প্রগতিশীল ঐক্য কেন দরকার

যুগান্তর মোবায়েদুর রহমান প্রকাশিত: ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৩৪

অনেক ঘটা করে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় গত ১৭ অক্টোবর জুলাই সনদের স্বাক্ষর অনুষ্ঠান সম্পন্ন হলো। জুলাই সনদের মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে গিয়ে ড. ইউনূস বলেছেন, এ সনদ বিশ্বের কাছে একটি রোল মডেল হয়ে থাকবে। ওই সনদে চারটি বাম দল এবং এনসিপি সই করেনি। এনসিপি বলেছে, জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আগে একটি প্রভিশনাল সাংবিধানিক ফরমান জারি করতে হবে। স্বাক্ষর দান পর্যন্ত সংস্কার কমিশন বা ২৪টি রাজনৈতিক দল (যারা স্বাক্ষর দিয়েছে) এনসিপির কথায় কর্ণপাত করেনি।


৩৯ পৃষ্ঠার এ জুলাই সনদ এখন পর্যন্ত একটি Scrap of paper বা এক টুকরা দলিল। যে ২৫টি দল সই করল, (একদিন পর গণফোরাম সই করায় স্বাক্ষরকারীদের সংখ্যা হয়েছে ২৪ থেকে ২৫) তারা শেষ পৃষ্ঠায় দেওয়া ৭টি অঙ্গীকারনামায় সই করেছে। সই তো হলো। এখন ওইগুলো বাস্তবায়িত হবে কীভাবে? এখন তো দেখা যাচ্ছে, বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড় হয়ে গেছে। বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, ঢক্কানিনাদে প্রচারিত এ সনদটি আসলে কোনো সনদ হয়নি। যদিও পত্রপত্রিকায় বলা হয়েছে, সনদে বিধৃত ৮৪টি প্রস্তাব বা সুপারিশের মধ্যে ৪৭টিতে নোট অব ডিসেন্ট বা আপত্তি রয়েছে, কিন্তু আমি গুনে দেখলাম, সংখ্যাটি ৪৭ নয়, বাস্তবে ৫৮টি প্রস্তাব বা সুপারিশে নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে। অর্থাৎ সব রাজনৈতিক দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে মাত্র ২৬টি প্রস্তাব বা সুপারিশ। মাত্র ২৬টি প্রস্তাবে ঐকমত্য পোষণ করে, ৫৮টিতে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে ২৪টি রাজনৈতিক দল এবং সংস্কার কমিশন সই করলেই কি সেটি জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ হয়ে গেল?


এবার আসছি আরও গুরুতর কতগুলো প্যারাডক্স বা স্ববিরোধিতায়। আমি তো দেখতে পাচ্ছি বিসমিল্লাহতেই গলদ। যেমন সংস্কার কমিশন প্রথমে চারটি বিষয়ের ওপরে ৩৩টি রাজনৈতিক দলের মতামত চেয়েছিল। এ চারটি বিষয়ের মধ্যে ৪ নম্বর বিষয়ে সংস্কার কমিশনই বলেছে, ‘Doctrine of necessity বিবেচনায় Article 106 of the constitution প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের বিচারকদের প্রদত্ত নির্দেশনা মেনে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। সংস্কার কমিশন সনদ বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে চারটি অপশন দিয়েছিল। এগুলো হলো-১. সরকারি আদেশ জারির মাধ্যমে; ২. অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে; ৩. পরবর্তী সংসদের সংশোধনের মাধ্যমে; ৪. সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০৬-এর অধীন আপিল বিভাগের মতামত গ্রহণের মাধ্যমে।


এ সরকারের গঠন ও চরিত্র সম্পর্কে বিএনপি যে মতামত দিয়েছে সেটি এরূপ : ‘সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা চলমান থাকা অবস্থায় প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদকে Supra constitutional instrument হিসাবে মর্যাদাদানের চেষ্টা আইনি ও সাংবিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে অসম্ভব, অসঙ্গত ও অগ্রহণযোগ্য।’----------


ইন্টারিম সরকার কোনো অবস্থাতেই সাংবিধানিক সরকার নয়। অথচ বর্তমান সরকার জুলাই সংবিধান প্রণয়নে আগে থেকেই নিজেরাই এ সরকারকে সাংবিধানিক সরকার হিসাবে পরিগণিত করেছে। তাই দেখা যায়, জুলাই ঘোষণাপত্রের (জুলাই প্রোক্লামেশন) ২০ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘এবং যেহেতু জনগণের দাবি অনুযায়ী এরপর অবৈধ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া হয় এবং সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের মতামতের আলোকে সাংবিধানিকভাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়।’


এর বিপরীতে জামায়াতে ইসলমী মতামত দিয়েছিল, ‘AND Whereas, the Constitution of 1972 has failed to protect the life and liberty of the people of Bangladesh leading to numerous cases of crimes against humanity and enforced disappearances by the state and government authorise.’ বাংলা অনুবাদ : যেহেতু ১৯৭২ সালের সংবিধান বাংলাদেশের জনগণের জান ও মালের নিরাপত্তা বিধানে ব্যর্থ হয়েছে, যার ফলে মানবতার বিরুদ্ধে অসংখ্য অপরাধ এবং রাষ্ট্র ও সরকার কর্তৃক বলপূর্বক গুমের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।


সুতরাং দেখা যাচ্ছে, বিসমিল্লাতেই বর্তমান সংবিধান নিয়ে দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে।


এখন দেখা যাচ্ছে, একটি বিশেষ আদেশ (ফরমান) বলে জুলাই সনদ কার্যকর করা হবে। এ সম্পর্কে একটি বাংলা দৈনিকের ১৯ অক্টোবর সংখ্যার প্রথম পৃষ্ঠার দ্বিতীয় প্রধান সংবাদে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষরিত জুলাই জাতীয় সনদ কীভাবে বাস্তবায়ন হবে-এ বিষয়ে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সরকারকে নিজেদের সুপারিশ জানাবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশন সূত্র উক্ত বাংলা দৈনিককে জানিয়েছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে প্রথমে আদেশ জারি করা হবে। এ আদেশের ভিত্তিতে গণভোটের আয়োজন করা হবে। গণভোট কীভাবে হবে, তা আদেশে উল্লেখ থাকবে। আদেশই হবে সনদের আইনি ভিত্তি। তবে গণভোট নির্বাচনের দিন হবে, নাকি আগে হবে-এ সিদ্ধান্ত সরকারকে নিতে বলবে কমিশন।’

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও