দেশবাসীর মানবাধিকার সুনিশ্চিত হোক
জাতিসংঘের উদ্যোগে প্রতিবছরের মতো এ বছরও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালিত হচ্ছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে : ‘Our Everyday Essentials’। প্রতিবছর বাংলাদেশে মানবাধিকার দিবস পালিত হলেও দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হচ্ছে না। বরং এখানে মানবাধিকারের চিত্র ভয়াবহ; যার প্রমাণ পাওয়া যায় মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন কমপক্ষে ৪০ জন; আইনি হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর শিকার হয়েছেন ২৮ জন; মব ভায়োলেন্সের শিকার হয়ে মারা গেছেন ১৬৫ জন। প্রতিবেদনেগুলোয় ২০২৪-এর আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রায় ৮ হাজার রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে; যেসব ঘটনায় মারা গেছেন ২৮১ জন। অধিকারের পরিসংখ্যানে ২০০৯ থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার উচ্চ প্রবণতা প্রকাশ পেয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ১৪ হাজার ৮৩টি ধর্ষণের ঘটনা এবং ৪ হাজার ৪৮৯টি যৌতুক-সম্পর্কিত সহিংসতার ঘটনা। আর সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, সাংবাদিকরা উল্লেখযোগ্যভাবে হয়রানির সম্মুখীন হয়েছেন।
২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৩৫১টি ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে, যার মধ্যে ১০৯টি শারীরিক আক্রমণের ঘটনা রয়েছে। গত বছর অধিকারের অপর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২০০৯-২০২৩ সাল পর্যন্ত শাসনামলে দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ২ হাজার ৬৯৯ জন, গুম হন ৬৭৭ জন, কারাগারে মারা যান ১ হাজার ৪৮ জন। আর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের তালিকাসহ ২০২৪ সালের ঘটনা যুক্ত করলে নিহতের সংখ্যা হবে ৩ হাজার। অধিকারের পরিসংখ্যান বলছে, আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার বছর ২০০৯ সালে হত্যার শিকার হন ১৫৪ জন। এছাড়া ২০১০ সালে ১২৭, ২০১১ সালে ৮৪, ২০১২ সালে ৭০ জনকে হত্যা করা হয়। নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩২৯-এ। আর নির্বাচনের বছর ২০১৪ সালে ১৭২, ২০১৫ সালে ১৮৬, ২০১৬ সালে ১৭৮, ২০১৭ সালে ১৫৫ জনকে হত্যা করা হয়। ২০১৮ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছর বিচারবহির্ভূত হত্যা করা হয় ৪৬৬ জনকে। ২০১৯ সালে ৩৯১, ২০২০ সালে ২২৫ জনকে হত্যা করা হয়। ২০২১ সালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারির পর তা কমে ১০৭ জন, ২০২২ সালে ৩১ এবং ২০২৩ সালে ২৪ জন বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হন।
- ট্যাগ:
- মতামত
- মানবাধিকার
- মানবাধিকার কমিশন