কয়লা আমদানির শুরুর ২৫ দিন পরেই বন্ধ, মারাত্মক ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরা
ভারত থেকে কয়লা আমদানি শুরু হওয়ার মাত্র ২৫ দিনের মাথায় হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে গেছে। এতে লোকসানের মুখে পড়েছেন আমাদানিকারকরা। প্রায় একশ কোটি টাকার লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া কয়লা আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকার হয়ে পড়েছেন প্রায় পাঁচ সহস্রাধিক শ্রমিক।প্রায় সাত মাস কয়লা আমদানি বন্ধ থাকার পর গত ডিসেম্বরে সিলেটের চারটি সীমান্ত দিয়ে ফের আমদানি শুরু হয়।সিলেট কয়লা আমদানিকারক সমিতি সূত্রে জানা যায়, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বিভিন্ন খনি থেকে প্রতিদিন সিলেট বিভাগের তামাবিল, বড়ছড়া, চারাগাঁও ও বাগলী সীমান্ত দিয়ে প্রায় ১০ হাজার টন কয়লা আমদানি হয়ে থাকে। দেশের চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশই পূরণ করে ভারত থেকে আসা কয়লা।মেঘালয়ের একটি পরিবেশবাদী সংগঠনের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশগত ক্ষতির কথা বিবেচনা করে ২০১৪ সালে কয়লা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ভারতের ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল। এরপর সেদেশের রফতানিকারকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে কয়েক দফা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য উত্তোলিত কয়লা রফতানির উপর নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করে আদালত। এতে কয়লা আমদানির সুযোগ পেতেন সিলেটের ব্যবসায়ীরা।সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১ জুন থেকে বন্ধ হয়ে যায় কয়লা আমদানি। পরে ওই বছরের ৪ ডিসেম্বর ভারতীয় আদালত মেঘালয়ের বিভিন্ন খনিতে উত্তোলনকৃত কয়লা চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত রফতানির অনুমতি প্রদান করে। এরপর বাংলাদেশের আমদানিকারকরা এলসি করে ২২ ডিসেম্বর থেকে আমদানি শুরু করেন। কিন্তু হঠাৎ করে গত ১৫ জানুয়ারি থেকে কয়লা আমদানি বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেন ভারতের উচ্চ আদালত। নির্ধারিত সময়ের ১৬ দিন আগে আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন আমদানিকারকরা। অনেকেই আমদানির জন্য রফতানিকারকদের অগ্রীম টাকা প্রদান করেছেন। আমদানি বন্ধ হওয়ায় আটকে আছে সে টাকাও। এছাড়া সিলেটের চার সীমান্তে কয়লা পরিবহন এবং লোড-আনলোডের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন প্রায় পাঁচ সহস্রাধিক শ্রমিক। হঠাৎ করে আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকার হয়ে পড়েছেন তারা।সিলেট কয়লা আমদানিকারক সমিতির নেতারা জানান, আমদানি বন্ধ হওয়ায় শুধু দু’দেশের ব্যবসায়ীরা নয়, বাংলাদেশ সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।তারা জানান, সিলেটের একটি স্থলবন্দর ও তিনটি শুল্ক স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার টন কয়লা আমদানি হত। প্রতি টন কয়লা আমদানিতে সরকার রাজস্ব পেত প্রায় ১৬০০ টাকা। সে হিসাবে সরকার প্রতিদিন প্রায় এক কোটি ৬০ লাখ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। সিলেট কয়লা আমদানিকারক সমিতির সভাপতি চন্দন সাহা বলেন, মেঘালয়ের বিভিন্ন খনি থেকে উত্তোলিত কয়লা ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত পরিবহনের (আমদানির) অনুমতি ছিল। কিন্তু গত ১৫ জানুয়ারি ভারতের উচ্চ আদালতের নির্দেশে রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় প্রায় ৮০০ আমদানিকারকের শত কোটি টাকার এলসি আটকা পড়েছে। কয়লা আমদানি করতে না পারলেও এলসির সুদ ব্যাংকে পরিশোধ করতে হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন ইটভাটার মালিকের কাছ থেকে অর্ডার নিয়ে এখন কয়লা দিতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। সব মিলিয়ে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।চন্দন সাহা জানান, আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি ভারতের আদালতে এই নিষেধাজ্ঞার উপর শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। শুনানি শেষে কয়লা আমদানির অনুমতি পাওয়া গেলে ব্যবসায়ীরা কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।তামাবিল স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) পরিতোষ ঘোষ এ বিষয়ে বলেন, স্থলবন্দর দিয়ে ১৫ জানুায়ারি থেকে কয়লা আমদানি বন্ধ রয়েছে। তবে পাথর আমদানি চালু আছে।