
ভোট ও বিপ্লব-চিন্তায় কুহেলিকা কাটুক
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশনের তোড়জোড় সত্ত্বেও সন্দেহ-সংশয় কিছু কমছে কি? একে তো জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভেদ দূর হয়নি; তার ওপর নীতিনির্ধারকদের নানা বক্তব্যে সংশয় বাড়ছে। বাংলাদেশের নির্বাচনের জন্য কেন ১৮ মাস লাগছে বা লাগবে, এমন প্রশ্নের জবাবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস অতিসম্প্রতি নিউইয়র্কে ডিজিটাল সংবাদমাধ্যম জিটিওকে বলেছেন, ‘অবশ্যই, আপনি বললেন, মানুষ বলছে অনেক সময় লাগছে। এমন মানুষও আছে, যারা বলছে ৫ বছর থাকুন, ১০ বছর থাকুন, ৫০ বছর থাকুন।’ এর আগে ২ সেপ্টেম্বর এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই অনুষ্ঠিত হবে। তবে সে নির্বাচনে কোনো বিদেশি শক্তি যেন থাবা বসাতে না পারে। সে জন্য তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর সর্বাত্মক সমর্থন ও সহায়তা চান।
নির্বাচন ইনক্লুসিভ তথা সবার অংশগ্রহণমূলক হবে কি না, সে নিয়েও নীতিনির্ধারকদের কথাবার্তা কুহেলিকাচ্ছন্ন। এ দেশের ভোটারদের বড় অংশই বড় দুই দল—বিএনপি ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগে বিভাজিত। শুরু থেকেই আমার মতো কারও কারও প্রত্যাশা ছিল, আওয়ামী লীগপ্রধান ও তাঁর ঘনিষ্ঠ যাঁদের গায়ে দুর্নীতি-দুঃশাসনের কাদা লেপ্টে রয়েছে, তাঁরা দলের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়ে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির অধিকারী নেতাদের দল পুনর্গঠনের সুযোগ দেবেন; কিন্তু সেটি তাঁরা করেননি। পরে সেনাপ্রধানের রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের ধারণাটিও বিতর্কের মুখে পড়ে ফলদায়ক হয়নি। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে ব্রিটিশ-আমেরিকান সাংবাদিক মেহেদি হাসানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল হিসেবে বৈধ হলেও তাদের কার্যক্রম স্থগিত আছে। তবে তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ রাখার অবস্থান যেকোনো সময় পরিবর্তন হতে পারে। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না, সে প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, এখন নয়, কারণ তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ আছে। তারা রাজনৈতিক দল হিসেবে এখনো বৈধ। কিন্তু কার্যক্রম আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। যেকোনো সময় কার্যক্রম নিষিদ্ধ রাখার অবস্থানের পরিবর্তন হতে পারে। তিনি আরও বলেন, ওই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সম্ভাবনা আছে। সে বক্তব্য প্রচার হলে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ১ অক্টোবর সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কোনো সম্ভাবনা নেই। এমন অবস্থায় প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন ও সংশয় জাগে। কেউ কেউ এমন মন্তব্যও করেন, নির্বাচনের আগে একটি ‘ডামি আওয়ামী লীগ’ বানানো হতে পারে। বড় কোনো দলের ডামি বানানোর এমন চেষ্টা আগের বিভিন্ন সরকারও করেছে। তবে সেগুলো হাস্যরসের সৃষ্টি করা ছাড়া আর কোনো ফল দেয়নি।
- ট্যাগ:
- মতামত
- জাতীয় সংসদ নির্বাচন