রাজনীতির দাবার ছকে হারছে কে?
নির্বাচনের বাঁশি বাজার আগ মুহূর্তে বাংলাদেশের বাতাস যেন এক অজানা আতঙ্কে ভারী হয়ে উঠেছে। রাজপথের উত্তাপ, চায়ের কাপে ঝড় আর সংবাদ শিরোনাম সব ইঙ্গিত দিচ্ছে এক অস্থির সময়ের। প্রশ্ন হলো, কেন প্রতিবার ভোটের আগে এই আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ ঘটে? কেন গণতান্ত্রিক উৎসবের নামে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা গৌণ হয়ে যায়? এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির নেপথ্যে যে অদৃশ্য কলকাঠি নাড়া হচ্ছে, তার স্বরূপ সন্ধানে নামলে বেরিয়ে আসে ক্ষমতার জটিল দাবার চাল। বিগত কয়েক দশকের রাজনৈতিক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, যখনই দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে আস্থার সংকট চরমে পৌঁছেছে, তখনই তৃতীয় কোনো ‘অগণতান্ত্রিক শক্তি’র উদয় হয়েছে।
বর্তমানে জ্বালাও-পোড়াও এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি কি তবে সেই ইতিহাস পুনরাবৃত্তির ছক? বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে যে অস্থিরতা ও আস্থার সংকট লক্ষ করা যাচ্ছে, তা সাধারণ মানুষের দুশ্চিন্তাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। খেলাপি ঋণের পাহাড় আর তারল্য সংকটের মধ্যে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা যোগ হওয়া মানে হলো, সাধারণ আমানতকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়া। রাজনীতির উত্তাল ঢেউ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে গ্রাস করছে। যখন অস্থিরতা, তখনই পরীক্ষা পেছানো বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। সেশনজট আর পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট হওয়া মানে, একটি প্রজন্মের জীবন থেকে মূল্যবান সময় হারিয়ে যাওয়া। রাজনৈতিক দলাদলি যখন শ্রেণিকক্ষ পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তখন শিক্ষার গুণগত মান তলানিতে যায় এবং সাধারণের ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ফিকে হয়ে আসে। একজন বিদেশি বায়ার যখন দেখেন যে, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তার কাজ সঠিক সময়ে ডেলিভারি হবে না, তখন তিনি অন্য দেশের দিকে ঘুরে যান। এই নীরব অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধারণ তরুণদের স্বাবলম্বী হওয়ার পথে বড় বাধা।
- ট্যাগ:
- মতামত
- গণতান্ত্রিক