
সমাজে ভিন্নমতের সহাবস্থান জরুরি
আজকের বিশ্বে একটি দেশের ধর্ম, সম্প্রদায় ও ভাষার মধ্যে বৈচিত্র্য গণতান্ত্রিকতার সৌন্দর্য হলেও, এটি প্রায়ই সংঘাতের জন্ম দেয়। ‘আমরা বনাম তারা’ মানসিকতা মানুষের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করে, যা সমাজকে বিভাজনের দিকে নিয়ে যায়। প্রায় ক্ষেত্রে দেখা যায় সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষেরা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর আধিপত্য এবং নিজ স্বার্থে তাদেরকে কোণঠাসা করে রাখতে চায়। ফলে একসময় তা দ্বন্দ্বের পথ ধরে সংঘাতের দিকে চলে যায়। এতে সমাজের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। সমাজে সীমিত সম্পদ ও সুযোগ থাকলে এক গোষ্ঠী অন্য গোষ্ঠীর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। কখনো কখনো ধর্ম, ভাষা বা রীতিনীতি ভিন্ন হওয়ায় বোঝাপড়ার অভাব দেখা দেয়, যা মানুষের মধ্যে অসহিষ্ণুতা বাড়িয়ে তোলে। রাজনৈতিক নেতৃত্বও বিভাজনকে শক্তি হিসেবে ব্যবহার করে। এসব কারণেই সমাজে জন্ম নেয় অবিশ্বাস, বিভাজন ও ক্ষোভ।
ভিন্নমত এবং ধর্ম-সম্প্রদায় ও ভাষাবৈচিত্র্য একটি সুস্থ সমাজের লক্ষণ। এটি বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার কথা থাকলেও তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশে এটি প্রস্ফুটিত হতে দেখা যায় না। ফলে ভিন্নমতকে আক্রমণ বা বৈষম্যের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তখন তা সমাজের স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক সময় মতের বিরোধ ব্যক্তিগত আক্রমণে পরিণত হয়। মানুষ ভয় এবং অবিশ্বাসের মধ্যে বাস করতে শুরু করে, যা সমাজের অভ্যন্তরীণ সম্পর্ককে নষ্ট করতে সাহায্য করে। ইতিহাসে গোষ্ঠীগত সংঘাতের উদাহরণ বহুবার দেখা গেছে। প্রাচীন সভ্যতা থেকে শুরু করে আধুনিক রাষ্ট্র পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা সামাজিক মতভেদ সংঘাতের জন্ম দিয়েছে। কোনো সমাজ তখনই স্থিতিশীল থাকে, যখন ভিন্নমতকে গ্রহণযোগ্যভাবে সমাধান করা হয়। ইউরোপের ধর্মীয় যুদ্ধ, ভারতীয় উপমহাদেশের সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব কিংবা আফ্রিকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘাতগুলো দেখায় সামাজিক ঐক্য বজায় রাখার জন্য যথাযথ নীতি এবং সমঝোতা কতটা প্রয়োজনীয়।