বিজয়ই শেষ কথা নয়, আরও চ্যালেঞ্জ আছে

যুগান্তর নিউ ইয়র্ক আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু প্রকাশিত: ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১১:১৫

নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদে চূড়ান্ত নির্বাচনের আর মাত্র এক মাস বাকি। ৪ নভেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট জোহরান মামদানিই যে নিউইয়র্ক সিটির ১১৩তম ও প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন, তাতে আর কোনো সন্দেহ নেই। বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস, যিনি নিউইয়র্ক সিটির দ্বিতীয় কৃষ্ণাঙ্গ মেয়র ছিলেন, তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে পুনঃনির্বাচিত হওয়ার জন্য এতদিন ধরে নির্বাচনি অভিযানে সক্রিয় থাকলেও কয়েকদিন আগে মামদানির মুখ্য প্রতিদ্বন্দ্বী নিউইয়র্ক স্টেটের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু ক্যুমোর পক্ষে তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। কিন্তু জুনে ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে মামদানির বিপুল বিজয়ের পর অ্যাডামস নিজেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে চূড়ান্ত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দেওয়ার পর যতগুলো জরিপ হয়েছে, প্রতিটিতে তার অবস্থান ছিল তৃতীয়, এমনকি চতুর্থও। এ অবস্থায় তার পুনঃনির্বাচিত হওয়ার আশা যে খুবই ক্ষীণ, তা বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। অতএব তিনি হাল ছেড়ে দিয়েছেন।


মেয়র এরিক অ্যাডামসের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের কারণে জোহরান মামদানির নির্বাচিত হওয়ার পথে যে খুব বাধার সৃষ্টি হবে, এমন কোনো আশঙ্কা নেই। কারণ অ্যাডামস মেয়র হিসাবে দায়িত্ব পালন শুরু করার পর তার মেয়াদের দ্বিতীয় বছরেই আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্তে নামে খোদ এফবিআই এবং তারা প্রমাণ পায়, অ্যাডামস তার নির্বাচনি অভিযান চালানোর সময় যুক্তরাষ্ট্রে নির্মাণ ব্যবসায় নিয়োজিত বিদেশি নাগরিকের কাছে অর্থ গ্রহণ করেছেন মেয়র নির্বাচিত হলে তাকে সিটির নির্মাণকাজ পেতে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। এফবিআই তার বিরুদ্ধে মামলা করে এবং তার কয়েকজন সহযোগীকে গ্রেফতারও করে। তাকেও গ্রেফতার করা হতে পারে এমন সম্ভাবনা প্রবল হয়ে ওঠে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনি অভিযান শুরু হলে সিটির ডেমোক্রেট মেয়র এরিক অ্যাডামস রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্যাম্পেইন টিমের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করেন এবং প্রকাশ্যেই তার পক্ষ সমর্থন করেন। আমেরিকার সবচেয়ে জনবহুল ও ডেমোক্রেট সিটি নিউইয়র্কের মেয়রের সমর্থন ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য বাড়তি প্রাপ্তি ছিল। তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে এফবিআইর করা মামলার প্রক্রিয়া থেমে যায়। ট্রাম্পের প্রচ্ছন্ন আশীর্বাদ সত্ত্বেও অ্যাডামসের মেয়র পদে পুনঃনির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা ফিরে আসেনি। পুনঃনির্বাচনের জন্য তার প্রার্থিতা ঘোষণা মুখ রক্ষার চেষ্টা ছাড়া আর কিছু ছিল না। তিনি যেভাবে দেনাগ্রস্ত ছিলেন, তাতে তার পক্ষে নির্বাচনি অভিযান চালিয়ে যাওয়াও অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। নিউইয়র্ক টাইমসের গত সপ্তাহের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, তার বিরুদ্ধে করা মামলা লড়ার জন্য তিনি যেসব আইনি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করেছেন, ইতোমধ্যে তাদের পাওনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে তিন মিলিয়ন ডলার।


ডেমোক্রেটিক পার্টির উচ্চপর্যায়ের একটি অংশ, যারা পরবর্তী মেয়র হিসাবে মুসলিম ও সমাজতন্ত্রীকে নিউইয়র্ক সিটির পরবর্তী মেয়র হিসাবে দেখতে চান না, তারা দীর্ঘদিন থেকেই অ্যাডামসের ওপর চাপ সৃষ্টি করছিলেন, যাতে তিনি সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু ক্যুমোর পক্ষে তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। শেষ পর্যন্ত অ্যাডামস ২৯ সেপ্টেম্বর জোহরান মামদানিবিরোধীদের দাবির প্রতি সাড়া দিয়ে প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। তার ঘোষণায় মামদানিবিরোধী ডেমোক্রেট শিবিরে উচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়েছে, তবে অ্যাডামসের এ সিদ্ধান্তের ফলে মেয়র নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে অবশ্যই তা নতুন একটি মোড় নিয়েছে, যা নিউইয়র্ক সিটির সাম্প্রতিক ইতিহাসে দেখা যায়নি। কিন্তু আগের জরিপ ফলাফল যাচাই করলেই দেখা যায়, মামদানিবিরোধীদের অতিরিক্ত উচ্ছ্বসিত হওয়ার কোনো কারণ ঘটেনি। নির্বাচনের আগপর্যন্ত যে জরিপগুলো পরিচালিত হবে, সেগুলোতেও মামদানির ওপর বিরূপ কোনো প্রতিক্রিয়া পড়বে না। ২২ সেপ্টেম্বর ফক্স নিউজ পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, ভোটারদের ৪৫ শতাংশ জোহরান মামদানিকে, ২৭ শতাংশ স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু ক্যুমোকে, ১১ শতাংশ রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস সিলওয়াকে এবং মাত্র ৮ শতাংশ স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামসকে সমর্থন করেন। জরিপ ফলাফলে এটি স্পষ্ট, অ্যাডামস ভোটারদের আস্থা পুরোপুরি হারিয়েছেন। অতীতে পুনঃনির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আর কোনো মেয়রকে এত বাজে অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়নি।


অতএব, বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস নির্বাচনি দৌড় থেকে সরে দাঁড়ালেই যে মামদানির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী নিউইয়র্ক স্টেটের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু ক্যুমোর ভোটের পাল্লা খুব ভারী হবে, তেমন সম্ভাবনা ক্ষীণ। কারণ অ্যাডামস কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ার কারণে এখনো তার যে সামান্যসংখ্যক সমর্থক ভোটার রয়েছেন, তাদের সিংহভাগই কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান। তারা শ্বেতাঙ্গ অভিজাত রাজনীতিবিদ অ্যান্ড্রু ক্যুমোর পক্ষ গ্রহণ করবে এমন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। অতএব, তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ক্যুমোর পক্ষে ভোট না দিয়ে মামদানিকে সমর্থন করবে, এটাই স্বাভাবিক। শুধু কৃষ্ণাঙ্গ, এশিয়ান ও ল্যাটিনো ভোটাররাই নন, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শ্বেতাঙ্গ ভোটারও ক্যুমোর পক্ষ সমর্থন করবেন না তার নৈতিকস্খলনজনিত কারণে। কারণ তিনি যখন স্টেট গভর্নর হিসাবে টানা তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছিলেন, তখন ১১ নারী, যাদের অধিকাংশই তার অফিসের বিভিন্ন পর্যায়ের স্টাফ, ক্যুমোর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উত্থাপন করেছিল। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা এবং অভিযোগের তদন্ত চলাকালে তিনি ২০২১ সালে পদত্যাগ করেন। যদিও তিনি এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও কল্পকাহিনি বলে উড়িয়ে দিতে চেষ্টা করেছেন, তা সত্ত্বেও তার রাজনৈতিক জনপ্রিয়তায় যে বিরাট ধস নেমেছিল, তা কাটিয়ে ওঠা যে সহজ নয়, তা প্রমাণিত হয়েছে জুনের ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান তরুণ জোহরান মামদানির কাছে বিপুল ভোটে পরাজয়ে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও