদন দেয়া লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে নবায়ন করতে হবে। নবায়নের ফি ধার্য করা হয়েছে দুই লাখ টাকা। স্বর্ণ আমদানির লাইসেন্স পেতে কমপক্ষে ১ কোটি টাকার বৈধ অর্থ দেখাতে হবে, যা পরিশোধিত মূলধন আকারে থাকবে। স্বর্ণ আমদানির লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারী কোনোভাবেই ব্যাংক ঋণ বা কর খেলাপি হতে পারবেন না। পরিপত্রে আরো বলা হয়- প্রতিষ্ঠানের আবেদনের সঙ্গে হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্সের কপি, কর শনাক্তকরণ নম্বরের (টিআইএন) সনদপত্র, মূল্য সংযোজন করের (মূসক) নিবন্ধন, ব্যবসা শনাক্তকরণ নম্বরের (বিআইএন) সনদপত্র, স্বর্ণ ক্রয়, সংরক্ষণ ও বিতরণ আদেশ ১৯৮৭ আওতায় লাইসেন্সের কপি, সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্যপদের কপি, আয়কর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সর্বশেষ নিরূপিত আয়ের সার্টিফিকেট-আয়কর নির্ধারণী আদেশের কপি সংযুক্ত করতে হবে। এ সঙ্গে আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সচ্ছলতা সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের তফসিলভুক্ত ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সনদপত্র, আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক-অংশীদার-পরিচালকদের বিস্তারিত তথ্যসহ উপযুক্ততা ও যথার্থতা সম্পর্কে পুলিশ ছাড়পত্র, আবেদনকারী প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তফসিলভুক্ত ব্যাংকের গোপন প্রতিবেদন থাকতে হবে। আর আয়কর পরিশোধ প্রত্যয়নপত্র এবং ঋণ প্রতিবেদন (সিআইবি রিপোর্ট), আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ছবিসহ জীবন বৃত্তান্ত, আবেদনকারী প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত লিমিটেড কোম্পানি হলে ওই কোম্পানির নিবন্ধন সনদ, মেমোরেন্ডাম অব এসোসিয়েশন এবং আর্টিকেলস অব এসোসিয়েশনের কপি জমা দিতে হবে। এ ছাড়া অফিস স্থানের মালিকানা দলিল বা ভাড়া করা অফিস হলে চুক্তিনামার কপি দেয়ার পাশাপাশি লাইসেন্স ফি বাবদ বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বরাবর ৫ লাখ টাকার (অফেরতযোগ্য) পে-অর্ডার-ব্যাংক ড্রাফট এবং ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতার সংক্ষিপ্ত বিবরণীসহ আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও যোগাযোগ-তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার সংক্রান্ত বিষয়ে বিবরণী (উপযুক্ত প্রমাণাদিসহ) জমা দিতে হবে।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বৈধ পথে দেশে স্বর্ণ না আসায় একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব হারায়, অপরদিকে পাচার হয়ে যাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকার স্বর্ণ আমদানি উন্মুক্ত করার জন্য স্বর্ণ নীতিমালার ওপর একটি গেজেট প্রকাশ করে। গত ২৯শে অক্টোবর এ নীতিমালা জারির পর কীভাবে স্বর্ণ আমদানি করতে পারবে, কারা আমদানি করবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংককে দেয়া হয়।