ফুসফুসের নীরব শত্রু : রেসপিরেটরি সিনসিশিয়াল ভাইরাস
মানবজাতির ইতিহাসে এমন অনেক রোগজীবাণু রয়েছে যারা নীরব ঘাতকের মতো আমাদের সমাজে এসেছে এবং দুর্বলদের সবচেয়ে বেশি আক্রমণ করছে। রেসপিরেটরি সিনসিশিয়াল ভাইরাস বা RSV (Respiratory syncytial virus) তেমনই একটি রহস্যময় এবং অত্যন্ত সংক্রামক জীবাণু, যা প্রায় প্রতিটি শিশুকে তাদের জীবনের প্রথম দুই বছরের মধ্যে একবার হলেও সংক্রমিত করে। এটি এমন একটি ভাইরাস যার নাম হয়তো অনেকেই শোনেননি, কিন্তু এটি বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর লাখ লাখ শিশুর ফুসফুসে মারাত্মক সংক্রমণ ঘটিয়ে চলেছে।
১৯৫৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক তখন শ্বাসতন্ত্রের রোগ নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছিলেন। তাদের মূল গবেষণার বিষয় ছিল সাধারণ সর্দি-কাশির জীবাণু নিয়ে। সেই সময় তারা হঠাৎ এমন একটি ভাইরাস খুঁজে পান, যা অসুস্থ শিম্পাঞ্জিদের মধ্যে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ ঘটাচ্ছিল।
এই নতুন ভাইরাসটিকে প্রথমে তারা নাম দিয়েছিলেন ‘শিম্পাঞ্জি কোরিজা এজেন্ট’ বা CCA (Chimpanzee Coryza Agent)। এটিই ছিল মানব ইতিহাসে RSV-এর প্রথম দেখা পাওয়ার ঘটনা।
এর ঠিক এক বছর পর ১৯৫৭ সালে, আরেকজন বিখ্যাত আমেরিকান ভাইরাস বিশেষজ্ঞ, রবার্ট এম. চ্যানক (Robert M. Chanock), ঠিক একই ধরনের ভাইরাস খুঁজে পান শিশুদের মধ্যে। এই শিশুরা তখন গুরুতর শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিল।
গবেষকরা দ্রুত বুঝতে পারলেন যে শিম্পাঞ্জিদের মধ্যে পাওয়া CCA এবং শিশুদের মধ্যে পাওয়া এই ভাইরাস আসলে একই। যেহেতু এটি ফুসফুসের কোষগুলো একসাথে মিশে গিয়ে বা ফিউজড হয়ে বড়, বহুকোষী কাঠামো তৈরি করে, যাকে বলা হয় 'সিনসিশিয়া' (Syncytia), তাই এর নাম দেওয়া হলো রেসপিরেটরি সিনসিশিয়াল ভাইরাস (RSV)। এভাবে আমেরিকাতেই এর প্রথম বৈজ্ঞানিক শনাক্তকরণ সম্পন্ন হয়, যদিও এর অস্তিত্ব বিশ্বের বহু দেশেই আগে থেকে ছিল।
রেসপিরেটরি সিনসিশিয়াল ভাইরাস (RSV) হলো, এক প্রকার আরএনএ (RNA) ভাইরাস, যা Pneumoviridae পরিবারের অন্তর্গত।
প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে রেসপিরেটরি সিনসিশিয়াল ভাইরাস
রেসপিরেটরি সিনসিশিয়াল ভাইরাস অত্যন্ত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এটি বিভিন্ন ভাগে মানবদেহে প্রবেশ করতে পারে।
শ্বাসযন্ত্রের ফোঁটা (Respiratory Droplets)-এর মাধ্যমে RSV সবচেয়ে বেশি ছড়ায়। সংক্রামিত ব্যক্তি যখন হাঁচি বা কাশি দেন, তখন ভাইরাসসহ কণাগুলো বাতাসের মাধ্যমে বা সরাসরি সংস্পর্শের মাধ্যমে অন্য ব্যক্তির চোখ, নাক বা মুখে প্রবেশ করে।
এছাড়াও ভাইরাসটি খেলনা, দরজার হাতল বা যেকোনো কঠিন বস্তুর ওপর কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। সেই বস্তু স্পর্শ করার পর মুখ, নাক বা চোখ স্পর্শ করলে সংক্রমণ ঘটে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- ভাইরাস
- ফুসফুসের রোগ