রাজপথে শিক্ষক, রাষ্ট্র নীরব: এমপিওভুক্তদের বঞ্চনা

বিডি নিউজ ২৪ অধ্যাপক ড. খালিদুর রহমান প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:৩৫

কাজী কাদের নেওয়াজের ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ কবিতায় দিল্লির বাদশাহ আলমগীরের সামনে শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধাবনত রাজার সেই চিরন্তন প্রতিচ্ছবি আমাদের শিখিয়েছিল, শিক্ষকই রাজাধিরাজের ঊর্ধ্বে। কিন্তু আজ যেন সেই কাব্যিক সংবিধান উল্টে গেছে। শেখ হাসিনা হোন কিংবা মুহাম্মদ ইউনূস, যারাই ক্ষমতায় থাকুন না কেন, যখন শিক্ষকরা তাদের ন্যায্য অধিকার নিয়ে রাস্তায় নামেন, তখন তাদের বলা হয় ‘বাধাদানকারী’। যারা প্রজন্ম গড়েন, তারাই আজ অবহেলিত বেতনভোগী মাত্র। রাষ্ট্রের বিলাসে অর্থের অভাব হয় না, কিন্তু শিক্ষকের প্রাপ্য সম্মান আর সামান্য ভাতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যেন সে রাজকোষ নিঃশেষ হয়ে যায়।


বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার এক অবিচ্ছেদ্য স্তম্ভ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা আবারও রাজপথে নেমেছেন ন্যায্য দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানাতে। এমপিওভুক্ত (Monthly Pay Order) শিক্ষকরা বছরের পর বছর সীমিত আর্থিক সুবিধার মধ্যে নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। কিন্তু ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয় তাদের বাধ্য করেছে নিজেদের ন্যায্য দাবি তুলে ধরতে। বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধির আবেদন এখন তাদের টিকে থাকার আর্তি হয়ে উঠেছে। কিন্তু সেই দাবি জানাতে গিয়ে লাঠিপেটার শিকার হয়েছেন শিক্ষকরা। তাদের যৌক্তিক আন্দোলন ছত্রভঙ্গ করতে ব্যবহার করা হয়েছে জলকামান।


তাদের এই আন্দোলন কেবল টাকার জন্য নয়, বরং এটি বঞ্চনা, অবহেলা আর অবমূল্যায়নের বিরুদ্ধে এক দীর্ঘশ্বাস। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অবদান অনস্বীকার্য, কিন্তু রাষ্ট্রের নীতিগত মনোযোগ ও সহানুভূতি তাদের প্রতি আজও সীমিত পর্যায়েই রয়ে গেছে।


তাদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনার নির্মম পরিসংখ্যান পাওয়া যায় তাদের প্রতিদিনের ক্ষুণ্নিবৃত্তির লড়াইয়ে। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ২৬ হাজার ৪৪৭টি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার শিক্ষক এবং ১ লাখ ৭৭ হাজার কর্মচারী কর্মরত আছেন। অর্থাৎ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার এক বিশাল অংশ সরাসরি এই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নির্ভরশীল।


এই শিক্ষকরা সরকারের কাছ থেকে মূল বেতন ও কিছু সীমিত ভাতা পান। বর্তমানে বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রাথমিক যোগদানকারী একজন সহকারী শিক্ষক এমপিও প্রকল্পের আওতায় মাসে ১২,৫০০ টাকা বেতন পান, যার ১০ শতাংশ অবসরভাতার জন্য কর্তন করা হয়। তারা মাসে মাত্র ১,০০০ টাকা বাড়িভাড়া, ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা এবং উৎসব ভাতা হিসেবে মূল বেতনের ৫০ শতাংশ পান। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় বাড়িভাড়া ৫০০ টাকা বাড়িয়ে ১,৫০০ টাকা করার পরিপত্র জারি করেছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়, এটি কি বর্তমান বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ?


ঢাকা কিংবা বিভাগীয় শহরে এখন একটি ছোট পরিবারের জন্য একটি সাধারণ ফ্ল্যাট ভাড়া দিতে হয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। অথচ একজন শিক্ষক যার মাসিক বেতন ১২,৫০০ থেকে ৪৪,০০০ টাকার মধ্যে, এবং তার বাড়িভাড়া ভাতা মাত্র ১,৫০০ টাকা। চিকিৎসা ভাতার ক্ষেত্রেও একই কষ্টকর অবস্থা। আজকাল ৫০০ টাকা দিয়ে কোনো হাসপাতালের সাধারণ চিকিৎসাও সম্ভব নয়।


উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তুলনা দূরে থাক, পাশের দেশগুলোতেও শিক্ষকরা তুলনামূলকভাবে অনেক ভালো অবস্থায় আছেন। ভারতে একই ধরণের প্রাথমিক যোগদানকারী একজন সহকারী শিক্ষক মাসে অন্তত ২০,০০০ রুপি, পাকিস্তানে ৪০,০০০ রুপি এবং শ্রীলঙ্কায় ৩৫,০০০ রুপি বেতন পান। এই তুলনাই বলে দেয় আমরা শিক্ষকদের কোথায় দাঁড় করিয়ে রেখেছি।


শিক্ষক সংগঠনগুলো সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে অনেকদিন ধরে। গত কয়েক মাস হল ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করছে দারা। শুরুতে মানববন্ধন ও প্রতীকী অনশন দিয়ে শুরু হলেও পরে তা রূপ নেয় অনির্দিষ্টকালের অবস্থান কর্মসূচিতে।


গত ১২ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করলে পুলিশের লাঠিচার্জ, জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেডের ঘটনা ঘটে। এর আগে ১৩ অগাস্ট একই দাবিতে ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট’ প্রেস ক্লাবের সামনেই বিক্ষোভ সমাবেশ করেছিল।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও