‘তেল চুরি’, ব্রাজিল বাড়ি ও তাঁদের আয়েশি জীবন
ব্রাজিল বাড়ির কথা মনে আছে? নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ছয়তলা এই বাড়ির পুরোটাই আঁকা ব্রাজিলের পতাকা। ফলকে লেখা নাম ‘ব্রাজিল বাড়ি’। ২০১৮ সালে ফুটবল বিশ্বকাপ চলার সময় বাড়িটিতে গিয়েছিলেন ঢাকায় ব্রাজিলের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত জোয়াও তাবাজারা ডি অলিভেরিয়া জুনিয়র।
ব্রাজিল বাড়ির মালিক যমুনা তেল কোম্পানির চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী জয়নাল আবেদীন ওরফে টুটুল। তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি জ্বালানি তেল চুরিসহ দুর্নীতি এবং অবৈধ আয়ে জমি, ফ্ল্যাটসহ অনেক সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
জয়নাল এক দশক ধরে যমুনা অয়েল কোম্পানি লেবার ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি। ইউনিয়নের কার্যালয় শুধু চট্টগ্রামে। কিন্তু তিনি ফতুল্লার ডিপোতে ইউনিয়নের নামে নিজের একটি কার্যালয়ও তৈরি করেছেন। বিগত সরকারের সময় নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য আজমেরী ওসমানের ঘনিষ্ঠ হন তিনি। গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানের পরও আড়াল থেকে ডিপো নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে অভিযোগ আছে। এখন তিনি স্থানীয় বিএনপি নেতাদের ঘনিষ্ঠ হয়েছেন।
যমুনা তেল কোম্পানির একজন কর্মকর্তা গত মার্চে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে জয়নালের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এতে বলা হয়, জুলাই আন্দোলনে খুনের মামলার আসামি হয়ে পলাতক রয়েছেন জয়নাল। তবে অফিসে ঠিকই তাঁর নামে হাজিরা দেখানো হচ্ছে। কোম্পানি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
উল্লেখ্য, খাতায় সইয়ের মাধ্যমে যমুনায় হাজিরা নেওয়া হয়।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জয়নালের ব্রাজিল বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ২ অক্টোবর গিয়ে দেখা যায়, বাড়িটি সেভাবেই পড়ে আছে। মেরামত করা হয়নি। কেউ বসবাসও করেন না।
পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা—সরকারি এই তিন তেল কোম্পানি সূত্র জানিয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানে ভুয়া হিসাব দেখিয়ে জ্বালানি তেল চুরি করে বিক্রির একটি চক্র তৈরি হয়েছে। কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত এ চক্রে। এর মূলে আছেন জয়নালের মতো তেল কোম্পানির শ্রমিক সংগঠনের (সিবিএ) কয়েকজন নেতা, যাঁরা তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী।
- ট্যাগ:
- বাংলাদেশ
- অনিয়ম-দুর্নীতি