তারেক রহমান : জাতির প্রত্যাশা
কোনো কোনো জন্মদিন শুধু ব্যক্তিগত আনন্দের নয়; এটি সময়ের স্তরে লেপটে থাকা ইতিহাসকে স্পর্শ করে। ২০ নভেম্বর ছিল তেমনই একটি দিন, যেদিন পৃথিবীর বুকে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এমন একজন মানুষ, যার জীবন, যার সংগ্রাম, যার নীরব শক্তি আজও একটি জাতির আশা হয়ে জ্বলে। তিনি তারেক রহমান, যিনি জন্মসূত্রের পরিচয়কে অতিক্রম করে হয়ে উঠেছেন জনগণের স্বপ্ন, দেশের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা, ইতিহাসের একটি অম্লান আলোকচিহ্ন।
উত্তরাধিকার থেকে উত্তরণ : একজন নেতার নির্মাণ
স্বাধীনতার মহান ঘোষক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সন্তান হিসাবে তার শৈশব রাজনীতি ও রাষ্ট্রবোধের বাতাসেই গড়ে উঠেছে; কিন্তু তিনি কখনো পারিবারিক গৌরবের ওপর ভর করে নেতৃত্ব দাবি করেননি। তিনি জানতেন, নেতৃত্ব দাবি নয়; নেতৃত্ব অর্জন করতে হয় মানুষের হৃদয়ের বিশ্বাস থেকে। এজন্য তিনি গ্রাম থেকে শহর, নদী থেকে পাহাড়, কৃষকের ঘর থেকে শ্রমিকের কুটির পর্যন্ত হেঁটেছেন; মানুষের কষ্ট শুনেছেন, তাদের নীরব আর্তনাদ তার চেতনায় খোদাই করেছেন। তিনি মাটির গন্ধ থেকে শিখেছেন মানুষের রাজনীতি কেমন হয়, রাজনীতির মানুষের প্রতি দায় কতটা গভীর। এভাবেই তিনি উত্তরাধিকার থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে নিজের ভেতর গড়ে তুলেছেন সত্যিকারের নেতৃত্বের বীজ।
জনগণমুখী নতুন রাজনীতির নির্মাতা
তারেক রহমান রাজনীতিকে কেবল ক্ষমতার খেলা হিসাবে দেখেননি; তিনি রাজনীতিকে দেখেছেন মানুষের হৃদয়ে পৌঁছানোর পথ হিসাবে। তার কথায় যেমন আছে সংযম, তেমনি তার কাজে আছে বাস্তবতার আলোকছটা। তিনি বিশ্বাস করেন, রাজনীতি তখনই জীবন্ত থাকে, যখন সাধারণ মানুষের স্বর রাজনীতির ভাষা হয়ে ওঠে; যখন গ্রামের চায়ের দোকানের আলোচনাও রাষ্ট্রচিন্তার সমান মর্যাদা পায়; যখন দল নয়, মানুষ হয়ে ওঠে নেতৃত্বের সবচেয়ে বড় ভিত্তি। তরুণদের তিনি শিখিয়েছেন স্বপ্ন দেখতে; শ্রমজীবী মানুষকে শিখিয়েছেন নিজেদের অধিকার চিনতে; আর দলকে শিখিয়েছেন, প্রকৃত শক্তি থাকে তৃণমূলের আস্থায়, মানুষের বিশ্বাসে, সত্যের ওপর দাঁড়ানো নেতৃত্বে। এভাবেই তিনি তৈরি করেছেন জননির্ভর এক নতুন রাজনীতির ভিত্তি।
ব্যক্তিজীবনের নীরবতায় লুকানো অগ্নিশিখা
ব্যক্তিজীবনে তিনি সংযত। তিনি শব্দ দিয়ে নয়, দৃষ্টির গভীরতা দিয়ে মানুষকে আশ্বস্ত করেন। নিজের অবস্থা, বেদনা, ক্লান্তি কখনোই তিনি মানুষের সামনে তুলে ধরেন না। তিনি জানেন, নেতৃত্বের প্রথম শর্ত হলো নিজের কষ্টকে নিজের ভেতরে ধারণ করা; আর মানুষের কষ্টকে সামনে এনে সেগুলোর সমাধান খোঁজা। তার নীরবতা দুর্বলতার নয়, এটি শক্তির এক মহিমান্বিত স্তম্ভ। এ নীরবতাতেই লুকিয়ে আছে আগুনের মতো দৃঢ়তা, পাথরের মতো ধৈর্য, আর নদীর মতো সহনশীলতা।
দুঃসময়ের অগ্নিপথে অবিচল এক যোদ্ধা
হাসিনা সরকারের নিষ্ঠুর দমনপীড়ন তার জীবনে তৈরি করেছে ইতিহাসের এক ভয়ংকর অধ্যায়, যা আঘাত করেছে তার শরীরে, তার পরিবারে, তার জীবনে। অমানবিক নির্যাতনের ভার তিনি বহন করেছেন নিঃশব্দে; হাজারো মিথ্যা মামলার বোঝায় তার দিন কেটেছে অনিরাপদ ছায়ায়; রায়হীন রায়ের ছুরিকাঘাত তাকে নির্বাসনের কঠোর বাস্তবতায় ঠেলে দিয়েছে।
কিন্তু নিপীড়ন যতই হোক, তা তাকে ভাঙতে পারেনি। কারাগারের স্যাঁতসেঁতে অন্ধকারও তার চোখের আলো নিভিয়ে দিতে পারেনি। প্রতিহিংসার স্রোতও তার হৃদয়ের মানবিকতা মুছে দিতে পারেনি। তিনি প্রমাণ করেছেন, শরীর ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কিন্তু সত্যিকার নেতৃত্বের আত্মা কখনো বন্দি হয় না।
ভাই হারানোর কিংবা নির্বাসনে থাকার বেদনা, কোনোটিই তাকে দুর্বল করেনি; বরং দেশ থেকে দূরে থেকেও তার চেতনায় বাংলাদেশের মানচিত্র আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। নিজের জন্মভূমিকে দূর থেকে দেখতে না পাওয়ার যে ব্যথা, সেই ব্যথাই তাকে আরও প্রখর, আরও দূরদর্শী, আরও পরিণত করেছে।
রাষ্ট্রদর্শন : যে স্বপ্ন বাস্তবতার দিকে পথ দেখায়
তারেক রহমান গণতন্ত্রকে কেবল রাজনীতির নিয়ম মনে করেন না; তিনি এটিকে মানুষের মর্যাদার কেন্দ্র বলে মনে করেন। তিনি বিশ্বাস করেন, যে রাষ্ট্র মানুষের স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারে না, সেই রাষ্ট্রের উন্নয়ন যতই চমৎকার হোক, তা আসলে কাগজের অলংকার ছাড়া আর কিছু নয়।
তার রাষ্ট্রচিন্তায় আছে সমান সুযোগ, ন্যায়ভিত্তিক সম্পদ বণ্টন, তৃণমূলের ক্ষমতায়ন, কর্মসংস্থান, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং সবচেয়ে বেশি, মানুষের অধিকারকে রাষ্ট্রের কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড় করানোর প্রচেষ্টা। তিনি এমন একটি রাষ্ট্র দেখতে চান, যেখানে মানুষ ভয় নয়, আস্থা নিয়ে জীবনের পথ চলে; যেখানে আইন ব্যক্তি নয়, রাষ্ট্রের সমান চোখে সবাইকে দেখে; যেখানে ন্যায়বিচার সত্যিকার অর্থে মানুষের সম্পদ হয়ে দাঁড়ায়।