‘দেশের পক্ষ নিয়েছি’: সাঁওতাল মুক্তিযোদ্ধা জসেব মার্ডির দুঃসাহসিক যুদ্ধজীবন

বিডি নিউজ ২৪ খান মো. রবিউল আলম প্রকাশিত: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩:৩৭

‘আমরা মুক্তিযোদ্ধারা ভাই হিসেবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছি। আমাদের দলে মুসলমান, হিন্দু, সাঁওতাল ছিল; কোনো আলাদা পরিচয়ে কেউ কাউকে বিবেচনা করিনি। এক থালিতে ভাত খেয়েছি, এক গ্লাসে পানি খেয়েছি। কোনো বিভেদ ছিল না। একটি স্বাধীন দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি। চেয়েছি দেশটা স্বাধীন হোক’— কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহী জেলার তানোর উপজেলার নবনবী গ্রামের সাঁওতাল মুক্তিযোদ্ধা শ্রী জসেব মার্ডি (৭৫)। তিনি সনদপ্রাপ্ত ও নিবন্ধিত মুক্তিযোদ্ধা।


জসেব মার্ডি যুদ্ধ করেছেন ৭ নম্বর সেক্টরে। ৭ নম্বরের অবস্থান ছিল দিনাজপুর জেলার দক্ষিণাঞ্চল, বগুড়া, রাজশাহী ও পাবনা জেলা নিয়ে। তানোর উপজেলায় নিবন্ধিত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৪৬ জন। তাঁদের মধ্যে ১২-১৩ জন সাঁওতাল সম্প্রদায়ের। সাঁওতাল মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকে বেঁচে নেই। যাঁরা বেঁচে আছেন, তাঁদের মধ্যে শ্রী জসেব মার্ডি একজন। কিছুদিন আগে জসেব মার্ডির সঙ্গে কথা হচ্ছিল তাঁর গ্রামে, তাঁরই খেতের আইলে বসে।


জসেব মার্ডি বলছিলেন, ১৮-২০ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন তিনি। তখন কেবল বিয়ে করেছেন। নতুন সংসার। একদিকে সংসারের পিছুটান, অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধ। কোন পক্ষ নিলেন তিনি? জসেব মার্ডির উত্তর, আমি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ নিলাম, দেশের পক্ষ নিলাম। আমি স্ত্রীকে বললাম, একটি সংসারের চেয়ে হাজার হাজার সংসার মিলে যে দেশ, তার বেঁচে থাকাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতার চেয়ে বড় পাওয়া একটি জাতির জন্য আর কিছু হতে পারে না।


সংসারের টানাপোড়েনে এ বীর মুক্তিযোদ্ধা লেখাপড়া করতে পারেননি। কিন্তু উপলব্ধি করেছেন, এ দেশের মানুষের একটি দেশ লাগবে, একটি মানচিত্র লাগবে। তাহলেই এ দেশের মানুষ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।


বীর মুক্তিযোদ্ধা জসেব মার্ডি জানান, তাঁর বাবার বসতভিটা ছিল রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার কাঁকনহাটের দরগাপাড়ায়। সেখানে রয়েছে তাঁর শৈশবস্মৃতি। কাঁকনহাটের ঐতিহ্যবাহী মেলার কথা বলতে গিয়ে তাঁর গলা ধরে আসছিল। মুড়িমুড়কি, গান-বাজনা, সার্কাস ও যাত্রাপালা—কত কিছু ছিল সেই মেলায়। মেলায় খুব মজা করতেন।


জীবনের তাগিদে জন্মস্থান গোদাগাড়ী উপজেলা থেকে তানোর উপজেলায় আসেন। কিন্তু সঙ্গে আগলে রেখেছেন শৈশবের স্মৃতি। মুক্তিযুদ্ধ তাঁর জীবনে সবচেয়ে জ্বলজ্বলে স্মৃতি। এ স্মৃতি তাঁকে বেঁচে থাকার শক্তি জোগায়। তিনি জানান, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথা স্মরণ হলে আমি তরুণ হয়ে উঠি। ভেতরে শিহরণ জাগে। নিজের কাছে অবিশ্বাস্য লাগে, কীভাবে এত দুঃসাহসিক যুদ্ধটা করলাম। সাহস আর দেশের প্রতি ভালোবাসা ছাড়া বিশেষ কোনো সম্বল আমার ছিল না। তারপরেও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লাম।


গত শতাব্দীর সত্তরের দিকে তানোর উপজেলার নবনবী গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে এসে জবেস মার্ডি থিতু হন। তানোর উপজেলার কালিগঞ্জ হাটের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া শিব নদের পাশে বাঁধ নির্মাণের কাজে অংশ নিতে এসে এখানে থেকে যাওয়া।


জসেব মার্ডি জানান, মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে বিরোধী পক্ষ তাঁদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। তাঁরা প্রাণভয়ে ভারতে চলে যান। একপর্যায়ে দেশে ফিরে আসেন। জানতে পারেন, মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে আগ্রহীদের নাম সংগ্রহ করা হচ্ছে। অনেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন। আমি তখন তরুণ, টগবগে রক্ত। যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়ার ঘটনা আমাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করল। তানোরের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মাদারীপুর গ্রামের অধিবাসী মো. নূরুল ইসলাম তত্ত্বাবধানে আমি মুক্তিযোদ্ধা দলে নাম লেখালাম।


তিনি ভারতের গৌড় এবং শিলিগুড়িতে এক মাসের প্রশিক্ষণ নেন। কয়টি সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন জানতে চাইলে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা জানান, মূলত ফাইটগুলো হতো রাতের বেলায়। কতজন মুক্তিযোদ্ধা বা কতজন শত্রুপক্ষের লোক মারা গেল, তা অনেক সময় জানা যেত না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও