নবান্নের উৎসবে মেতে উঠি

ঢাকা পোষ্ট ড. মিহির লাল সাহা প্রকাশিত: ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ১২:১১

বাংলার ঐতিহ্য হলো হাজার বছরের পুরোনো ভাষা, সংস্কৃতি, উৎসব, জীবনযাত্রা, শিল্পকলা এবং লোকসংস্কৃতির এক সমৃদ্ধ সম্ভার। যেটি নিয়ে আমরা গর্ব করি। এর মধ্যে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী বাউল গান, জামদানি ও মসলিন শাড়ি, নকশিকাঁথা, শীতল পাটি, বৈশাখী মেলা, নবান্ন উৎসব, পৌষ পার্বণ এবং বিভিন্ন ধরনের লোকনৃত্য ও সঙ্গীত।


অন্য দিকে ছয় ঋতুর দেশ হলো বাংলাদেশ, যেখানে বছরে ছয়টি ঋতু যথাক্রমে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত পালাক্রমে আসে। এই ঋতু চক্রের আবর্তে প্রকৃতি ও জীবনে নিয়ে আসে বৈচিত্র্য ও সৌন্দর্যের এক অফুরন্ত প্রেম। ঋতু চক্রের আবর্তে ঠিক এই মুহূর্তে আমরা শরৎ পেরিয়ে হেমন্তে অবস্থান করছি এটি শীতের পূর্বাভাসের ঋতু হিসেবে দেখা হয়।


কৃষি ভিত্তিক এবং ষড় ঋতুর দেশে প্রধান ফসল হলো ধান। প্রাচীন বাংলাদেশে মূলত আউশ এবং আমন ধানের চাষ বেশি হতো। বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে সেচ-নির্ভর বোরো (ইরি) ধানের প্রচলনের আগে পর্যন্ত এই দুটি ধানই ছিল প্রধান খাদ্য ফসল। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে খাদ্যের চাহিদা মেটাতে এখন তিনটি ঋতুতে যথাক্রমে আউশ, আমন এবং বোরো ধান চাষ করা হয়।


এর মধ্যে আমন ধান কৃষকেরা এই হেমন্ত ঋতুতে ঘরে তোলে। এই ঋতুতে মাঠে পাকা ধানের সোনালি রঙে মাঠকে সাজিয়ে নেয়। হেমন্তের সকালে হালকা কুয়াশা ও শিশির থাকে। মাঠ ভরা সোনালি ধান যেন কৃষকদের মধ্যে আনন্দের ঢেউ লাগিয়ে দেয়। কারণ মাঠের সোনালি ধান কৃষকের জীবন ও জীবিকার প্রধান ভরসা।


আনন্দের জোয়ারে ভাসতে ভাসতে সোনালি ধান ফসল ঘরে তোলার প্রস্তুতি নেয়। নির্বিঘ্নে বহু প্রত্যাশিত ধান ঘরে আনতে পারলে কৃষকের মুখে হাসি ফোটে। সকালের শিশির আর ধুলো মাখা পথে চাষি আর রাখালের গরুর পাল নিয়ে ক্ষেত আর মাঠে যাওয়ার যে দৃশ্য হেমন্তের মিষ্টি রোদে সকালের ক্যানভাসে ফুটে ওঠে তা কেবল এই ষড়ঋতুর দেশেই দেখা যায়। যেটি যান্ত্রিকতার ডামাডোলে কোথায় যেন হারিয়ে গেল। ধানের সোনালি রঙ এবং নতুন ধানের মিষ্টি ঘ্রাণে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে গ্রামীণ জনপদ। সেটি বাস্তবে উৎসবে রূপ দিতেই এদেশের অন্যতম উৎসব ‘নবান্ন উৎসব’।


নবান্ন শস্যভিত্তিক একটি লোকউৎসব। ১৯৯৮ সাল থেকে ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে নবান্ন উৎসব উদযাপন শুরু হয়। এই উৎসবটি সাধারণত পহেলা অগ্রহায়ণে পালিত হয়। যা আমন ধান পাকার সময়টাকে নির্দেশ করে। তবে কৃষিভিত্তিক সভ্যতায় প্রধান শস্য সংগ্রহকে কেন্দ্র করে যেকোনো ঋতুতে এ উৎসব পালিত হয়ে থাকে। অধিক শস্যপ্রাপ্তি, বৃষ্টি, সন্তান ও পশুসম্পদ কামনা এ উৎসব প্রচলনের প্রধান কারণ।


নবান্ন হলো নতুন ধান কাটার পর প্রথম অন্নগ্রহণের উৎসব। ‘নবান্ন’ শব্দের অর্থ হলো ‘নতুন অন্ন’। এখানে অন্ন অর্থ ভাত। এই উৎসব সাধারণত হেমন্তকালেই অনুষ্ঠিত হয়, যখন নতুন আমন ধান পাকে। এটি মূলত একটি ফসল কাটার উৎসব। যেখানে নতুন চাল দিয়ে তৈরি ভাতের স্বাদই অন্যরকম। এই চালের ভাত সাধারণত কিছুটা আঠালো হয়। নতুন চালের ভাত ও পিঠা-পুলি এই উৎসবের ঐতিহ্যবাহী খাবার। যা ফসল ঘরে তোলার আনন্দ এবং নতুন করে বাঁচার অনুভূতি প্রকাশ করে।


আমি শৈশবে এটি দারুণভাবে উপভোগ করেছি। আগের সেসব বিশেষ ধরনের ধান কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং তার জন্য খাদ্য জোগান দিতে অধিক ফলনশীল ধানের জাত ছাড়া আর কোনো বিকল্প না থাকায় ঐতিহ্যবাহী ধানগুলো হারিয়ে গেল। বর্তমানে এই উৎসবের মূল রূপটি কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে। যেখানে এটি কেবল একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব হিসেবে পালিত হয় না। সংস্কৃতির দেশ বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতিকে পুনরুদ্ধারের জন্য যুক্ত হয়েছে লোকনৃত্য, গান এবং মেলা। ব্যস্ত জীবনের মাঝে একটু আনন্দ ফুর্তির ছোঁয়ায় যেন স্বস্তি এনে দেয়। বিষণ্নতায় ভরা অনেকের জীবনে এটি এক সঞ্জীবনী।


শিশিরস্নাত সকাল, কাঁচাসোনা রোদমাখা স্নিগ্ধসৌম্য দুপুর, পাখির কূজনে ভরা মিষ্টি সন্ধ্যা আর মেঘমুক্ত আকাশে জ্যোৎস্নাস্নাত রাত হেমন্তকালকে যেন আরও আবেগঘন করে তোলে। প্রকৃতিতে এনে দেয় ভিন্নমাত্রা। হেমন্তের এই মৌনতাকে ছাপিয়ে গ্রামীণ জনপদের মানুষের জীবনে নবান্ন প্রবেশ করে এক আনন্দের বার্তা নিয়ে। সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের জীবনে অণুঘটকের মতো এনে দেয় সর্বজনীন এক উৎসবের ছোঁয়া।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও