বঙ্গভঙ্গ এবং এর পরিণাম

যুগান্তর মোহাম্মদ হাসান শরীফ প্রকাশিত: ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৩:০০

ব্রিটিশরা নিজেদের স্বার্থেই বঙ্গভঙ্গ করেছিল। একইসঙ্গে যে খেলাটা ১৮ শতকে খেলেছিল, সেটারই পুনরাবৃত্তি করেছিল বিশ শতকে। ১৮ শতকে সুযোগটি লুফে নিয়ে আঙুল ফুলে কলাগাছ না, বটগাছ হয়েছিল যারা, তারা এবার সুযোগ খানিকটা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। সহিংস কার্যক্রমের মাধ্যমে বঙ্গভঙ্গ তারা রোধ করতে পেরেছিল। কিন্তু যে পরিণাম তাদের ভোগ করতে হয়েছিল, তা ছিল ভয়াবহ। কলকাতা থেকে দিল্লিতে সরিয়ে নেওয়া হয় রাজধানী, বাংলার আয়তনও কমানো হয়। আর এর মাত্র ৩০ বছর পর তারাই আবার বঙ্গভঙ্গ সম্পন্ন করেছিল, পরাজয়ের দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে। অন্যদিকে বঙ্গভঙ্গ রদের ফলে যারা কষ্ট পেয়েছিল, তারাই শেষ হাসিটি হেসেছিল, আজ নতুন পতাকা আর নতুন মানচিত্র পেয়েছে। ১৯০৫ সালে যে অঞ্চলটি নিয়ে পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশ গঠিত হয়েছিল, অনেকটা সেই এলাকা নিয়েই ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট জন্মলাভ করে পূর্ব পাকিস্তান এবং আড়াই দশকের কম সময় পর একই সীমারেখা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। এ ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়ে এটিই প্রমাণিত হয়েছে যে, ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ ছিল যথার্থ পদক্ষেপ।


বঙ্গভঙ্গ ১৮০৫ সালের ১৬ অক্টোবর কার্যকর হয়। তবে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল আরও প্রায় অর্ধশত বছর আগে। ১৮৫৩ সালে স্যার চার্লস গ্র্যান্ট এবং ১৮৫৪ সালে লর্ড ডালহৌসি বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব করেন। ব্রিটিশরা বাংলা দিয়েই ভারতবর্ষে তাদের উপনিবেশ শুরু করেছিল। বাংলা ছিল ওই সময়ের ব্রিটিশ ভারতের সর্বপ্রধান ও সবচেয়ে বড় প্রদেশ। প্রায় ২,৪৮,১২০ বর্গমাইলের এ বিশাল প্রদেশের শাসনকাজ সহজ করাই ছিল বঙ্গভঙ্গের প্রধান লক্ষ্য। ১৮৯৮ সালে লর্ড কার্জন ভাইসরয় নিযুক্ত হলে তিনি বঙ্গ প্রদেশের প্রশাসনিক সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হন এবং এরই ধারাবাহিকতায় ১৯০৩ সালে বঙ্গ বিভাগের একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। ১৯০৪ সালে তিনি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য বাংলার পূর্বাঞ্চলের বেশ কয়েকটি শহর পরিদর্শন করেন। এর মাধ্যমে দৃঢ়ভাবে অনুভব করেন যে, বাংলাকে ভাগ করা অপরিহার্য। অবশেষে বিলেতে বিশেষভাবে পরীক্ষার পর ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হয়। নতুন প্রদেশের নাম রাখা হয় ‘পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশ’। প্রথম গভর্নর নিযুক্ত হন ব্যামফিল্ড ফুলার (১৮৫৪-১৯৩৫)।


পূর্ববঙ্গ তথা আজকের বাংলাদেশের মানুষের জন্য বঙ্গভঙ্গ কেন জরুরি ছিল? বাংলা ভাগ নিয়ে গবেষণাকারী মার্কিন অধ্যাপক জন আর ম্যাকলেইন উচ্চপদে সরকারি পদে হিন্দুদের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, ১৯০১ সালে তৎকালীন বাংলার সরকারের অধীনে উচ্চ পর্যায়ের নিয়োগের ক্ষেত্রে মুসলিমরা মাত্র ৪১টি পদ পেয়েছিল। অন্যদিকে মুসলিম জনসংখ্যার তিনভাগের একভাগ হয়েও হিন্দুরা নিয়োগ পেয়েছিল ১২৩৫টি উচ্চপদ।


১৯০৫ সালে আরেক সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বঙ্গভঙ্গের আগে মন্ত্রণালয়, বিভাগ, জেলা এবং সাবডিভিশনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর মাত্র ছয় ভাগের এক পদে মুসলিমরা নিয়োজিত রয়েছে। পুলিশ বিভাগে মুসলমানদের উপস্থিতি ছিল আরও খারাপ। শতকরা ৫৯ ভাগ মুসলমান জনসংখ্যা থাকার পরও তখন ‘ইস্টার্ন বেঙ্গল রেঞ্জ’ নামে পরিচিত পুলিশ বিভাগে মোট ৫৪ জন ইনস্পেক্টরের মধ্যে চারজন, ৪৮৪ জন সাব ইনস্পেক্টরের মধ্যে ৬০ জন, ৪৫০ জন হেড-কনস্টেবলের মধ্যে ৪৫ জন এবং ৪৫৯৪ জন কনস্টেবলের মধ্যে মাত্র ১০২৭ জন কনস্টেবল ছিলেন মুসলমান।


এটা ঠিক, নতুন ব্যবস্থায় পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি হিন্দুরা ভাষাগত দিক থেকে সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছিল। তবে তারা এর বিরোধিতা করেছিল মূলত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণে। তাদের আশঙ্কা ছিল, বঙ্গভঙ্গের ফলে মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ব বাংলা এবং হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠ পশ্চিম বাংলা সৃষ্টি হবে, যা সামগ্রিকভাবে বাঙালি হিন্দুদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতাকে কমিয়ে দেবে। তাদের আশঙ্কা ছিল, কলকাতাকেন্দ্রিক হিন্দু আইনজীবী, জমিদার, শিল্পপতি এবং রাজনীতিবিদদের প্রভাব-প্রতিপত্তি আর বহাল থাকবে না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও