
ইরানজুড়ে মানুষের ঢল
তেহরানের রাস্তায় শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছে লাখো-কোটি ইরানি। মিছিল নিয়ে সবাই যাচ্ছে আজাদি স্কয়ারের দিকে। কোথাও কোথাও হয়েছে বিক্ষোভও। তবে এ বিক্ষোভ নিজ দেশের কারো বিরুদ্ধে নয়, এ বিক্ষোভ ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও আরব শাসকদের বিরুদ্ধে। দেশটির সহস্রাধিক শহর থেকে আসা মানুষ স্লোগান দিচ্ছিল, ‘সৌদি আরব ধ্বংস হোক’, ‘যুক্তরাষ্ট্র নিপাত যাক’, ‘ইসরাইল নিপাত যাক’ বলে। এ ছিল ইরানের রাজধানীর সোমবারের চিত্র। প্রতি বছর ১১ই ফেব্রুয়ারি ইরানের মানুষ রাস্তায় নেমে আসে আজ থেকে ৪০ বছর আগে সংগঠিত হওয়া বিপ্লবের পক্ষে তাদের সমর্থন জানাতে। দেশটি বিশ্বকে দেখাতে চায় ইরানের আপামর জনতা সেই বিপ্লব এখনো ধারণ করে। ১৯৭৯ সালে ইরানে একটি এন্টি ওয়েস্টার্ন বিপ্লবের মধ্য দিয়ে তৎকালীন শাসক শাহ রেজা পাহলভীকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। এ বিপ্লবের নেতৃত্বে ছিলেন আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি। ২৫০০ বছরের পুরনো রাজতন্ত্র তথা রেজা শাহ’র পতনের পর ইরান পরিণত হয় ইসলামিক প্রজাতন্ত্রে। দেশে অংশগ্রহণমূলক শাসনব্যবস্থা চালু হয়। সেই দিনটিকে স্মরণ করতেই প্রতিবছর এই দিনে রাস্তায় নেমে আসে ইরানিরা। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র আরব শাসকদের বিরুদ্ধে ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে ইরানের শহরগুলো। সোমবার তেহরানে বক্তৃতা দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। তিনি বলেন, ১৯৭৯ সালের এই দিনে ইরান নির্ভরতা ও স্বৈরশাসনের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছিল। ইরান এরপর সরকার পরিচালনায় একটি স্বাধীন প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠিত করতে সফল হয়েছিল। ইসরাইলের নানা চক্রান্তও নস্যাৎ করে দিয়েছে ইরানিরা। পার্সটুডে জানিয়েছে, ইরানের চলমান ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন নিয়েও কথা বলেছেন রুহানি। তিনি বলেন, ক্ষেপণাস্ত্রসহ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরির জন্য তেহরান কারো অনুমতি নেয় না এবং ভবিষ্যতেও নেবে না। ইরান দৃঢ়তার সঙ্গে নিজের পথচলা অব্যাহত রাখবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরো বলেন, বিশ্বের সবাই জানে সাদ্দামের চাপিয়ে দেয়া ইরান-ইরাক যুদ্ধের চেয়ে বর্তমান ইরান আরো অনেক বেশি শক্তিশালী। ইরানের সশস্ত্র বাহিনী অস্ত্র ও সরঞ্জাম তৈরিতে স্বনির্ভরতা অর্জন করেছে। এসময় তিনি ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর সাহসিকতা ও দৃঢ়তার প্রশংসা করেন। এদিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, গোটা বিশ্বই দেখেছে ইরানের সদিচ্ছা ও সহযোগিতায় সিরিয়া, ইরাক ও লেবাননের জনগণ বিজয় অর্জন করেছে। একইসঙ্গে, ফিলিস্তিন ও ইয়েমেনের জনগণ আগ্রাসী ও দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে। শত্রুরা এখন তাদের ২০ বছরের ব্যর্থতা ও হস্তক্ষেপের কথা স্বীকার করে আস্তে আস্তে এই অঞ্চল থেকে সরে পড়তে বাধ্য হয়েছে। এতে এখানকার মানুষ স্বাধীনভাবে উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে যাত্রা অব্যাহত রাখতে পারবে। রুহানি বলেন, জনগণের ব্যাপক উপস্থিতি প্রমাণ করে শত্রুদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে এবং তারা কখনোই তাদের অশুভ লক্ষ্য হাসিল করতে পারবে না। ইরান অতীতের মতো আগামীতেও নিজের পথচলা অব্যাহত রাখবে। এ ছাড়াও ইরানের অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন তিনি।বৃষ্টি ও তুষারপাতের মধ্যেই স্লোগান দিচ্ছিল বিক্ষোভকারীরা। আল-জাজিরাকে এক বিক্ষোভকারী জানান, তিনি প্রতি বছর এদিন বিক্ষোভে যোগ দেন। এবার তার সঙ্গে এসেছেন তার স্ত্রী ও ৯ বছর বয়সী সন্তানও। সমাবেশ উপলক্ষে ইরানজুড়ে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। গত বছর দেশটির এক সামরিক কুচকাওয়াজে সন্ত্রাসীদের হামলায় ২৯ জন নিহত হয়েছিল।
- ট্যাগ:
- আন্তর্জাতিক
- ইসলামী বিপ্লব
- ইরান