হাদির প্রাণনাশের চেষ্টা : ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত

যুগান্তর ড. মাহবুব উল্লাহ প্রকাশিত: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩:০৬

জুলাই অভ্যুত্থানের অগ্নিসন্তান ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গত শুক্রবার ১২ ডিসেম্বর পৃথিবী থেকে চিরতরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রকাশ্যে গুলি চালিয়েছে এক আততায়ী। হাদির অবস্থা সংকটাপন্ন। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিনই তার ওপর ভয়াবহ এ হামলা হয়।


শরিফ ওসমান হাদি হয়ে উঠেছিলেন একজন অনলবর্ষী বক্তা। জুলাই অভ্যুত্থানের আদর্শগত স্বরূপ রচনায় তার মতো সপ্রতিভ মানুষ খুব কমই আছে। হাদির খুব একটা বয়স হয়নি। বিয়ে করার পর তার এক সন্তানের জন্ম হয়েছে। এ সন্তানটিকে তিনি প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসেন। হাদি সম্প্রতি অজানা ব্যক্তিদের কাছ থেকে মোবাইল ফোনে হত্যার হুমকি পাচ্ছিলেন। তার মন শঙ্কায় ভরে উঠেছিল। শুধু হাদি নন, জুলাই যোদ্ধাদের অনেকেই আশঙ্কা করেন তাদের প্রাণে মেরে ফেলা হতে পারে। এটা বোঝার জন্য রকেট সায়েনটিস্ট হওয়ার প্রয়োজন নেই। রাজনৈতিক দলগুলো যখন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার ক্ষমতার আসনকে টলাতে পারছিল না, তখন জুলাইযোদ্ধারা অত্যন্ত সৃজনশীল কৌশলে শিকড় গজানো সাড়ে পনেরো বছরের দুঃশাসনকে উচ্ছেদ করে ছাড়ল। স্বর্গরাজ্য থেকে শেখ হাসিনা এবং তার আশ্রিত ও প্রশ্রয়প্রাপ্ত অলিগার্কদের পতন হলো। বেরিয়ে এলো অত্যাচার, উৎপীড়ন, গুম, খুন, আয়নাঘরে আটক এবং দেশ থেকে লাখো কোটি টাকা পাচারের চাঞ্চল্যকর কাহিনি।


আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনা ও তার পতিত দোসররা কী করে এ পরাজয় সহ্য করতে পারে! তারা তাদের কৃতকর্মের জন্য মোটেও অনুতপ্ত নয়, দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়া তো দূরের কথা। তারা হারানো স্বর্গ ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই তারা দেশবাসীকে নানারকম হুমকি দিচ্ছে। দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা নাকি দেশে ফিরে আসবেন। আবারও প্রধানমন্ত্রিত্বের কুরসিতে বসবেন। যে গণভবনকে জুলাই জাদুঘরে পরিণত করা হয়েছে, সেই জাদুঘর উচ্ছেদ করে সেখানে আবার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন চালু করবেন।


বিদেশে পলাতক আওয়ামী লীগারদের অন্যতম মুখপাত্র নিঝুম মজুমদার বিদেশ থেকে ডাক দিয়েছেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ও জুলাই যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ শুরু করার। এ নিঝুম মজুমদারই তত্ত্ব সাজিয়েছেন কীভাবে মেটিকুলাস প্ল্যান করে শেখ হাসিনার রিজিমকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এমনই পরিস্থিতিতে শরিফ ওসমান হাদির প্রাণনাশের প্রচেষ্টাকে হালকাভাবে নেওয়া যায় না।


শেখ হাসিনা ও আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা আগামী ২০২৬-এর ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে বদ্ধপরিকর। এ উদ্দেশ্যে নির্বাচনে প্রার্থী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের হত্যা করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে। আরও জানা গেছে, ভারত থেকে ৮০ জন খুনিকে বাংলাদেশে প্রবেশ করানো হয়েছে। এদের কাজ হবে একের পর এক গুপ্তহত্যা করে সন্ত্রাস সৃষ্টি করা এবং নির্বাচন ভণ্ডুল করা। নির্বাচনটি যথাসময়ে সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হলে বাংলাদেশ অনেকটাই স্থিতিশীলতার পথে অগ্রসর হবে। আর তা যদি সম্ভব হয়, তাহলে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের ষড়যন্ত্র ও অপপ্রয়াস ভেস্তে যাবে।


