বাংলাদেশের খেলনা শিল্প ও গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশ

বিডি নিউজ ২৪ অলোক আচার্য প্রকাশিত: ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১১:১৮

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বরাবরই কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাত রয়েছে, যেগুলোর ওপর দেশের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান নির্ভরশীল। সময়ের পরিক্রমায় এই নির্ভরতার কাঠামো পরিবর্তিত হয় এবং নতুন খাত সামনে চলে আসে। বর্তমানে পোশাক শিল্প, ওষুধ ও প্লাস্টিক পণ্যের মতো প্রতিষ্ঠিত রপ্তানি খাতের পাশাপাশি বিকল্প একটি শিল্প হিসেবে খেলনা শিল্প অত্যন্ত দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। এটি কেবল দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদাই মেটাচ্ছে না, বরং বৈশ্বিক বাজারেও উল্লেখযোগ্য স্থান করে নিচ্ছে। অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য আনার ক্ষেত্রে এই খাত নতুন আশার সঞ্চার করেছে।


খেলনা শিল্পের বাজার এত দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে যে, এতে প্রচুর শ্রমশক্তি এবং কাঁচামালের প্রয়োজন। যদিও বেশিরভাগ খেলনা প্লাস্টিকের তৈরি, তবুও এর জন্য প্রচুর শ্রমিক প্রয়োজন, তাও তুলনামূলক কম মজুরিতে। দেশের বাজারে বিপুল চাহিদার পাশাপাশি বিদেশের বাজারেও তৈরি হচ্ছে চাহিদা। একটু মনোযোগী হলে আমরা এই সুযোগকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারব। আমাদের শৈশবের টমটমের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে। এই টমটম তৈরিতে মাটির সড়া, বাঁশ, দড়ি, আঠা ইত্যাদি প্রয়োজন হয়। সব উপকরণই গ্রামনির্ভর। সম্পূর্ণ গ্রামীণ উপাদান দিয়ে তৈরি এই খেলনা গত পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে টিকে আছে। মোস্তফা গত প্রায় বিশ বছর ধরে শিশুদের খেলনা বিক্রি করেই তার সংসার চালাচ্ছেন। আবার, ফিরোজ শুধু বিক্রিই নয়, স্থানীয় উপকরণ দিয়ে বাড়িতে কিছু খেলনাও তৈরি করেন। গ্রামে এখন প্লাস্টিক রিসাইকেলের ব্যবস্থা হয়েছে। দিনভর বিভিন্ন এলাকা থেকে প্লাস্টিকের বোতল ও অন্যান্য জিনিস সংগ্রহ করে তিনি রিসাইকেল কেন্দ্রে বিক্রি করেন।


খেলনা শিল্পের বিশ্ববাজার অত্যন্ত বিশাল, যার আকার ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি এবং ২০৩২ সালের মধ্যে তা ১৫০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই বিপুল বাজারে চীন বর্তমানে ৮০ শতাংশের বেশি অংশ নিয়ন্ত্রণ করলেও, সেখানে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় দেশটি নিম্নমানের খেলনা উৎপাদন থেকে ধীরে ধীরে সরে আসছে। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশসহ অন্যান্য উদীয়মান অর্থনীতির জন্য একটি বিশাল সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশ এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে খেলনা রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে।


রপ্তানি বৃদ্ধি: ২০১৬-১৭ অর্থবছরে খেলনাসামগ্রী রপ্তানির পরিমাণ ছিল মাত্র ১৫.২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেখান থেকে ছয় বছরে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে, ৮৮টি দেশে রপ্তানির মাধ্যমে তা প্রায় পাঁচ গুণ (৪০০% এরও বেশি) বেড়ে ৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।


ভবিষ্যত সম্ভাবনা: নীতিগত সহায়তা পেলে এবং এই শিল্পের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা সম্ভব হলে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের খেলনা রপ্তানির আকার বেড়ে প্রায় ৪৭ কোটি ডলারে (৪৭০ মিলিয়ন ডলার) পৌঁছাতে পারে। এর ফলে বৈশ্বিক খেলনা রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ২৮তম হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।


দেশীয় বিনিয়োগ ও বাজার: বর্তমানে দেশে খেলনা খাতে প্রায় ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এই বিনিয়োগ দ্বিগুণ হতে পারে। এই শিল্পের প্রায় ২৫০টি প্রতিষ্ঠান বর্তমানে খেলনা উৎপাদনে নিয়োজিত।


বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া প্লাস্টিকের খেলনার একটি বড় অংশ ইউরোপের বাজারে যায়। রপ্তানি বাজারের সর্বোচ্চ ৩১.৭৬ শতাংশ রপ্তানি হয় স্পেনে, এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে ইতালি ও ফ্রান্স। প্লাস্টিকের খেলনা রপ্তানিতে বার্ষিক ১৬ শতাংশ গড় প্রবৃদ্ধি ধরলে ২০৩০ সালে বাংলাদেশে তৈরি খেলনার রপ্তানি বাজার ১৫ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে। এই বাজারের আরেকটি বড় সুবিধা হলো, বেশিরভাগ খেলনা দ্রুত ভোক্তার হাত থেকে রিসাইকেল হয়ে পুনরায় খেলনায় রূপান্তরিত হয়। অর্থাৎ, এটি টেকসই পণ্য নয়, ফলে এর চাহিদা অন্যান্য পণ্যের তুলনায় অনেক বেশি।


খেলনা শিল্প একটি শ্রমঘন খাত, যেখানে বিপুল সংখ্যক জনবল প্রয়োজন। বর্তমানে এই খাতে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন মানুষ কর্মরত রয়েছেন। এর একটি বড় অংশ গ্রামে বসবাসকারী অদক্ষ ও স্বল্প দক্ষ নারী-পুরুষ, যাদের অপেক্ষাকৃত কম অর্থের বিনিময়ে কাজে লাগানো সম্ভব। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এর তথ্যমতে, খেলনা শিল্পে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন, যার মধ্যে ৮০ শতাংশই নারী।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও