নতুন রূপে শামীম-আইভীর পুরনো বিরোধ: আবার অশান্ত নারায়ণগঞ্জ
নিউজ ডেস্ক:: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা: সেলিনা হায়াৎ আইভী ও এমপি শামীম ওসমানের বিরোধ আবারো প্রকাশ্যে চলে এসেছে। স্কুলছাত্র ত্বকী হত্যাকাণ্ডের ষষ্ঠ বার্ষিকীতে গত ৬ মার্চ এক সভায় আইভী নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারকে খুনি পরিবার হিসেবে উল্লেখ করেন। আইভী ওই সমাবেশে বলেন, তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যাকাণ্ড কে বা কারা সংগঠিত করেছে তা বাংলাদেশের কারোর অজানা নয়। কোনো অদৃশ্য শক্তির ইঙ্গিতে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হচ্ছে না তা আমাদের সবার জানার অধিকার আছে। পাশাপাশি চঞ্চল, আশিকসহ অন্যান্য হত্যাকাণ্ডের আমরা বিচার চাই। এসব হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে ওসমান পরিবারের মাধ্যমে। আইভীর এমন বক্তব্যের পর শামীম ওসমানের সাথে তার বিরোধ আবার নতুন রূপে শুরু হয়। আইভীর এ বক্তব্যের পর তক্বীর বাবা রফিউর রাব্বিসহ শামীম ওসমান বিরোধী বলয়ের লোকজন আবার প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশে এই পরিবারের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে থাকে। এমনকি মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল এক জনসভায় ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে তক্বী হত্যাকাণ্ড নিয়ে বক্তব্য দেন। ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে এসব বক্তব্য যখন নারায়ণগঞ্জে আলোচিত হচ্ছিল ঠিক সেই সময়ে আইভীর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নালিশ করেন শামীম ওসমানের পক্ষের লোকজন। ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও আপত্তিকর বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেন 'সচেতন নাগরিক সমাজ নারায়াণগঞ্জ'। গত মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়ার কাছে এ স্মারকলিপি দেয়া হয়। সিটি করপোরেশনের ২৪ জন কাউন্সিলর, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, আইনজীবী সমিতি, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ), শিক্ষক সমিতি, ইমাম সমিতি, জেলা ও পাঁচটি উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটি, ব্যবসায়ী সংগঠন, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের ২২ জন চেয়ারম্যান, বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনসহ ২১ শ্রেণীর কয়েক হাজার মানুষ ওই স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর দেন। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়,আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি,নারায়ণগঞ্জে কোনো অনাকাক্ষিত ঘটনা ঘটলেই একটি জনবিচ্ছিন্ন শ্রেণী ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবারকে লক্ষ্য করে মাঠে নামে এবং বিভিন্ন আপত্তিকর বক্তব্য প্রদান করে। সংবিধানের বাহক সেজে জামায়াত-শিবিরের সাথে আঁতাত করা, ক্ষমতার জন্য লালায়িত কিছু বড় বড় ডক্টর সাহেবদের প্রেসক্রিপশনে ঘন ঘন রাজধানী থেকে তথাকথিত কিছু সুশীল নারায়ণগঞ্জে আসছেন।তারা একই সাথে বর্তমান সরকারের কুৎসা রটনার পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জের ভাবমূর্তি ক্ষুণ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকেন।' 'পরিতাপ হয়,ক্ষোভ হয়,যখন দেখি যার আহ্বান ও সমর্থনে এসব সুশীল আসেন,তিনি হলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সেলিনা হায়াৎ আইভী। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা লক্ষ করলাম, গত ৬ মার্চ আইভী জনসম্মুখে বললেন, নারায়ণগঞ্জে আজ পর্যন্ত যত খুন হয়েছে সেসব ওসমান পরিবারের দ্বারা হয়েছে। আমরা স্তম্ভিত হলাম।' বিচার চলাকালীন কোনো মামলা নিয়ে মন্তব্য করা অনুচিত উল্লেখ করে আইভীর প্রতি নির্দেশ করে স্মারকলিপিতে আরো লেখা হয়,'আমরা অবাক হলাম যখন শুনলাম মেয়র আইভী বলছেন, 'সাগর-রুনির ব্যাপারে আমরা অনেক কিছু জানি। অনেক কিছু জড়িত, তনু হত্যার বিচার কেন হচ্ছে না, সেটাও জানি কারা জড়িত। এমন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মেয়র আইভী বলেন, 'সার্বিক পরিস্থিতি আমি পর্যবেক্ষণ করছি। অনেকেই খোঁচানোর চেষ্টা করছে। আগেও করেছিল, এখনো করে যাচ্ছে। আমি উন্নয়ন নিয়ে কাজ করতে চাই। নারায়ণগঞ্জবাসী,দেশবাসী উনার (শামীম ওসমান) বিচার করবেন। তিনি জানান, 'উনি (শামীম ওসমান) যা মন চায় বলুক। কারণ নারায়ণগঞ্জের মানুষ জানে উনি সত্যকে মিথ্যা, মিথ্যাকে সত্য বলতে কতটাই পটু! তার সম্পর্কে নতুন করে বলার আমার কিছু নাই। তাকে নিয়ে ভাবারও কোনো সময় নাই।' তিনি প্রশ্ন রাখেন, শামীম ওসমান কি সাগর-রুনির বিচার চান না? তিনি কি ত্বকী হত্যারও বিচার চাননা? তিনি বলেন, 'আমি চাই সকল হত্যার বিচার হোক। যারা জড়িত তারা যাতে আইনের আওতায় আসে- এই দাবি সবসময় জানাবো।' নাগরিক কমিটি নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি অ্যাডভোকেট এ বি সিদ্দিকী বলেন, মেয়র আইভী একজন জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। মেয়র নারায়ণগঞ্জকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছেন এমন কর্মকাণ্ড আমরা কেউ দেখি নাই। মেয়র সবসময় প্রতিবাদমুখর। তার এই অভ্যাসটিকে আমরা খারাপ চোখে দেখি না। নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল হাই বলেন, আমি আসলে নিজেই স্মারকলিপির বিষয়ে জানি না। তাই না জেনে কোনো বক্তব্য দিতে পারছি না। নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন জানান, স্মারকলিপিতে আমি স্বাক্ষর করি নাই আমি জানিও না। আমার সেক্রেটারি (খোকনসাহা) তাদের (শামীম ওসমান) লোক সে হিসেবে ওখানে ছিল।