পত্র-পত্রিকায় হাদির নাম এবং বক্তব্য বেশ কিছুদিন ধরেই দেখেছি। কিন্তু হাদির সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত কোনো পরিচয় হয়নি। হাদিকে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি দেখতে পেয়েছি দৈনিক যুগান্তরের এক গোলটেবিল বৈঠকে। সেদিন হাদি খুব স্পিরিটেড বক্তব্য দিয়েছিল। অবশ্য যখনই সে বক্তব্য দেয়, তা হৃদয়-মনকে নাড়া দিয়ে যায়। গোলটেবিল বৈঠকের দিনে অনুষ্ঠানটির পর হাদির সঙ্গে আমার সরাসরি পরিচয় ও কথা হয় যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই শিকদারের অফিসে। হাদি আমাকে জানাল যে, সে আমাকে অনেক দিন ধরেই জানে। বঙ্গভঙ্গের ওপর আমার লেখাটি তার খুব পছন্দের বলে সে জানাল। তার সংগঠনের নাম ‘ইনকিলাব মঞ্চ’।


আমি জানতে চাইলাম ইনকিলাব মঞ্চের সঙ্গে দৈনিক ইনকিলাবের কোনোরকমের সম্পর্ক আছে কিনা? হাদি জানাল, দৈনিক ইনকিলাবের সঙ্গে ইনকিলাব মঞ্চের কোনো যোগাযোগ নেই। আসলে জুলাই অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ স্লোগানটি ব্যাপকতা লাভ করেছে। ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ স্লোগানটি প্রথম উচ্চারণ করেছিল ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি। ১৯৪৮-এ এই পার্টি একটি বিপ্লব সংগঠিত করতে চেয়েছিল। তখন তাদের স্লোগান ছিল, ‘ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়, লাখো ইনসান ভুখা হ্যায়।’ এর পাশাপাশি এ পার্টি স্লোগান তুলেছিল ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’। অর্থাৎ বিপ্লব জিন্দাবাদ। বাংলাদেশে একশ্রেণির বুদ্ধিজীবী এ স্লোগানটিকে প্রতিক্রিয়াশীল স্লোগান মনে করে। কারণ এটি বাংলা ভাষায় নয়। কিন্তু এ স্লোগানের মধ্যে যে অপরিসীম শক্তি রয়েছে, তা কি অস্বীকার করা যাবে?


শরিফ ওসমান হাদি তার বিভিন্ন বক্তব্যে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়া ও খালেদা জিয়ার প্রশংসা করেছেন। তার দৃষ্টিতে এ দুজন নেতাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আপসহীন। সে কারণেই তারা প্রাতঃস্মরণীয়। হাদি আরও বলেছেন, সমালোচনা করতে গিয়ে বিএনপিকে কোণঠাসা করা যাবে না। বিএনপিকে কোণঠাসা করলে জাতীয়তাবাদী শক্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হাদির এ প্র্যাগমেটিক অবস্থান প্রশংসনীয়। হাদি আরও মনে করেন বাংলাদেশের বিদ্যমান সংবিধান ছুড়ে ফেলতে হবে অথবা আগাগোড়া এর সংস্কার সাধন করতে হবে। তার নিজের যুক্তিকে শক্তিশালী করার জন্য তিনি ৭২-এর সংবিধান নিয়ে খালেদা জিয়ার একটি উদ্ধৃতি প্রদান করেন। এ উদ্ধৃতিতে খালেদা জিয়া বলেছেন, এ সংবিধান ছুড়ে ফেলে দিতে হবে। তাহলে হাদির দোষটা কী?

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও