
লালন কি জাত সংসারে
বিশাল এক রহস্য মানুষ বা প্রাণীকুলের জন্ম এবং মৃত্যু!
নিশ্চয় মনে প্রশ্ন ওঠে, কেন জনম? কেন মৃত্যু? জন্ম ও মৃত্যুর মধ্যখানে যে জীবনের অপরূপ রূপকথা—সেই রূপকথার ঘোরে অজস্র মানুষ পথ হারিয়েছেন, পথে পথ খুঁজতে খুঁজতে। অজস্র প্রজ্ঞাবান মানুষের মনে উদিত এই প্রশ্নের সমাধানও অমীমাংসিত। কিন্তু মানুষ নিজেও কম রহস্যময় নয়। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ চিন্তাশীল স্রোতের দিকে যেমন সাঁতার কাটে, কেউ কেউ উল্টোদিকেও সাঁতার কেটে, অভেদের ভেদ রহস্য উন্মোচনে নিজেকে উৎসর্গ করে।
মহাত্মা লালন ফকির আমৃত্যু ভেদ ও অভেদের মধ্যে বিরাজিত রহস্যের সন্ধানে ব্যাপৃত থেকেছেন। তিনি ছিলেন জীবনের পাঠশালার চিরকালের শিক্ষার্থী। একই সঙ্গে সমাজের সব সূত্র ধারণ করে এগিয়েছেন। তিনি বহুমাত্রিক ধ্যান- ধারণায় বিকশিত সৃষ্টি রহস্যের সন্ধানের মধ্যে মানুষের মনের আলোর কণাও খুঁজে পেয়েছেন। সৃষ্টি ও মানুষ—পরস্পর সহজিয়া ঘরানার সম্পর্কের সঙ্গে সমাজ বাস্তবতার রূপরেখার অনুসন্ধানের ব্যাপৃত ছিলেন আমৃত্যু।
গানেই তিনি ব্যক্ত করেছেন নিজের আকিঞ্চন—
‘জাত গেল জাত গেল বলে
একি আজব কারখানা।
সত্য কাজে কেউ নয় রাজি
সবই দেখি তা না না না।।
..............................
গোপনে যে বেশ্যার ভাত খায়
তাতে ধর্মের কী ক্ষতি হয়।
লালন বলে জাত কারে কয়
এই ভ্রম তো গেল না।।’
তিনি জাতি ধর্ম বর্ণ- সবাইকে মানুষ ভেবেছেন। মানুষের মধ্যে কোনো জাত পাত থাকতে পারে না। সব ধর্ম কর্ম ও রঙের মানুষ মিলে একটি মহাজাতি। মানব জাতির মধ্যে নানা ধরনের মত পার্থক্য থাকতে পারে, থাকাটাই স্বাভাবিক কিন্তু কেউ কাউকে ঘৃণা বা অপমান করুন, মহাত্মা লালন চাননি। তিনি সব মানুষের মধ্যে নিবিড় মানবিক সম্পর্কের সৌধ রচনা করতে চেয়েছেন।
লালন ফকির কত সালে জন্ম গ্রহণ করেছেন, এ বিষয়ে নির্দিষ্ট করে তথ্য পাওয়া যায় না। লালন সম্পর্কে প্রথম জীবনী পুস্তক রচনা করেছিলেন বসন্তকুমার পাল [১৮৯০- ১৯৭৫]। তিনি ১৯৫৫ সালে রবীন্দ্রনাথের পুত্র রথীন্দ্রনাথের সহায়তায় মহাত্মা লালন ফকির প্রকাশ করেন। তিনি লালনের জন্ম ও জীবনের প্রকাশ সম্পর্কে লেখেন—“লালনের জন্ম সাবেক নদীয়া জেলার কুষ্টিয়া মহকুমার অন্তর্গত কুমারখালী থানার চাপড়া-ভাঁড়ারা গ্রামে হিন্দু কায়স্থকুলে। বাল্যনাম লালন কর। পিতার নাম- মাধবচন্দ্র কর।... শৈশবে লালন পিতৃহীন হন। যৌবনের প্রথমে বিবাহকার্য সমাপ্তের কিছুদিন পর প্রতিবেশী বাউল দাসের সঙ্গে তিনি নৌকায় মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে যান গঙ্গাস্নানে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- ফকির লালন শাহ