ফেসবুকে প্রেম, ঘনিষ্টতা, ফ্ল্যাটে যাওয়া, অতপরঃ...
পরিচয় ফেসবুকে। একজন টিভি তারকা। টিভি নাটকের জন্য বেশ জনপ্রিয়। প্রোফাইলে ছবি দেখেই তাকে ফ্রেন্ড রিক্যুয়েস্ট পাঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী অনিমা দাশ। চ্যাট হতো দীর্ঘ সময়। তারপর কথা হতো। একপর্যায়ে দু’জনের সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে। অনিমা তার সঙ্গে দেখা করতে চান। কিন্তু কিছুতেই দেখা দিতে চান না ওই তারকা। এর মধ্যেই নিজ থেকেই আসল ঘটনা প্রকাশ করেন তিনি। জানিয়ে দেন, তিনি কোনো তারকা নন। এটা একটা ফেক আইডি। তার নাম মাহমুদ হাসান। বাসা কুড়িলে। আমদানি রপ্তানির ব্যবসা করেন। ঘটনাটা এখানেই শেষ হতো পারতো। কিন্তু শেষ না হয়ে এখান থেকেই শুরু হয় ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের। মা-বাবা, ভাই-বোন নেই, মামার কাছে বড় হয়েছেন। উত্তরাধিকারী সূত্রে বিপুল সম্পত্তির মালিক তিনি। তিনটি ফ্ল্যাট আছে। একটিতে মামা থাকেন। সেখানে মামার সঙ্গে তিনিও থাকেন। বাকি দু’টি ভাড়া দেন। এভাবেই হাসান নিজেকে বিত্তশালী হিসেবে প্রকাশ করেন। দামি মোটরসাইকেল, কখনও দামি গাড়িতে চড়ে দেখা করতে যান অনিমার সঙ্গে। বেশ কয়েকবার দেখা করেন ধানমন্ডির বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে। এক পর্যায়ে অনিমাকে নিয়ে যান কুড়িলে। সেই ফ্ল্যাটে। গত বছরের শেষদিকের ঘটনা। তাদের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্টতার দিকে আগায়। এভাবেই শারীরিক সম্পর্কের শুরু। তারপর কখনও আবাসিক হোটেল, কখনও কক্সবাজার, রাঙামাটি..। কিন্তু মাঝে মাঝে উধাও হয়ে যেতেন হাসান। ফোন বন্ধ। ফিরতেন বেশ কয়েকদিন পরে। জানতে চাইলেও সন্তোষজনক জবাব মিলত না। এরমধ্যে হঠাৎ করেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে অনিমার। হাসানের ফোনে কল দিতেই রিসিভ করেন এক নারী। তিনি নিজেকে হাসানের স্ত্রী এবং দুই সন্তানের জননী বলে জানান। থাকেন বরিশালের বাকেরগঞ্জে। হাসান সম্পর্কে ওই নারী জানান, তিনি আগে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করতেন। এখন চাকরি নেই। জমি কেনা-বেচায় অন্যদের সহযোগিতা করে টাকা আয় করেন। এবার কুড়িলের ওই বাসায় যান অনিমা। কথিত সেই মামা বাসায় নেই। মামার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে ওই নারীর কথার সত্যতা পান। এটি ভাড়া বাসা। যিনি বাসায় থাকেন তিনি হাসানের মামা নন, বন্ধু। যোগাযোগ বন্ধ করে দেন হাসানের সঙ্গে। এবার হাসানের অন্য রূপ। সম্পর্ক রাখার দাবি। বিয়ে ছাড়াই এই সম্পর্ক থাকবে। সম্পর্ক রাখবেন না অনিমা। ধর্মের দেয়াল পেরিয়েই হাসানকে ভালোবেসে ছিলেন তিনি। সরলতা, বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে তার সর্বস্ব লুটে নিয়েছে হাসান। এবার অনিমাকে হুমকি দেয়া হয়। শারীরিক সম্পর্কের ভিডিওচিত্র রয়েছে হাসানের কাছে। আছে অসংখ্য ছবি। এগুলো ভাইরাল করে দেয়ার হুমকি দেন তিনি। দুশ্চিন্তায় পড়ে যান অনিমা। তবুও হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন না। ফোনে, ফেসবুকে তাকে ব্লক করেছেন। এবার অনিমার ঘনিষ্ঠদের ম্যাসেঞ্জারে নোংরা ছবি পাঠান হাসান। এমনকি ভিডিও’র স্ক্রিনশটও।নিরুপায় মেয়েটি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। দিন-রাত এক রুমে। কারও সঙ্গে কথা বলে না। বিষয়টি জানতে পারেন তার বড় বোন। পরবর্তীতে বড় বোনের বন্ধুর মাধ্যমে জিডি করেন হাজারীবাগ থানায়। থানা হয়ে ডিএমপি’র সিটিটিসি’র সাইবার সিকিউরিটি এন্ড ক্রাইম বিভাগে। অতঃপর গ্রেপ্তার করা হয় হাসানকে। জব্দ করা হয় ভিডিও, ছবি। অনিমা সাহস নিয়ে আইনি সেবা নিলেও অনেকেই থানা পুলিশ মুখো হন না। এমনকি পুলিশের সহযোগিতা নিয়েও মামলা পর্যন্ত যেতে চান না সামাজিক কারণে। সিটিটিসি’র সাইবার ক্রাইম বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায় ৭০ ভাগ অভিযোগই হচ্ছে ফেসবুক কেন্দ্রিক। ব্যক্তিগত বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করেই এসব ঘটনার উৎপত্তি। পরবর্তীতে পুলিশের সহযোগিতা নেন ভুক্তভোগীরা। অনেক ক্ষেত্রে সাইবার সিকিউরিটি এন্ড ক্রাইম বিভাগের সহযোগিতা নিয়েও শেষ পর্যন্ত মামলা করেন না তারা। এ বিষয়ে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. নাজমুল ইসলাম জানান, এ ধরণের অভিযোগ পেলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করি। তবে সামাজিক কারণে নির্যাতিতারা মামলা পর্যন্ত যেতে চান না বলে জানান তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতার ক্ষেত্রে সবাইকে সচেতন হওয়ার পরার্মশও দেন তিনি।