প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ব্যাহত জনবলসংকটে
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দেশের সবচেয়ে বড় শিক্ষাক্ষেত্র। এখানে পড়াশোনা করে লাখ লাখ শিশু। তাঁদের শিক্ষার মান কেমন হবে, অনেকটা নির্ভর করে শিক্ষকেরা কেমনভাবে পাঠদান করছেন তার ওপর। কিন্তু শিক্ষকতার জন্য যে বৈজ্ঞানিক কৌশল শেখা দরকার, তা শেখানোর মতো প্রশিক্ষণব্যবস্থা দেশে কার্যত ভেঙে পড়েছে। উপজেলা রিসোর্স সেন্টার (ইউআরসি) ও প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (পিটিআই) জনবলসংকট এত বেশি যে প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এখন স্থবির হয়ে পড়েছে।
প্রশিক্ষণ ছাড়াই ক্লাস
উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে শিক্ষক হতে হলে বিষয়ভিত্তিক ডিগ্রির পাশাপাশি ‘ব্যাচেলর ইন টিচিং’ বা অনুরূপ ডিগ্রি থাকতে হয়। পাঠদানের বৈজ্ঞানিক কৌশল না জানলে শ্রেণিকক্ষে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ধরে রাখা সম্ভব নয়। সেখানে বাংলাদেশে যে কেউ নিয়োগ পরীক্ষায় পাস করেই শিক্ষকতা শুরু করতে পারেন। ফলে প্রশিক্ষণ ছাড়া পাঠদান শুরু হয়, যা বিজ্ঞানভিত্তিক নয়।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা ২ নম্বর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হায়দার আলী এক যুগ ধরে শিক্ষকতা করছেন। তিনি বলেন, ‘একজন শিক্ষক চাকরিতে যোগ দিয়েই ক্লাস নিতে শুরু করেন। প্রশিক্ষণ ছাড়াই এই ক্লাস বিজ্ঞানভিত্তিক হয় না। শিক্ষক প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলো জনবলসংকটে অচল হয়ে পড়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিজ্ঞ ও মেধাবী শিক্ষকদের প্রশিক্ষক হিসেবে দিলে নিয়োগ দিলে দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’
ইউআরসিতে শূন্য পদ
শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য উপজেলা রিসোর্স সেন্টার গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। শিক্ষকতার মান বাড়ানো এবং শিক্ষার্থীদের শেখার আগ্রহ তৈরি করতে এ কেন্দ্রগুলো চালু হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে এ কার্যক্রম প্রায় থেমে গেছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে ইউআরসিতে সহকারী ইনস্ট্রাক্টর (দশম গ্রেড) পদ আছে ৫০৫টি। কিন্তু কর্মরত আছেন মাত্র ১৮ জন কর্মকর্তা। অর্থাৎ ৪৮৭টি পদ খালি। এত বড় শূন্য পদে কার্যক্রম প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ফলে নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকেরা কোনো কার্যকর প্রশিক্ষণ ছাড়াই শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করছেন।