জীবন ও মৃত্যুর মধ্যসময়ে সুচিন্তা

দেশ রূপান্তর মাহমুদ রেজা চৌধুরী প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৫১

সকালে ঘুম থেকে উঠে চা হাতে জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি, পাশের বাড়ির একজন বৃদ্ধা একা বাড়ির পাশে গাছের শুকনো পাতাগুলো একত্রিত করছেন এক জায়গায়। শীতের শুরুতে এখানেও সব গাছের পাতা হলুদ বর্ণের হয়ে গাছ থেকে ঝরে যায়। বাড়ির পাশের বাইরের সবটুকু জায়গা জুড়ে ফেলে ঝরা শুকনো পাতা। এগুলো পরিষ্কার না করলে বৃষ্টি বা স্নোতে আরও বেশি বিশ্রী হয়। ফলে সবাই এ সময়ে যার যার বাড়ির পাশের শুকনো পাতা একপাশে জড়ো করে পলিথিন ব্যাগে ভরে রাখে। প্রতি সপ্তাহে নগর প্রশাসন অন্যান্য আবর্জনা (গার্বেজ) নেওয়ার সময় সেই ব্যাগগুলোও নিয়ে যায়।


দেখছিলাম পাশের বাড়ির বৃদ্ধা মহিলা তার বাসার সেই শুকনো পাতা সরাচ্ছেন নীরবে একা। প্রায় দুই যুগের বেশি সময়ের প্রতিবেশী। তাই তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আছে। ভীষণ নম্র, ভদ্র, বিনয়ী ও পরোপকারী এই চায়নিজ পরিবারের ভদ্রমহিলা। বেশ কয়েক বছর আগে, তার স্বামী ইন্তেকাল করেন। ছেলেমেয়েরা আছে, যে যার মতো করে যার যার জায়গায়। মাঝে মাঝে ওরা আসে মাকে দেখতে। মাও যান ওদের দেখতে। বাকিটা সময় ভদ্রমহিলা একা থাকেন। বয়স সম্ভবত ৮০-এর কাছাকাছি। প্রচ- পরিশ্রমী তো বটেই। বাড়ির যাবতীয় কাজ একা করেন। জীবন ও মৃত্যুর মধ্যখানে এটাও এক সময়। পৃথিবীতে আসলে কেউ কারও জন্য থাকে না। সবাই নিজের জন্যই থাকি। একটা সময় কেউ কারোর জন্য কিছু করেও দেয় না। নিজেরটা নিজেরই করতে হয়। সবকিছু একটা নির্দিষ্ট সময়ে বন্দি। হঠাৎ মৃত্যু আসে। সব ছেড়ে ছুড়ে চলে যেতে হয়। চলেও যাই। তাই মনে হচ্ছিল, জীবন ও মৃত্যুর মধ্যখানে আসলে কী! অপেক্ষা? অপেক্ষার সময়টুকু নানা কাজে চলে যায়। কাজগুলো কী! সেই কাজ কেন ও কীভাবে করি। কেন করি?


প্রশ্নগুলো মাঝে মাঝে মনকে নাড়া দেয়। আমরা যে যেখানেই থাকি, যাই করি সবকিছুর পেছনে একটা মহাপরিকল্পনা কাজ করে। সেই মহাপরিকল্পনাটা নিজে করতে পারি না, নিজে প্ল্যান করি, কিন্তু আমাদের সবার জন্য ‘গ্রেট প্লান’ করে রেখেছেন মহান সৃষ্টিকর্তা। একটা কথা আছে, ‘ম্যান প্রপসেস, গড ডিসপোসেস’। মানুষ পরিকল্পনা করে আর বিশ্ব সৃষ্টিকর্তা করেন মহাপরিকল্পনা। আমরা সেই মহাপরিকল্পনার একটা রহস্য, কঠিন প্রশ্ন ও বিভ্রান্তিও। পশ্চিমের দেশে শীতে পাতা কুড়ানো তেমনি একটা পাজল। আমাদের জাগতিক রাজনীতিও আরেক পাজল। দেশে-বিদেশে এই রাজনীতির বিচিত্র ও বৈচিত্র্য কখনো কখনো অবাক করে। বাকরুদ্ধ করে দেয়। রাজনীতিকে আদর্শিকভাবে চিন্তা করি। মানুষের জন্য এটি মানুষের সেবা। কিন্তু রাজনীতি এখন দেশ ও বিদেশে অধিকাংশ সময়েই মনে হয় প্রতারণা। একে অন্যকে ঠকানো। একে অন্যের ব্যাপারে ও তার সঙ্গে অন্যায় ও মিথ্যাচার করা। দুর্নীতি করা, অসভ্যতামি। চুরি, মিথ্যা বলা ও তা প্রচার করা।


