আমেরিকা কী শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্বের দেশ হতে যাচ্ছে!

যুগান্তর আমেরিকা / যুক্তরাষ্ট্র আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু প্রকাশিত: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬:২২

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়ন করে আমেরিকানদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে ‘মেইক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ (মাগা)-এর পাশাপাশি ‘মেইক আমেরিকা হোয়াইট অ্যাগেইন’ লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন বলে অনেকে সন্দেহ পোষণ করতে শুরু করেছেন। যদিও আমেরিকা কখনো একচেটিয়াভাবে শ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত ছিল না, কিন্তু যখনই যুক্তরাষ্ট্রে কোনো রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন, তখন ‘হোয়াইট সুপ্রিমেসি’ বা শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্বের প্রবক্তারা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে এ ধরনের চরম বর্ণবাদী অপচেষ্টা দেখা গেছে, তার দ্বিতীয় মেয়াদেও ক্ষমতার কাঠামোতে, এমনকি সামাজিক দিক থেকেও শ্বেতাঙ্গরা অশ্বেতাঙ্গদের ওপর প্রাধান্য বিস্তার, এমনকি বিদ্বেষ পোষণ করার সুযোগ হাতছাড়া করে না। ভারতীয় উপমহাদেশসহ এশিয়া ও আফ্রিকার বহু দেশ যখন ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল, তখন ব্রিটিশ ক্লাব, অনেক রেস্টুরেন্টের প্রবেশপথেই সাইনবোর্ড টানানো থাকত ‘নেটিভস অ্যান্ড ডগস আর নট অ্যালাউড’ অথবা ‘ব্ল্যাকস অ্যান্ড ডগস আর নট অ্যালাউড’। বিশ শতকের শুরুর দিকেও আমেরিকায় একইভাবে বিভিন্ন স্থাপনা-যেমন ক্লাব রেস্টুরেন্ট, এমনকি পার্কের প্রবেশপথে বোর্ড টানানো থাকত, ‘নো নিগারস, ডগস অ্যান্ড মেক্সিকানস অ্যালাউড’ অথবা ‘উই সার্ভ হোয়াইটস অনলি, নো হিসপানিকস অর মেক্সিকানস’।


যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রশাসনের অনেক কর্মসূচি বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এ বিশ্বাস ছড়িয়ে দিতে উদ্বুদ্ধ করছে যে, শ্বেতাঙ্গরা যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্য বজায় রাখা নিশ্চিত করছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা পিতাদের আগেও অনেকটা উহ্যভাবে হলেও মনোজগতে তাদের গৃহীত ও নীতির কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে ছিল; কিন্তু এখন আমেরিকানা তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে মুখর ও কোনোকিছু রাখঢাক না করে কথা বলার মতো একজন প্রেসিডেন্ট পেয়েছে, যার বোলচাল ও অঙ্গভঙ্গি থেকে কারও পক্ষে উপলব্ধি করা কঠিন হয় না যে, তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী এবং তিনি আমেরিকাকে কোন দিশায় নিয়ে যেতে চান। যদিও বর্ণবাদী আচরণ ‘হেইট ক্রাইম’বিষয়ক আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ, কিন্তু কেউ যদি তার মনের মধ্যে শ্বেতাঙ্গবিরোধী বর্ণবাদ পোষণ করে আমেরিকান ‘সিভিল লিবার্টি’র সুযোগ নিয়ে তার ব্যক্তিগত স্থাপনা থেকে অশ্বেতাঙ্গদের বাইরে রাখতে চায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কোনো কঠোর আইন প্রয়োগ করার সুযোগ কম।


মিশিগান রাজ্যের ডেট্রয়েট সিটির এক হাউজিং প্রজেক্টে শ্বেতাঙ্গ ভাড়াটেরা কৃষ্ণাঙ্গদের তাদের হাউজিংয়ে কোনো অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া দেওয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। বিষয়টি আদালতে গড়ায় এবং বর্ণবিদ্বেষবিরোধী আইনে বিষয়টি নিষ্পত্তি করেন। দাসপ্রথা নিষিদ্ধ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আমেরিকায় দাস আইনে শ্বেতাঙ্গ এবং কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে বিরাট পার্থক্য বজায় রাখা হয়তো অনিবার্য ছিল। কিন্তু আজকের আমেরিকায় ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সব নাগরিকের সমানাধিকার নাগরিক অধিকার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা হওয়া সত্ত্বেও বহু শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান তাদের শ্রেষ্ঠত্বের বিশ্বাসের গণ্ডি থেকে নিজেদের বের করে আনতে পারেনি। তাদের মাথায় এখনো প্রবেশ করে না যে, আমেরিকান জনগণের ১৫ শতাংশের বেশি হলো কৃষ্ণাঙ্গ, বাদামিসহ বিভিন্ন জাতিধর্মের মানুষ। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার শরীরের রং বিবেচনায় মাত্র ২০ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ এবং ৮০ শতাংশই অশ্বেতাঙ্গ, যাদের সঙ্গে শ্বেতাঙ্গদের অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, কূটনৈতিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য। সে ক্ষেত্রে কিছু শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান সুপারমেসিস্টের পক্ষে ইতিহাসের চাকা যে আবারও উলটো দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়, তাদের বর্ণবাদী মন তা সায় দেয় না। কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হচ্ছেন, সেক্রেটারি অফ স্টেটের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতাধর হিসাবে কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানরা নিয়োগ লাভ করছেন; কৃষ্ণাঙ্গরা বিভিন্ন পর্যায়ের আদালতের বিচারক হিসাবে শ্বেতাঙ্গ অপরাধীদের বিচার করে শাস্তি বিধান করছে, নিউইয়র্ক সিটিসহ যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় সিটির মেয়র পদে ভোটাররা কৃষ্ণাঙ্গ ও বাদামি আমেরিকানদের নির্বাচিত করছে, তা বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গদের নিদারুণ মনোকষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।


শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদাররা, এমনকি এটাও মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রকে গড়ে তুলতে শ্বেতাঙ্গ ছাড়া অন্যান্য বর্ণের কমিউনিটিগুলোর ইতিহাস ও অবদানকে খাটো করে দেখানো এবং প্রয়োজনে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার প্রয়োজন রয়েছে। এর অংশ হিসাবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন অশ্বেতাঙ্গ অবৈধ অভিবাসীদের দ্রুততার সঙ্গে বেশিসংখ্যককে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার এবং কঠোর বিধিনিষেধমূলক অভিবাসন নীতি গ্রহণের মধ্য দিয়ে অশ্বেতাঙ্গ, তা আফ্রিকান দেশগুলোর কৃষ্ণাঙ্গ হোক অথবা এশিয়ান দেশগুলোর বাদামি হোক, তাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ হ্রাস করেছে এবং পাশ্চাত্যের ‘সুন্দর’ দেশগুলোর শ্বেতাঙ্গ অভিবাসীদের বিশেষাধিকার দিয়েছে। কয়েক মাস আগে ট্রাম্প গুরুত্ব সহকারে বলেন, ‘আমাদের একটি বৈঠকে আমি বলেছি, আমরা কেবল নোংরা দেশগুলো থেকে লোকজনকে গ্রহণ করছি কেন? আমাদের দেশে মাত্র কিছুসংখ্যক ছাড়া নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্কের লোকজন নেই কেন? আপনারা আমাদের দেশে কিছু ভালো মানুষ পাঠান। কিন্তু আমরা সবসময় সোমালিয়া থেকে লোকজনকে গ্রহণ করছি। যেসব দেশ বিপর্যস্ত, সেসব দেশের লোক নিচ্ছি। এসব দেশ নোংরা, জঘন্য, অপরাধে পরিপূর্ণ। একটি কাজেই তারা পারদর্শী, তা হলো, সমুদ্রে জাহাজ আটকানো।’ ট্রাম্পের বক্তব্যেই স্পষ্ট, তিনি কেমন মানুষের আমেরিকা চান।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও