প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা বিষয় হিসেবে কী পড়ে

প্রথম আলো তারিক মনজুর প্রকাশিত: ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ২০:২২

এ বছর আগস্ট মাসের শেষ দিকে ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা’ প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করে সরকার। এতে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ রাখা হয়। এর দুই মাসের মাথায় এসে সেই প্রজ্ঞাপন পরিবর্তন করা হলো। সংশোধিত বিধিমালায় সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ বাদ দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তকে গোষ্ঠীবিশেষের চাপের কাছে সরকারের ‘নতি স্বীকার’ বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে। বিভিন্ন মহল থেকে এ নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়াও জানানো হচ্ছে।


বিধিমালা সংশোধনের ব্যাপারে সচিব কমিটির বরাত দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার বলেছে, এত অল্পসংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ প্রাথমিক শিক্ষা পর্যায়ে কার্যকর কোনো সুফল বয়ে আনবে না। এতে বৈষম্যের সৃষ্টি হবে। পরে অর্থের সংস্থান সাপেক্ষে সব স্কুলে এ রকম নতুন বিষয়ে শিক্ষকের পদ সৃষ্টি এবং সেসব পদে নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে বাস্তব কারণ ছিল ভিন্ন। প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকেই ধর্মভিত্তিক কোনো কোনো রাজনৈতিক দল ও পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হচ্ছিল। তাঁরা বিভিন্ন সভা, সেমিনার, বিক্ষোভ সমাবেশে সংগীত শিক্ষকের বদলে ধর্ম শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান। সংগীত শিক্ষক নিয়োগ বাতিল করা না হলে তাঁরা আন্দোলনেরও হুমকি দেন। ফলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বিধি পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। 


যাঁরা আপত্তি জানিয়েছেন এবং যাঁরা সেই আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁদের কিছু ভুল হচ্ছে বলে মনে হয়। প্রাথমিকের শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যক্রম সম্পর্কে ধারণা না থাকা কিংবা ধারণা খণ্ডিত থাকার কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রাথমিকের একেকটি শ্রেণিতে যে কয়টি বই আছে, অনেকে মনে করেন, সেগুলোই বুঝি পড়ানো হয়; কিন্তু পড়ানো হয় তার চেয়েও বেশি বিষয়। যেমন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে বই আছে তিনটি—বাংলা, ইংরেজি ও গণিত; কিন্তু পড়ানো হয় আরও পাঁচটি বিষয়—পরিবেশ পরিচিতি, ধর্ম, শারীরিক শিক্ষা, চারু ও কারুকলা এবং সংগীত। তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে বই আছে ছয়টি—বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, সমাজ ও ধর্ম। এসব শ্রেণিতেও এসব বিষয়ের বাইরে শারীরিক শিক্ষা, চারু ও কারুকলা এবং সংগীত পড়ানো হয়।


শিশুশিক্ষার্থীর চাপ কমানোর জন্য প্রতিটি বিষয়কে পাঠ্যবই আকারে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি। তবে যেসব বিষয়ের পাঠ্যবই নেই, সেগুলোর ক্ষেত্রেও বিস্তারিত শিক্ষাক্রমে যোগ্যতা বা দক্ষতার ন্যূনতম লক্ষ্য নির্ধারণ করা আছে। এমনকি এসব বিষয়ে শিক্ষার্থীর দক্ষতা মূল্যায়নের জন্য নির্দেশিকাও আছে। প্রাথমিক স্তরে এতগুলো বিষয় যুক্ত করার পেছনে অসংখ্য গবেষণা ও মতকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে, অন্যান্য দেশের শিক্ষাক্রমও দেখা হয়েছে। এখন যদি কোনো ব্যক্তি বা পক্ষ এক বা একাধিক বিষয় বাদ দিতে চান, তাহলে এর জন্য নতুন করে পর্যালোচনার দরকার হবে।


আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রতে৵ক শিক্ষার্থীর বাইরের চাহিদার পাশাপাশি কিছু অন্তর্নিহিত চাহিদা থাকে। সংগীত, চারু ও কারুকলা, শারীরিক শিক্ষা, এমনকি ধর্ম বিষয়কে কেবল বাইরের চাহিদার ভিত্তিতে বিবেচনা করা ঠিক হবে না। এগুলো শিক্ষাক্রমের অন্তর্গত করা মানে এই নয়, এর মধ্য দিয়ে একজন শিক্ষার্থীকে সংগীতশিল্পী, চিত্রশিল্পী বা খেলোয়াড় বানানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থী তার আগ্রহের জায়গা থেকে ভবিষ্যতে যেকোনো ধরনের পেশা বেছে নিতে পারে, তবে তার সামগ্রিক বিকাশের জন্য শরীর ও মনের চাহিদাগুলোও আমাদের পূরণ করতে হবে। তা ছাড়া এটা জানা থাকা দরকার, শিক্ষাক্রমের প্রতিটি বিষয় সমান ওজন বা গুরুত্ব নিয়ে থাকে না।


শিক্ষাক্রম বা পাঠ্যক্রমে যা–ই থাকুক না কেন, তার বাস্তবায়ন আরও অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। শ্রেণিকক্ষে শিখন ব্যবস্থাপনার ঘাটতি এবং দক্ষ শিক্ষকের অভাব আমাদের দেশের প্রাথমিক শিক্ষার দুটি প্রধান সমস্যা। অনেকেরই জানা নেই, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে যাঁদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, তাঁদের কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় না। বর্তমানে এটা ধরে নেওয়া হয় যে প্রাথমিক স্তরের একজন শিক্ষক প্রাথমিকের শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভুক্ত সব বিষয়ই পড়াতে পারবেন। বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সব বিষয় পড়াতে তাঁকে বাধ্য করা হয়, যদিও সব বিষয়ে শিখন-শেখানো কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তাঁর যথেষ্ট যোগ্যতা কিংবা প্রশিক্ষণ কোনোটিই থাকে না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও