বয়ঃসন্ধিকাল : অজ্ঞতা ও অসচেতনতা থেকেই বিপদের শুরু
নভেম্বর ২৫ থেকে শুরু হয়েছে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ বা 16DaysOfActivisim. বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর দিবসটি নানাধরণের আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হয়। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। এবছরের প্রতিপাদ্য ’ডিজিটাল মাধ্যমে সহিংসতা বন্ধ করা’। যদিও নানান দিবস উদ্যাপন ও আইন-কানুন প্রণীত হওয়ার পরেও বাংলাদেশে নারী বা মেয়েদের পরিস্থিতি এখনো বিপর্যস্ত।
নারীর চাওয়া-পাওয়ার বিষয়টি উপেক্ষিতই রয়েছে। নারী স্বাস্থ্য, প্রজনন স্বাস্থ্য, নারীর চাহিদা, মনের আনন্দ, রাজনৈতিক-সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার এবং সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম সবই এখনো সীমিত। এই মুহূর্তে আমি ডিজিটাল মাধ্যমে নারীর প্রতি সহিংসতার বিষয়টি নিয়ে লিখছি না। তবে নারী বা অল্পবয়সী মেয়েরা কীভাবে এই সহিংসতার ফাঁদে পা রাখছে, এই বিষয়ে কিছু পরোক্ষ কারণ নিয়ে কথা বলছি।
এদেশের মেয়েরা বিশেষ করে কৈশোরে প্রজনন স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্যবিধি ও নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে অনেকটাই অজ্ঞ থাকে। যতটুকু জানে এর অধিকাংশই সোশ্যাল মিডিয়া, ইউটিউব ও বন্ধুদের কাছ থেকে। এইসব তথ্য সবসময় ঠিক হয় না। কোন কোন সময় ভুল ও অপতথ্যও দেয়া হয়। খুব বয়সে যখন সালমা (ছদ্মনাম) বিয়ে হয়েছিল, তখনও ঋতুকাল সম্পর্কে সে ঠিক মতো জানতো না। জানতো না যে এই সময়টায় তার কী করা দরকার, স্বামী সহবাস করা যাবে কিনা, তাকে কতটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
শুধু ঋতুকাল কেন, তার দেহের আরো অন্যান্য পরিবর্তন নিয়েও রাবেয়ার কোনো ধারণা ছিল না। এতসব অজানা বিষয় ও ভয় নিয়ে সে যখন স্বামীর সংসারে গিয়েছিল, তখনো কেউ তাকে কিছু জানায়নি। অসহায় সালমা একমাত্র আশ্রয় ছিল ঘরে বসে চুপিসারে কান্নাকাটি করা, আর গ্রামের এক বান্ধবীর বুদ্ধি-পরামর্শ। তার সিনিয়র এই সখী তাকে বিভিন্নরকম তথ্য দিতো ইউটিউব দেখে, যা রাবেয়ার বোঝার পক্ষে বেশ কঠিন ছিল।
একইভাবে গুলমোহর যখন ১২ বছর বয়সে তার প্যান্টিতে রক্তের ফোঁটা দেখেছিল, তখন সে ভয়ে চিৎকার করে কেঁদে উঠেছিল। ভেবেছিল তার ভয়াবহ কোনো অসুখ করেছে। দৌড়ে বাবার কাছে গিয়ে এই ভয়ের কথা বলেছিল। সালমা ও গুলমোহর কোনো কাল্পনিক চরিত্র নয়, এরা আসলে আমরাই। যারা কোনোদিনও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং যৌনজীবন নিয়ে কোনো তথ্য পায়নি তাদের স্কুল, পরিবার বা স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে। এইরকম তথ্য না পাওয়া শিশু-কিশোরীর সংখ্যা দেশে অনেক।
অথচ সবচেয়ে সত্য কথা হলো একজন শিশু যখন তার বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছে, তখন তার ভেতরে মনো-দৈহিক, সামাজিক এবং আবেগজনিত অনেক প্রশ্ন দেখা দেয় বা সমস্যা তৈরি হয়। এসময় নিজের দেহ ও মনের এমন সব পরিবর্তন সে লক্ষ্য করে, যা সম্পর্কে সে জানে না। এই বিষয়গুলো নিয়ে কেউ কখনো তার সাথে আলোচনাও করেনি। তার কোন ধারণাই নাই জীবনের এই পরিবর্তন নিয়ে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- সচেতনতা তৈরি
- বয়ঃসন্ধিকাল