আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিতে বাংলাদেশিরা

যুগান্তর আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু প্রকাশিত: ১১ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৩৫

২০২৫ সালের জনগণনা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা ৩৪ কোটি ৬৮ লাখ। বিশ্বে এমন কোনো জাতিগোষ্ঠী নেই, যাদের প্রতিনিধিত্ব যুক্তরাষ্ট্র্রের জনসংখ্যার অন্তর্ভুক্ত নয়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রধান দুটি ভাষা ইংরেজি ও স্প্যানিশ ছাড়াও প্রায় ৮০০ ভাষা ও উপভাষা বা আঞ্চলিক ভাষায় নিজ নিজ জাতির মানুষ কথা বলে। এর মধ্যে লিখিত রূপ আছে এমন ৩৫০ থেকে ৪৩০টি ভাষাভাষীর লোকজন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে। সেদিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অন্যতম ভাষাবৈচিত্র্যের দেশ। নিউইয়র্কে জাতি ও ভাষাবৈচিত্র্য সবচেয়ে বেশি। সর্বশেষ জনগণনা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত লোকসংখ্যা তিন লাখের বেশি, যার মধ্যে এক লাখই বাস করে নিউইয়র্ক সিটিতে। বাংলাদেশিরা নিউইয়র্কে দ্রুতবর্ধনশীল জনগোষ্ঠীর অন্যতম। ইউএস সেন্সাস ব্যুরো, আমেরিকান কমিউনিটি সার্ভে এবং এশিয়ান আমেরিকান ফেডারেশন সেন্সাস ইনফরমেশন সেন্টারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নিউইয়র্কে গত দেড় দশকে, অর্থাৎ ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জনসংখ্যা বেড়েছে ৬৬ শতাংশ। বর্তমানে নিউইয়র্ক সিটির প্রায় ৯০ লাখ জনসংখ্যার এক শতাংশের বেশি বাংলাদেশি। নিউইয়র্কে বসবাসকারী এশিয়ান জনগোষ্ঠীর মধ্যে বাংলাদেশিদের অবস্থান ১২তম।


নিউইয়র্কে বাংলাদেশিদের সংখ্যাবৃদ্ধির সঙ্গে তাদের মূলধারার রাজনীতিতে অংশগ্রহণ বেড়েছে। নিউইয়র্কে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান সিটি কাউন্সিলের সদস্যপদে নির্বাচিত হওয়ার জন্য বাংলাদেশি প্রার্থীরা গত দেড় দশক ধরে একাধিক সিটি কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্ট বা নির্বাচনি এলাকা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এবং ২০২১ সালের সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ব্রুকলিনে সিটি কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্ট-৩৯ থেকে নির্বাচিত হন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তুখোড় কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট ৩৪ বছর বর্ষীয়া শাহানা হানিফ। ৫১ আসনবিশিষ্ট নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে তিনিই প্রথম মুসলিম ও প্রথম মুসলিম নারী সদস্য নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। চলতি বছর তিনি সিটি কাউন্সিলে দ্বিতীয় মেয়াদেও বিজয় নিশ্চিত করেছেন; গত জুনে অনুষ্ঠিত ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারিতে প্রদত্ত ভোটের ৭০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে।


এছাড়া সোমা সাঈদ নামে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একজন আইনজীবী ২০২১ সালের নির্বাচনে নিউইয়র্ক সিটি সিভিল কোর্টের বিচারক পদে প্রদত্ত ৪,০৩,৩৯৬ ভোটের মধ্যে ১,৫৩,৮৭০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার এ মেয়াদ শেষ হবে ২০৩২ সালের ১ জানুয়ারি। তবে তিনি আরও উচ্চতর বিচারক পদের জন্য ২০২৫ সালের ৪ নভেম্বরের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে বিজয়ী হলে তিনি হবেন নিউইয়র্ক সুপ্রিমকোর্টের ১১তম জুডিশিয়াল ডিস্ট্রিক্টের পাঁচজন বিচারকের একজন। এবার এ পদে এটি হতে যাচ্ছে বিশেষ সাধারণ নির্বাচন।


শুধু তাই নয়, নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলি নির্বাচনে ডিস্ট্রিক্ট-৩৬ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মেরি জোবাইদা। আগামী বছরের ৩ নভেম্বর এ নির্বাচন। এ আসনের বর্তমান অ্যাসেম্বলিম্যান নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানি। তিনি মেয়র পদে নির্বাচিত হলে তার আসনে মেরি জোবাইদা নির্বাচনে সাফল্য লাভ করতে পারেন বলে নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশিরা আশাবাদী। নির্বাচনের এখনো এক বছর বাকি আছে। মেরি ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে তার প্রার্থিতা ঘোষণা করে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেছেন। উল্লেখ্য, মেরি জোবাইদা এর আগেও নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট-৩৪ থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। সেই নির্বাচনে তিনি প্রদত্ত ভোটের প্রায় ৩৪ শতাংশ লাভ করেন। আমেরিকান মূলধারার রাজনীতিতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের অংশগ্রহণই প্রমাণ করে, মূলধারার নির্বাচনি রাজনীতিতে তাদের আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে। নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট-২৪ থেকে আগামী নির্বাচনে ডেমোক্রেট দলীয় প্রার্থী মাহতাব খানও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।


বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকানরা যে শুধু নিউইয়র্কে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এবং নির্বাচিত হচ্ছেন তা নয়, অন্যান্য অঙ্গরাজ্যেও স্থানীয় সরকার ও অঙ্গরাজ্যের আইনসভায় নির্বাচিত হচ্ছেন। তবে অঙ্গরাজ্যে বেশ কয়েকজন কেবল আইনসভার উচ্চকক্ষ বা সিনেটে নির্বাচিত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত কেবল নিউ হ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্যের নিম্নকক্ষ বা স্টেট অ্যাসেম্বলিতে একজন নির্বাচিত হয়েছেন। জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের সিনেটে শেখ এম রহমান জর্জিয়া সিনেট ডিস্ট্রিক্ট-৫ থেকে চতুর্থ মেয়াদে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি সেখানে প্রথম মুসলিম ও প্রথম এশিয়ান সিনেটর। একই রাজ্যে নাবিলাহ ইসলাম নামে এক নারী জর্জিয়া সিনেট ডিস্ট্রিক্ট-৭ থেকে প্রথম মুসলিম নারী সিনেটর নির্বাচিত হয়েছেন দ্বিতীয় মেয়াদে। নিউইয়র্কের পাশের অঙ্গরাজ্য কানেকটিকাটের সিনেট ডিস্ট্রিক্ট-৪ থেকে মাসুদুর রহমান দ্বিতীয় মেয়াদে রেকর্ড পরিমাণ ভোট পেয়ে স্টেট সিনেটর হিসাবে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। দ্বিতীয় নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হন ৩৩ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে, যা কানেকটিকাটের সিনেট নির্বাচনে গত ৫০ বছরের মধ্যে কোনো সিনেটর প্রার্থীর সর্বাধিক প্রাপ্ত ভোট। তার প্রতিপক্ষ রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী পেয়েছিলেন ১৮ হাজার ভোট। ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের সিনেট ডিস্ট্রিক্ট-৩৭ থেকে সিনেটর নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশি আমেরিকান সাদ্দাম সেলিম।


নিউইয়র্ক সিটির গা-ঘেঁষা অঙ্গরাজ্য নিউ জার্সির প্লেইন্সবরো টাউনশিপ কাউন্সিল থেকে ২০০৭ থেকে কাউন্সিলম্যান হিসাবে নির্বাচিত হয়ে আসছেন ড. নূরান নবী। তিনি টানা পঞ্চম মেয়াদে কাউন্সিলম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া জাহাঙ্গীর আলম নামে একজন বাংলাদেশি আমেরিকান মিশিগানের হ্যামট্রামাকে স্কুল বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। যুক্তরাষ্ট্রে কোনো স্কুল বোর্ডে তিনিই প্রথম বাংলাদেশি নির্বাচিত প্রতিনিধি। রিপাবলিকান পার্টি থেকে বাংলাদেশি আমেরিকান আবুল বাশার খান ২০১৬ থেকে নিউ হ্যাম্পশায়ারে রকিংহ্যাম অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট-২০ থেকে রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়নে সেখানকার স্টেট অ্যাসেম্বলিতে নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে ২০১২-২০১৪ সালেও তিনি একই আসন থেকে অ্যাসেম্বলিম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।


শুধু মূলধারার রাজনীতিতে নয়, যুক্তরাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোতেও বাংলাদেশি-আমেরিকানদের ব্যাপক অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো। নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট, যা ‘এনওয়াইপিডি’ নামেই বেশি পরিচিত, এ সংস্থা বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণের উর্বর ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। ‘এনওয়াইপিডি’ যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম ও প্রভাবশালী আইনশঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, যে বাহিনী নিউইয়র্ক সিটির ৯০ লাখ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বে নিয়োজিত। বাংলাদেশি-আমেরিকান পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) হিসাব অনুযায়ী, এনওয়াইপিডির প্রায় ৩৩ হাজার ইউনিফর্মধারী পুলিশ সদস্যের মধ্যে এক হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য নিয়োগ লাভ করেছেন বাংলাদেশি কমিউনিটি থেকে। এটি প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য গর্বের ব্যাপার। তাদের মধ্যে কেবল মুসলিম নয়, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হিন্দুরাও আছেন। এছাড়া এনওয়াইপিডির বিভিন্ন বিভাগে আরও ১৯ হাজার

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও