লাকসাম খাদ্যগুদাম যেন সোনার খনি
লাকসাম খাদ্যগুদামে ধান-চাল ক্রয়ের নামে চলছে লুটপাটের মহা উৎসব। খাদ্য গুদাম নয়, এ যেন সোনার খনি। পর পর দুই ওসির এলএসডি দুর্নীতির দায়ে একজন জেলহাজতে। অপরজনকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে খাগড়াছড়িতে বদলি করা হয়েছে। বর্তমানে ওসি এলএসডি ধান চাল ক্রয়ের নির্দিষ্ট হারে কমিশনের বিনিময়ে ধান চাল ক্রয় করছে। উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা নিজ অফিসে না বসে খাদ্যগুদামে নিয়মিত অফিস করছে। মনোহরগঞ্জ উপজেলা খাদ্যগুদাম না থাকায় লাকসাম খাদ্যগুদামে ওই উপজেলায় ধান চাল ক্রয় করছে। তৎকালীন ওসি এলএসপি এটিএম মহিউদ্দিন প্রায় ৪ কোটি টাকার ধান চাল বিক্রি করে দেন। শেষ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। সরকারি কোষাগারে ২ কোটি ৮২ লাখ টাকা জমা দেন। এরপরও শেষ পর্যন্ত জেল হাজতে রয়েছেন। অপর ওসি এলএসডি এনাম আহাম্মদ ২০১৬ সালের ৫ই অক্টোবর যোগদান করেন। তিনিও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। দিনাজপুর থেকে চাল ক্রয় করে খাদ্যগুদামে বিক্রি করতেন। এসব তথ্য ফাঁস হয়ে গেলে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে বদলি করা হয়। ওইসময় উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা এনাম আহমেদ ভূঁইয়া লাকসামের দায়িত্বে ছিলেন। ইতিমধ্যে তিনি বদলি হন। শেষ পর্যন্ত মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বদলির আদেশ স্থগিত করেন। ২০১৬ সালে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখে ওসি এলএসডি মনিরুজ্জামান যোগদান করেন। এরপর শুরু হয় ধান চাল ক্রয় করার মৌসুম। কৃষি বিভাগ থেকে বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকদের তালিকা দেয়ার পরও প্রকৃত কৃষক ধান বিক্রি করতে পারেন নি। খাদ্যগুদামে জায়গা না থাকার অজুহাতে ধান ক্রয় না করে মিল মালিকদের কাছ থেকে চাল ক্রয় করেছেন। লাকসামে ২৫টি রাইস মিল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার গোপন আঁতাতের মাধ্যমে চাউল ক্রয় করেছে প্রায় ৪ হাজার টন। বাজারে ১ মণ ধানের মূল্য ৪৫০-৫০০ টাকা। কিন্তু সরকারি ধানের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে ১ হাজার ৪০ টাকা। কৃষি বিভাগ থেকে বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রকৃত কৃষকের তালিকা তৈরি করার পর কৃষক ধান বিক্রি করতে পারছেন না। খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ ধান ক্রয় করছে ইউএনওর পিয়ন থেকে শুরু করে বিভিন্ন চেয়ারম্যান ও দালালদের কাছ থেকে। লাকসাম খাদ্যগুদামে সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী ২৯০ টন ও ২য় ধাপে ৪৮২ টন ধান ক্রয় করার জন্য সিদ্ধান্ত দেয়। অপরদিকে রাইস মিল মালিকদের কাছ থেকে ৪ হাজার টন সিদ্ধ ও আতপ চাউল ক্রয় করার সিদ্ধান্ত দেয়। প্রতি কেজি সিদ্ধ চাল ৩৬ টাকা ও আতপ ৩৫ টাকা করে মূল্য নির্ধারণ করে। মিল মালিকরা বাজার থেকে কম মূল্যে ধান ক্রয় করে সরকারি খাদ্যগুদামে চাল বিক্রি করছেন। এতে লাভবান হচ্ছে মিল মালিকরা। সর্বস্বান্ত হচ্ছে কৃষকরা। অপরদিকে মনোহরগঞ্জ উপজেলায় কোনো খাদ্যগুদাম না থাকায় লাকসাম খাদ্যগুদামে ধানও চাল ক্রয় করার নির্দেশ দেয় খাদ্য কর্তৃপক্ষ। প্রথম ধাপে ৩৪৬ টন ও ২য় ধাপে ৯৬ টন ধান ক্রয় করার নির্দেশ দেয়। মনোহরগঞ্জ উপজেলায় কোনো রাইস মিল না থাকার পরও ৭০১ টন চাল ক্রয় করার নির্দেশ দেন। মনোহরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কৃষকদের কৃষি বিভাগ থেকে তালিকা তৈরি করার পরও তারা ধান বিক্রি করতে পারছেন না। ধান বিক্রি করছে ওইসব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও দালালরা। উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা এনাম আহমেদ ভূঁইয়া ও ওসি এলএসডি মনিরুজ্জামান তারা উভয়ে বলেন, মনোহরগঞ্জ উপজেলা ইউএনওর মাধ্যমে ধান আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। তা আমরা ক্রয় করেছি। এ ছাড়া বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হয়েছে বলে ওই কর্মকর্তারা জানান। এ ছাড়া মনোহরগঞ্জ উপজেলা থেকে বরাদ্দকৃত ৩৪৬ টন ধানের মধ্যে মাত্র ৯৬ টন ধান ক্রয় করা হয়েছে। খাদ্যগুদাম সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত ২১০ টন ধান ক্রয় করা হয়েছে। ৩টি গুদামে সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা ১৯৫০ টন। গুদামে জায়গা নেই অজুহাতে ধান ক্রয় করছে না কৃষকের কাছ থেকে। অথচ বিভিন্ন রাইসমিলের মালিকদের কাছে থেকে চাউল ক্রয় করছে। অন্য একটি সূত্রে জানা যায়, মিল মালিকদের সঙ্গে টনপ্রতি নির্দিষ্ট হারে টাকার বিনিময় এই চাল ক্রয় করছে। ওসি এলএসডি মনিরুজ্জামান বলেন, কৃষি বিভাগের তালিকা অনুসারে ধান ক্রয় করা হয়েছে। তালিকাভুক্ত থাকার পরও কিছু কিছু কৃষক ধান বিক্রি করতে পারেনি বলে স্বীকার করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন রাইস মিল মালিকদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করেন। মনোহরগঞ্জে কোনো রাইস মিল নেই তবে যেকোনো মিল মালিকদের কাছ থেকে চাল ক্রয় করার নির্দেশ রয়েছে। উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা এনাম আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে লাকসাম খাদ্যগুদামে নিয়মিত বসতে হয়। কারণ ধান চালের সঠিক মান নির্ণয় করার জন্য।
- ট্যাগ:
- বাংলাদেশ
- খাদ্য গুণাবলি
- লাকসাম