একটু মনে করে দেখুন তো, ঢাকা শহরে শেষ কবে খালি পায়ে মাটিতে হেঁটেছেন? এমন প্রশ্নের উত্তর হয়তো খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এই শহরে এমন সুযোগ তো নেই বললেই চলে।
সেই সুযোগটাই সম্প্রতি নগরবাসীকে করে দিয়েছে বোটানিক্যাল গার্ডেন। মিরপুরে ২০৮ একরের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে আছে দৃষ্টিনন্দন গোলাপবাগান, বাঁশবাগান, লেক, পদ্মপুকুর, শাপলাপুকুর, মৌসুমি ফুলের বাগানসহ দুর্লভ প্রজাতির উদ্ভিদ আর বিচিত্র সব পাখপাখালি। সেখানেই নতুন করে যোগ হলো খালি পায়ে হাঁটার রাস্তা। ৬ ফুট প্রস্থ আর ৩৯০ ফুট দীর্ঘ এই রাস্তার রয়েছে কয়েকটি ধাপ। বালু, গাছের গুঁড়ি, নুড়িপাথর, দোআঁশ মাটি, পানি আর পানিতে ডোবা কাদামাটির পথ।
দুপাশে ইটের গাঁথুনিতে রাস্তা বাঁধা, তারপরে বাঁশের খুঁটি দিয়ে বেড়া দেওয়া আছে। ট্রেইলটির শুরুতেই দুটি সাইনবোর্ড। একটিতে লেখা খালি পায়ে হাঁটার উপকারিতা, অন্যটিতে নিয়মাবলি ও সতর্কতা।
জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান ও বলধা গার্ডেনের পরিচালক শওকত ইমরানের উদ্যোগেই এই খালি পায়ে মাটিতে হাঁটার ট্রেইল। ‘ঢাকা মহানগরীতে যাঁরা বাস করেন, তাঁদের সঙ্গে প্রকৃতির সংযোগ নেই বললেই চলে। প্রকৃতির সঙ্গে সরাসরি সংযোগের একটা উপায় খালি পায়ে মাটিতে হাঁটা। ঢাকা শহরে এমন হাঁটার সুযোগ তেমন নেই বলে মানুষ কখনোই ইচ্ছা করে নিজ থেকে খালি পায়ে হাঁটতে যায় না। ফলে মাটি ও প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের দূরত্ব বাড়ছে দিন দিন। প্রকৃতির সঙ্গে নগরবাসীর সরাসরি সংযোগ ঘটাতেই আমাদের এই খালি পায়ে হাঁটার আয়োজন। এই বেয়ারফুট ট্রেইল প্রতিদিনই ভোর ৬টা থেকে খোলা থাকে। ট্রেইলটি বিশেষ করে মর্নিংওয়াকে আসা মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।’
১০ নভেম্বর সকালবেলা আমরাও সেই রাস্তায় হাঁটতে গিয়েছিলাম। গাছের ফাঁক গলে গায়ে এসে পড়ছে সকালের মিষ্টি রোদ, গাছে গাছে পাখির কিচিরমিচির, চিড়িয়াখানা থেকে ভেসে আসছে হাতির ডাক! এমন করে পথ চলতে চলতে একসময় হাজির হই সেই খালি পায়ে হাঁটার রাস্তার সামনে।