গাজা শাসনে ব্লেয়ারের কেন এত আগ্রহ

প্রথম আলো গাজা মনযূরুল হক প্রকাশিত: ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৩:১১

গত ২৯ সেপ্টেম্বর গাজায় শান্তি ফেরাতে হোয়াইট হাউস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনা পেশ করেছে, যেখানে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারকে পরিচয় করানো হয়েছে ‘শান্তি পরিষদ’–এর সদস্য; যেই পরিষদ গাজা যুদ্ধ–পরবর্তী ফিলিস্তিনি কারিগরি কমিটির তত্ত্বাবধান করবে।


কিন্তু ঠিক তার আগের দিন ইসরায়েলের জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম হারেৎজ ‘গাজা ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজিশনাল অথরিটি’ (জিআইটিএ)-এর পরিকল্পনা নথি প্রকাশ করে দেয়।


জিআইটিএর ২১ পৃষ্ঠার এই ‘গোপন’ পরিকল্পনা, যা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উপস্থাপন করার জন্য তৈরি করা হয়েছে, হারেৎজ জানায় যে ইসরায়েলের সরকারি সূত্র নিশ্চিত করেছে, তা টনি ব্লেয়ারের মাধ্যমে প্রস্তাবিত।


ইকোনমিস্টের তথ্য অনুযায়ী, জিআইটিএ জাতিসংঘের পাঁচ বছরের ম্যান্ডেটে ‘সর্বোচ্চ রাজনৈতিক ও আইনি কর্তৃত্ব’ হিসেবে কাজ করবে, যা আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাটদের দিয়ে পরিচালিত হবে।


ব্লেয়ার ২৫ জনের একটি সচিব দল এবং ৭ জনের বোর্ড মেম্বারের মাধ্যমে গাজার বাইরে থেকে তত্ত্বাবধান পরিচালনা করবেন। গাজার বাইরে মানে প্রাথমিকভাবে মিসরের এল-আরিশ থেকে পরিচালিত হবে, পরে গাজায় স্থানান্তরিত হবে। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে আরব বহুজাতিক বাহিনী।


নিউ আরবের কলামিস্ট জো ম্যাকরনের মতে, ‘আমেরিকা-ইসরায়েল সমর্থিত এই পরিকল্পনা এক তিক্ত পরিহাস এবং ফিলিস্তিনিদের তাদের নিজ ভূমিতে প্রান্তিক করে দেওয়ার একটি ছক।’ তিনি লেখেন, ‘এই পরিকল্পনায় সন্দেহ জাগা শুরু হয় তখন থেকে, যখন মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা বাহিনী ১০ সেপ্টেম্বর ব্যবসায়ী সামির খালিলাকে গ্রেপ্তার করে, যিনি আমেরিকার সমর্থনে গাজার ট্রানজিশনাল গভর্নর হিসেবে প্রস্তাবিত ছিলেন।’


ব্লেয়ার গাজার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এসেছেন, তা ইতিমধ্যে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে। বিশ্লেষকদের ধারণা, তাঁর ‘গাজা আন্তর্জাতিক স্থানান্তর কর্তৃপক্ষ’ (জিআইটিএ) নামের এই পরিকল্পনা যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় একটি বিদেশি-নিয়ন্ত্রিত শাসনব্যবস্থা গড়তে চায়।


ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ঐতিহ্যের একটি পুনরাবৃত্তি—যেখানে ফিলিস্তিনিদের কণ্ঠ দমিয়ে বিদেশি স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। প্রশ্ন উঠেছে গত দুই বছরে ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার পর এই পরিকল্পনা কি শান্তি আনবে, নাকি গাজাকে আরও গভীর অন্ধকারে ঠেলে দেবে?


কীভাবে শাসন চালাবেন ব্লেয়ার


জিআইটিএ পরিকল্পনা একটি জটিল শাসনকাঠামো, যার আইনি ভিত্তি নেওয়া হবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ছাড়পত্রের মাধ্যমে। এটি গাজার রাজনীতি, আইন ও নিরাপত্তার সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণ নেবে, কিন্তু ফিলিস্তিনিদের হাতে থাকবে নামমাত্র ক্ষমতা।


হারেৎজের ফাঁস হওয়া দলিল অনুযায়ী, শীর্ষে থাকবে ৭ থেকে ১০ জনের একটি আন্তর্জাতিক বোর্ড, যার নেতৃত্ব দেবেন ব্লেয়ার নিজে। এই বোর্ডে প্রাধান্য থাকবে ব্যবসায়ীদের। ইতিমধ্যে যে ৪ জনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে, যাঁদের কেউই ফিলিস্তিনি নন। তাঁরা হলেন:


১. জাতিসংঘের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি সমন্বয়কারী সিগ্রিড কাগ, যিনি নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। আফগানিস্তানে ইসলামিক এমিরেত (তালেবান) ক্ষমতা দখল করার পরে ডাচ বাহিনীর সঙ্গে যেসব আফগান কাজ করেছেন, তাদের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মধ্যে ফেলে এসেছেন তিনি এবং এই অভিযোগে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। তাঁকে বলা হয় এই প্রস্তাবিত সদস্যদের মধ্যে সবচেয়ে কম বিতর্কিত।


২. অ্যাপোলো গ্লোবাল ম্যানেজমেন্টের প্রধান আমেরিকান ইহুদি ব্যবসায়ী মার্ক রোয়ান; যিনি নিজেকে ইসরায়েলের গর্বিত সমর্থক বলেন। গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনকে ‘ন্যায্য যুদ্ধ’ আখ্যা দিয়েছেন তিনি।


৩. মিসরীয় ধনকুবের নাগুইব সাওয়িরিস, টেলিযোগাযোগ ও স্বর্ণের ব্যবসা থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় করছেন তিনি। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক।


৪. ইহুদি ধর্মীয় নেতা আরিয়ে লাইটস্টোন; যিনি বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) সঙ্গে জড়িত। এই সংস্থায় ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ১ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন; যাকে ‘পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ’ বলে অভিহিত করেছে ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও