নয়া কৌশলে ভেজাল, পরাস্ত ভোক্তারা

www.ajkerpatrika.com আলম শাইন প্রকাশিত: ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১১:১৬

সংবিধানের ১৮ (১) অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে, ‘জনগণের পুষ্টির স্তর উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতি রাষ্ট্রের অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য বলে গণ্য হইবে।’ অথচ দেশে ঠিক উল্টোটা লক্ষ করছি আমরা। খাদ্যের পুষ্টিমান দূরের কথা, আসল খাদ্যই পাওয়া মুশকিল হয়ে গেছে এখন। ভেজালে ভেজালে সয়লাব যেসব খাবার, সে খাবারে পুষ্টি খোঁজার কী আছে আমাদের? ভেজালের জালে এমনভাবে জড়িয়ে গেছি আমরা যে ইচ্ছা করলেও সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারছি না সহজেই। বেরিয়ে আসার চেষ্টা করলে হয়তো না খেয়ে জীবন খোয়াতে হবে, নচেৎ খেয়ে জীবন খোয়াতে হবে; এমন একটা সংকটাপন্ন অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছি আমরা। সংগত কারণে বলা যেতে পারে, আমরা জিম্মি অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে।


সবাই জানেন, উৎকৃষ্ট দ্রব্যের সঙ্গে নিকৃষ্ট দ্রব্যের মিশ্রণই হচ্ছে ভেজাল। ভেজালের রয়েছে নানা রকমফের। ভেজাল দিতে গিয়ে ক্ষেত্রবিশেষে অসাধু ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন, যে কৌশলের কাছে আমরা বারবার হেরে যাচ্ছি। এর কারণ ভেজালের ধরন স্থায়ী নয়, একেকবার একেক ধরনের ভেজালের মুখোমুখি হতে হচ্ছে আমাদের। অর্থাৎ কৌশল বদলানো হচ্ছে। বিষয়টা এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে প্রতিনিয়ত ভেজাল খেয়ে খেয়ে এখন আজেবাজে খাবারও অনায়াসে হজম করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি আমরা।

দীর্ঘদিনের অভ্যাসের ফলে মানুষ এখন ভেজাল খাবার খেয়ে সহজে হজম করে ফেলছে। তবে একে অভ্যাস বলা একেবারে সঠিক নয়, কারণ অধিকাংশ মানুষই এসব খাবার খাচ্ছে অজান্তে। আবার অনেক ক্ষেত্রে জেনেশুনেও মানুষকে ভেজাল খাবার খেতে হচ্ছে, যেমন ফরমালিন মেশানো ফলমূল, মাছ, কিংবা ডিডিটি মেশানো শুঁটকি। এসবের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জানার পরও বিকল্পের অভাবে মানুষ তা খেতে বাধ্য হচ্ছে।

আগেও মানুষ ভেজাল খাবার খেত, এটা সত্যি। কিন্তু সেই পুরোনো ভেজাল খাবার এখন আর নেই। বর্তমানে সেই পুরোনো ভেজাল খাবারের মধ্যে নতুন নতুন ভেজাল মেশানো হচ্ছে। অনেকটাই বলা যায়, ভেজালের মধ্যেও ভেজাল দিচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। আরেকটু পরিষ্কার করে বললে বলতে হয়, এক নম্বর নয়, দুই নম্বর ভেজাল খাবার খাচ্ছেন এখন ভোক্তারা। যার ফলে প্রচণ্ড স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ছে দেশের মানুষ।


ভেজাল খাবার খেয়ে নীরবে প্রাণঘাতী রোগ বয়ে বেড়ালেও সহজে আমাদের শরীরে তা ধরা পড়ছে না। ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়লেও আমরা সেই রোগব্যাধি দ্রুত শনাক্ত করতে পারছি না। এর কারণ হচ্ছে, ভেজালের বিষক্রিয়া আমাদের শরীরে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে না। ফলে অনেকেরই ধারণা, ভেজালমিশ্রিত খাবার খেলে খুব বেশি ক্ষতি হয় না; বড়জোর পেটের পীড়া হতে পারে। অধিকাংশ মানুষের ধারণাই এমন; কাজেই ভেজালে আপত্তি নেই সেই অবুঝদের। অথচ রাসায়নিকমিশ্রিত সেসব ফলমূল কিংবা খাদ্রসামগ্রী খেয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে মানুষ, তা কিন্তু সহজেই টের পাচ্ছে না কেউ। টের পাচ্ছে না কেন তারা ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে অথবা ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগসহ নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাদের কিডনি, লিভার বিকল হচ্ছে কেন, তা-ও বুঝতে পারছে না।


অবধারিত সত্য হচ্ছে, ভেজালে ভেজালে সয়লাব দেশের অধিকাংশ পণ্যসামগ্রী কিংবা খাবারদাবার। তাই প্রশ্ন—কোথায় নেই ভেজাল? ওষুধ থেকে শুরু করে কাফনের কাপড়ে পর্যন্ত ভেজাল দিচ্ছেন অসাধুরা। ৯৫ শতাংশ মৌসুমি ফল ও শাকসবজিতে এখন রাসায়নিক মেশানো হচ্ছে। জিলাপি মচমচে রাখতে মবিল মেশানো হচ্ছে। মুড়ি ধবধবে করতে মেশানো হচ্ছে ইউরিয়াসহ নানান রাসায়নিক। কিছু নামীদামি কোম্পানি তরল শরবতের বোতলের লেবেলে বিভিন্ন ফলের ছবি এঁকে দিলেও ফলের কোনো নির্যাস পায়নি বিএসটিআই। মাছ, গুঁড়া মসলা, দুধ তথা শিশুখাদ্যে ভেজালের মহোৎসব চলছে। শুধু নামীদামি কোম্পানিই নয়, ফুটপাতের দোকানি মাছে দেওয়ার বরফ গলিয়ে শরবত বানিয়ে খাওয়াচ্ছেন তৃষ্ণার্তদের! এ তো গেল লোকচক্ষুর আড়ালে ভেজাল দেওয়ার কিছু নমুনা। এবার প্রকাশ্যে ভেজাল দেওয়ার প্রমাণ দিচ্ছি আমরা। সেটি হচ্ছে দুধের সঙ্গে নদীর পানি মেশানো। যদিও এটি কোনো নতুন বিষয় নয়, তথাপিও এই প্রামাণ্যচিত্রটি স্বচক্ষে দেখা যায় নদীপথে ঢাকার আশপাশ থেকে লঞ্চযোগে সদরঘাট এলে। তখন দেখা যায়, কিছু অসাধু দুধ ব্যবসায়ী দুধের ড্রামে নদীর পানি মেশাচ্ছেন। নদীর পানি সরাসরি, বিষয়টা ভাবতে কেমন লাগছে! দুধে পানি মেশানো অসাধুদের পুরোনো অভ্যাস। অনেক জোকসও আছে ওসব নিয়ে। কিন্তু সেটি যদি হয় টিউবওয়েলের পানি, তবু তা মানা যায়। কিন্তু মেশানো হচ্ছে নদীর পানি! শুধু তা-ই নয়, কৃত্রিম দুধ-ঘি-ডিম-চাল বানানোর কথাও জানতে পেরেছি আমরা। ভেজাল চাল নিয়েও এমন সংবাদ আমরা খবরের কাগজ মারফত জানতে পেরেছি। প্যাকেটজাত দুধের অবস্থা আরও ভয়ানক। প্যাকেটজাত দুধ-দইয়ে কীটনাশক, সিসা, অ্যান্টিবায়োটিক এসব মেশানো হচ্ছে!


এভাবে প্রতিটি জিনিসেই ভেজাল দিচ্ছেন অসাধুরা। যার শত শত দৃষ্টান্তও রয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হলে আরও অনেক ধরনের খাবারের বিষক্রিয়া ধরা পড়বে। বেরিয়ে আসবে মিশ্রিত বিষাক্ত রাসায়নিকের নামও। খাদ্যদ্রব্য ছাড়াও প্রসাধনসামগ্রীসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদিতে ভেজাল দিয়ে আসল জিনিসের চেহারাও পাল্টে দেওয়া হচ্ছে, ফলে আসল-নকল চেনাই কঠিন হয়ে পড়েছে এখন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও