এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দুরবস্থা দূর করুন

জাগো নিউজ ২৪ হাসান হামিদ প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১২:২৫

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় এক অদৃশ্য বৈপরীত্য বহুদিন ধরেই গভীরভাবে শেকড় গেড়ে বসেছে। একদিকে সরকার শিক্ষার মানোন্নয়নে নানা পরিকল্পনা ও কর্মসূচির ঘোষণা দিচ্ছে, অন্যদিকে সেই শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম চালিকাশক্তি—বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা—জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার লড়াইয়ে প্রতিদিন নিঃশেষ হচ্ছেন। ইউনেসকোর সর্বশেষ গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট–এর তথ্যে জানা যায়, বাংলাদেশে মাধ্যমিক পর্যায়ের ৯৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। অর্থাৎ, মাধ্যমিক শিক্ষার মূল ভার বহন করছে বেসরকারি শিক্ষক সমাজ, অথচ তাদের জীবনের মান আজ চরম অনিশ্চয়তায়।


বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য বলছে, দেশে মোট ২১ হাজার ৮৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৯ হাজার ৭৫৭টি বেসরকারি। অর্থাৎ, ৯৩ দশমিক ৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানই সরকারি নয়। এই প্রতিষ্ঠানে পড়ছে ৯৪ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ৮৭ লাখেরও বেশি—অর্থাৎ ৯৩ শতাংশেরও বেশি শিক্ষার্থী। জাতির মেরুদণ্ড যে শিক্ষকেরা, সেই মেরুদণ্ডের ৯৩ শতাংশই রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত!


দীর্ঘদিন ধরে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা দাবি জানিয়ে আসছেন—মূল বেতনের ওপর যৌক্তিক হারে বাড়িভাড়া ভাতা, চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধি, উৎসব ভাতা শতভাগ প্রদান, এবং সবচেয়ে বড় দাবি—বেসরকারি শিক্ষার জাতীয়করণ। এই দাবির পেছনে রয়েছে তাদের বাস্তব জীবনযুদ্ধের নির্মম অভিজ্ঞতা। সম্প্রতি এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ১৩ অক্টোবর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশের সব বেসরকারি এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে। কারণ, শিক্ষকদের ওপর প্রেস ক্লাবের সামনে পুলিশি হামলা, লাঠিচার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ—সবই ছিল তাদের ন্যায্য দাবি দমনের এক নির্মম উদাহরণ। এর আগে সরকার শিক্ষকদের ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু বাস্তবে সেটি রূপ নেয় মাত্র ৫০০ টাকা বৃদ্ধিতে। এমন হাস্যকর সিদ্ধান্ত শিক্ষক সমাজকে ক্ষুব্ধ করেছে।


এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আর্থিক বাস্তবতা অত্যন্ত করুণ। একজন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক চাকরিতে যোগদানের সময় মূল বেতন পান মাত্র ১২ হাজার ৫০০ টাকা। এর সঙ্গে যুক্ত হয় ১ হাজার টাকা বাড়িভাড়া, ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা, আর ১ হাজার টাকা বিশেষ প্রণোদনা। অবসর ও কল্যাণ তহবিলের নামে মূল বেতনের ১০ শতাংশ কেটে রাখার পর হাতে আসে সর্বোচ্চ ১৩-১৪ হাজার টাকার মতো। একজন কলেজের প্রভাষকের অবস্থাও খুব ভিন্ন নয়—মূল বেতন ২২ হাজার, কিন্তু সব বাদে হাতে পান প্রায় ২২ হাজার ৩০০ টাকা।


এই টাকায় একজন শিক্ষক পরিবার চালাবেন কীভাবে? ঢাকা শহরে একক রুমের ভাড়া ১০-১২ হাজার টাকা, বাজার খরচ, সন্তানের পড়াশোনা—সব মিলিয়ে জীবনযাপন যেন অসম্ভব হয়ে পড়ে। এখানে আরো অন্যায্য বিষয় হলো—ঢাকা, জেলা সদর কিংবা প্রত্যন্ত গ্রাম—সবার জন্য একই বেতন কাঠামো। অথচ জীবিকার ব্যয় এক জায়গায় অন্য জায়গার তুলনায় বহুগুণ বেশি। তবু বেতনে কোনো ভৌগোলিক পার্থক্য নেই।


অনেকে মনে করেন, শিক্ষকরা প্রাইভেট টিউশনি করেই ভালো আয় করেন। বাস্তবতা সম্পূর্ণ আলাদা। গণিত, ইংরেজি বা বিজ্ঞান বিভাগের কিছু শিক্ষক হয়তো প্রাইভেট পড়িয়ে কিছুটা অতিরিক্ত আয় করতে পারেন, কিন্তু ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, বাংলা বা ইসলাম শিক্ষা বিভাগের শিক্ষকদের তেমন সুযোগ নেই। ফলে শিক্ষক সমাজের বড় অংশই দারিদ্র্য ও হতাশার চক্রে আটকে থাকে। তাদের মাসের শেষে হাতে থাকা অল্প কিছু টাকায় সংসার চলে না, চিকিৎসা ব্যয় মেটানো তো দূরের কথা। অথচ রাষ্ট্র এই শিক্ষকদেরই বলছে, তারা জাতির মেরুদণ্ড।


এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আন্দোলনের ইতিহাস নতুন নয়। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ২১ দিন অবস্থান কর্মসূচি পালন করে ১ আগস্ট শুরু হয়েছিল আমরণ অনশন। পরে সরকারের আশ্বাসে অনশন ভাঙা হলেও সেই আশ্বাসের কোনো বাস্তব রূপ দেখা যায়নি। এরপরও শিক্ষকরা থেমে থাকেননি—২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রতীকী অনশন, আগস্টে মহাসমাবেশ ও পদযাত্রা। প্রতিবারই সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কিন্তু ফলাফল একই—‘লাঠি-লজেন্স নীতি’।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও