বুয়েটে শিক্ষার্থী বহিষ্কার ও গ্রেপ্তারে ন্যায্যতা কোথায়?

বিডি নিউজ ২৪ মাহবুবুল হক ভূঁইয়া প্রকাশিত: ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৩:০৭

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধর্মঅবমাননার অভিযোগে শিক্ষার্থী বহিষ্কারের যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শিক্ষার্থী শ্রীশান্ত রায়ের নাম। বিক্ষাভকারী শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তাকে সাময়িক বহিষ্কার এবং তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মামলাও করা হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে।


শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে এমন চটজলদি অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের প্রবণতা তাদের প্রতি অন্যায়ের ঝুঁকি তৈরি করে কিনা, সেটি বিবেচনার দাবি রাখে। এর ফলে প্রমাণ, পর্যালোচনা ও ন্যায্যতার জায়গাটা কতটা রক্ষা পায়—এ প্রশ্নও সামনে এসে দাঁড়ায়।। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা কি বিচার বিভাগের বিকল্প হওয়া, নাকি যুক্তি ও ন্যায়বোধের চর্চার ক্ষেত্র তৈরি করা—এ প্রশ্নটা আমাদের সবাইকেই ভাবতে হবে।


সংবাদমাধ্যম এবং ফেইসবুকে বুয়েট শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পোস্ট ঘেঁটে এই ঘটনা সম্পর্ক যা জানা যায় তার সারমর্ম হল, শ্রীশান্ত ‘WeeklyService923' নামে একটি রেডিট আইডি ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বোরকা, হিজাব ও নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতেন। ওই আইডির লেখার ধরণ, ভাষা ও শব্দচয়ন শ্রীশান্তের লেখার সঙ্গে মিলে যায় বলে বিক্ষাভকারী শিক্ষার্থীরা দাবি করেন। এছাড়া শ্রীশান্তের হেডফোনের মডেল ও নেপাল সফর সম্পর্কিত তথ্যও তার আইডির সঙ্গে মিলে বলে শিক্ষার্থীরা দাবি করেন। তাদের এসব দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শ্রীশান্তকে বহিষ্কারের এবং তার বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।


কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এমন মিল থেকেই কি আমরা কারও দোষ প্রমাণ করতে পারি? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একমত হয়ে যে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে অনেকেই স্বস্তি পেয়েছেন, আবার কেউ কেউ উদ্বিগ্নও হয়েছেন—কারণ এতে বিচারপ্রক্রিয়া নয়, জনমতের চাপ যেন বেশি কাজ করেছে। বুয়েটের এই ঘটনার ভেতর দিয়ে আমাদের সমাজে ‘অপরাধ প্রমাণ’ ও ‘প্রমাণের সীমারেখা’ নতুন করে প্রশ্নের মুখে পড়েছে।


বুয়েট কর্তৃপক্ষও বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে একজন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার এবং তার বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। প্রথমত, শ্রীশান্ত যদি এই অপরাধ করেও থাকেন বিশ্ববিদ্যালয় আইনে তাকে বহিষ্কার করার এখতিয়ার রয়েছে কি না, সেটি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। শ্রীশান্তের অপরাধ রাষ্ট্রের আইনে অপরাধ হলে তাতে রাষ্ট্র অথবা সংক্ষুব্ধরা অভিযোগ করবেন। কিন্তু বুয়েটের অতিউৎসাহী পদক্ষেপ তাদেরই একজন শিক্ষার্থীর অন্যায্য ক্ষতির ঝুঁকি তৈরি করেছে। অথচ বুয়েটের দায়িত্ব ছিল, এই শিক্ষার্থীর যাতে অন্যায্য ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি না হয়, সেটি নিশ্চিত করা। কিন্তু তারা সেটি না করে নিজেরাই শিক্ষার্থীকে নানামুখী ক্ষতির সম্মুখীন করেছেন।


অনেকে বলতে পারেন ওই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় ওই অবস্থান না নিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারত। এটি ন্যায্য ও যৌক্তিক আলাপ নয়। বিক্ষোভকারীদের দাবির মুখে কোনো শিক্ষার্থীকে শাস্তি দেওয়া গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন, রাষ্ট্রের আইন দরকার কী? দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনিক কর্তৃত্বে এক ধরনের দুর্বলতা তৈরি হয়েছে সত্য। এ সময়ে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে আইন, নীতিমালা পাশ কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু এভাবে আর কতদিন?


গত ১৫ অক্টোবর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়, ৯ অক্টোবর ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করার দায়ে বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। এর আগে এ বছরেরই ২০ জুন ধর্ম অবমাননার অভিযোগে এক শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)। একই ধরনের অভিযোগে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় গত ১৬ মে এক শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে। এ ঘটনাগুলো তাৎক্ষণিকভাবে গুগলে খুঁজে পাওয়া, ভালোভাবে খুঁজলে এমন ঘটনার খোঁজ আরও পাওয়া যেতে পারে।


এ সকল ঘটনা নিয়ে ভাববার দুটি জায়গা রয়েছে। ওপরে উল্লেখিত প্রতিটি ঘটনায় শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের পেছনে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের বিষয়টি কারণ হিসেবে সংবাদমাধ্যমে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ভাবতে হবে তাদের এই পদক্ষেপগুলো ন্যায্য কি না; তাদের নিজেদের আইন ও নীতিমালা অনুযায়ী সিদ্ধ কি না।


একটি রাষ্ট্রের সরকার, পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয় সবাই মিলে ‘বিক্ষোভকারীদের’ দাবির মুখে অন্য নাগরিকেদের শাস্তি দিতে থাকলে সে রাষ্ট্রের আইনি কাঠামো টিকে থাকে কী করে, সেটি বিগত দিনগুলতো গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে পারিনি আমরা। সেটি শুরু থেকেই ভাবা উচিত ছিল, এখন যত তাড়াতাড়ি এটি নিশ্চিত করা যায় মানুষের জন্য তত মঙ্গল।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও