উগ্রপন্থা ও মবের বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত জনমত
মানুষের মনের ভেতর যে দম বন্ধ হয়ে আসা অস্বস্তি প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে চাপা পড়েছিল, সেটা যেন হঠাৎ করেই প্রকাশ পাওয়ার পথ পেয়ে গেল। ক্ষোভগুলোও যেন উগরে দেওয়ার একটা পথ হঠাৎ সামনে এসে দাঁড়াল। ফলে অনেকটাই ভয়হীন, দ্বিধাহীনভাবে মানুষ তাদের মনের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে শুরু করেছে। প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানট, উদীচী অফিসে হামলা ও আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় মানুষের প্রতিবাদের রাস্তাটা যেন হঠাৎ খুলে দিল।
এর আগে বছরজুড়েই তো দেশের বিভিন্ন স্থানে মব হয়েছে, সন্ত্রাস হয়েছে, মানুষ হতাশ হয়েছে, আতঙ্কিত হয়েছে, ক্ষুব্ধও হয়েছে; কিন্তু সেই ক্ষোভ প্রকাশ করেনি বা করতে পারেনি। এভাবে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদও গড়ে ওঠেনি। অথচ যেকোনো গণতান্ত্রিক সমাজেই যেকোনো অসংগতি নিয়ে প্রতিবাদ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ–বিক্ষোভ স্বাভাবিক ঘটনা। সেই স্বাভাবিকতাটাই যেন হারিয়ে বসেছি আমরা।
ময়মনসিংহের ভালুকায় পোশাক কারখানার কর্মী দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে মেরে গাছে ঝুলিয়ে আগুনে পুড়িয়ে ফেলার ঘটনা, লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতার বাড়িতে ঘরে তালা দিয়ে আগুন ধরিয়ে বাবা–মার সামনেই শিশু আয়েশাকে পুড়িয়ে মারার ঘটনা কেবল দেশেরই নয়, বিশ্বের বিবেককেও নাড়া দিয়েছে। দীপু দাসের ঘটনাটি তো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের মনোযোগ কেড়েছে। পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়ে এত দিন খুব বেশি সরব ছিল না। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি কিংবা তাঁর প্রতি একধরনের আস্থার কারণেই হয়তো বা তাঁরা ‘দেখি, অপেক্ষা করি’ নীতি বেছে নিতে চাইতেন। এবার যেন তাঁদের সেই ‘দেখার, অপেক্ষার’ পালায়ও চিড় ধরেছে।
প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানটে হামলা চালাতে গিয়ে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায়, এমনকি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হাত গুটিয়ে বসে থেকে নৈরাজ্য ঘটতে দিয়েছে—তার প্রতিবাদে কোনো রাজনৈতিক দল কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে আসেনি। হতে পারে বর্তমানের সব রাজনৈতিক দলই নিজেদের ক্ষমতার অংশীজন ভাবে, কিংবা তারা অংশীজন বলেই এই নৈরাজ্যের কিংবা নৈরাজ্য দমনে সরকারের নিস্পৃহতার বিরুদ্ধে কোনো শক্ত প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।
- ট্যাগ:
- মতামত
- উগ্রপন্থা
- মব জাস্টিস