আজকাল চুরির অসংখ্য কৌশল ও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই চুরির কৌশলের সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন কৌশল ‘এ আই’। অর্থাৎ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। এর দ্বারা এমন কিছু ছবি বা এমন কিছু ঘটনা ও কথা সামনে উপস্থাপন হয় যে, সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হই। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়াতে একটা ছবি আসে। বাংলাদেশে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি প্রফেসর ডক্টর আলী রীয়াজ ৩১ অক্টোবর ২০২৫ তার নির্দিষ্ট সময় শেষ করে পরিবারে ফিরে আসছেন। ‘এ আই’ ছবিতে দেখানো হয়, ড. রীয়াজ বিমানের ফার্স্ট ক্লাসে পালিয়ে যাচ্ছেন। প্রথম কথা, ছবিটা হুবহু মিথ্যা একটা ছবি। প্রফেসর রীয়াজ তার নির্দিষ্ট সময় দায়িত্ব শেষ করে অবশ্যই ফিরে আসবেন। তিনি ফিরে আসছেন তার পরিবারে, পালিয়ে না। পালানোর প্রশ্নই বা কেন, তার বিরুদ্ধে কি কোনো মামলা আছে? না তিনি কিছু চুরি করে আসছেন বা কাউকে হত্যা করে?


ছবির ক্যাপশনে তাকে পালিয়ে যাওয়ার কথা বলা ও লেখা হয়। প্রথম মিথ্যাচার। এটাও উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, প্রফেসর রীয়াজ তার ওপর অর্পিত ঐকমত্য কমিশনের দায়িত্ব ৩০ অক্টোবরের পর শেষ করে একবারে ফিরে আসতে পারতেন যুক্তরাষ্ট্রে, বাংলাদেশে আর না ফিরে গিয়ে। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা প্রফেসর রীয়াজ শুধু তার পরিবারের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করার জন্য আসেননি। তার কিছু অফিশিয়াল কাজ আছে এখানে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটি একজন ডিসটিংগুইস প্রফেসর। এখানে তার ছুটি সংক্রান্ত কিছু দাপ্তরিক কাজ রয়েছে। আগামীকাল ২০ নভেম্বর বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার কথা প্রফেসর রীয়াজের, পরবর্তী দায়িত্ব পালনে। দ্বিতীয় মিথ্যা, প্রফেসর রীয়াজ কখনোই বিমানে প্রথম ক্লাসে ভ্রমণ করেন না। এটা আরেক মিথ্যাচার। তৃতীয় মিথ্যা, প্রফেসর রীয়াজ কোথাও ভ্রমণে গেলে সুটেড-বুটেড হয়ে ভ্রমণ করেন না। এটা তার প্রয়োজন নেই। রাজনৈতিক অপপ্রচার এবং মিথ্যা প্রচারের কারণে এ ধরনের ‘এআই’ ছবি যুক্ত করে বিষয়টা সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচার করার উদ্দেশ্যকে, নিশ্চয়ই কোনোভাবে সাধুবাদ দেওয়া যায় না। দেওয়ার প্রশ্নও ওঠে না। এ ছাড়া বিষয়টা নিয়ে কিছু রাজনৈতিক ও সাংবাদিক মহলে যেসব ভুল এবং মিথ্যা তথ্য প্রচার হচ্ছে, তার কোনো প্রমাণ নেই। যারা এগুলো করছেন তাদের একটা দুর্গন্ধযুক্ত চিন্তা, ইচ্ছা ও পরিকল্পনা আছে। কিন্তু এটা করে তারা নিজেরাই যে নিজেদের চিন্তার গায়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছেন, এই অনুধাবন কম। প্রফেসর রীয়াজের জন্য মানহানির মামলা করতে পারেন। কিন্তু মনে হয় না সেটা তিনি করবেন। অসুরের সঙ্গে সুরের যুদ্ধ কি হয়, না শোভা পায়? প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এ বিষয়ে এই কমিটির পেছনে খরচ ও ব্যয়ের প্রশ্নেও মিথ্যা প্রচার চলছে। 

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও