গুপ্ত শব্দটি আমাদের রাজনীতিতে আবির্ভূত হয়েছে খুব দুঃখজনকভাবে। ছাত্র রাজনীতিতে বিশেষ এক গোষ্ঠীর আদর্শবিচ্যুত অবস্থানকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার অপচেষ্টা থেকে কথাটির আবির্ভাব।
নৈতিকভাবে এ অবস্থানটা যে যথার্থ নয়, সেটা বিবেকবান যে কোনো মানুষই স্বীকার করবে। অবশ্য, অনেকে এটাকে কৌশল বলতে চাচ্ছে। কিন্তু এটাকে আমরা অপকৌশল বা কূটকৌশল বলতে পারি। কিন্তু আমরা কোনোভাবেই এই গুপ্ত পরিচয়কে আদর্শিক বলতে পারি না।
আমরা জানি, তারুণ্যের সবচেয়ে বড় অহংকার হচ্ছে সত্য প্রকাশের। এ কারণে তারা অবলীলায় বুক চিতিয়ে দিতে পারে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য। আমাদের এই বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে স্বৈরাচারবিরোধী বা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যতগুলো আন্দোলন হয়েছে, তার সামনের সারিতে এ ছাত্ররাই ছিল। তারা কিন্তু কখনো নীতির সঙ্গে আপস করেনি। তাদের কিন্তু গুপ্ত অবস্থান নিয়ে নিজেদের আত্মরক্ষা করার মতো নীতিহীন কাজও কখনো করতে হয়নি। এ কারণে শুধু আত্মরক্ষার অজুহাতে কৌশলের অবস্থান নেওয়া যায়, এমন ধারণা প্রতিষ্ঠিত হতে দেওয়া আমাদের জন্য খুব একটা শুভ উদ্যোগ নয়। আর সেকারণে গুপ্ত স্বৈরাচার বলতে তারা তো চিহ্নিত হতেই পারে।
তারা তো সেই সময় স্বৈরাচারের সব অপকর্মের দোসর হিসাবে নিজেদের জ্ঞাতসারেই সম্পৃক্ত করেছে, এবং তারা নিজেদের More Catholic Than Pope প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগ যত বেশি নির্মম হতে পারে, তার চেয়ে বেশি নির্মমতা তারা দেখানোর চেষ্টা করেছে শুধু এটা দেখানোর জন্য যে তারা গুপ্ত নয়, যদিও পরে তাদের নাম ধামও ক্রমান্বয়ে প্রকাশিত হচ্ছে এবং তাদের এ গুপ্ত পরিচয় আজ সবার সামনে উন্মোচিত হচ্ছে ক্রমান্বয়ে। তবে দুঃখজনক এ কারণে যে তাদের এ অনৈতিক অবস্থানকে তারা কৌশল শব্দটির সাহায্যে আড়াল করতে চায়। তারা এমনকি তরুণ প্রজন্মকে এমন ধারণা দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে যে, প্রয়োজনে এমন অবস্থান নেওয়া যেতেই পারে। এমন দ্বিচারিতার অবস্থান সহজ বা স্বাভাবিক-এমন স্বীকৃতি দিলে যে উদাহরণ প্রতিষ্ঠিত হবে সেটাকে আর যাই হোক, নৈতিক বলা যায় না নিঃসন্দেহে।
নিজেদের সঠিক অবস্থান আড়াল করতে তারা স্বৈরাচারের লাঠিয়াল ছাত্রলীগ বা যুবলীগের চেয়ে সহস্র গুণ নির্মমতায় সাধারণ ছাত্রদের নির্যাতন করেছে। ফলে স্বৈরাচার হিসাবে চিহ্নিত পতিতদের পরিচয় যদি প্রকাশ্য স্বৈরাচার হয়, তবে এদের তো গুপ্ত স্বৈরাচার বলাই যায়।
ফলে তাদের ব্যাপারে সতর্কতার প্রয়োজন আমাদের অবশ্যই আছে। কারণ, আমরা যখন একজন অত্যাচারীকে যদি প্রকাশ্য হিসাবে জানি, তখন পরিচিতি নিয়ে সংশয় থাকে না। কারণ সে তার পরিচিতি গোপন না করেই স্বমূর্তিতে আবির্ভূত হয়। আবার যে লোকটি মিত্র, তাকেও স্পষ্ট চেনা যায়। কিন্তু যখন একজন মিত্রের ছদ্মাবরণে ঘাতক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়, যেটাকে আমাদের ধর্মের ভাষায় মুনাফেক বলা হয়, সেটা ধর্মও যেমন গ্রহণ করে না, তেমনি রাজনৈতিক আদর্শের জায়গাতেও এ গুপ্তের নামে, কৌশলের নামে, শুধু নিজেদের আত্মরক্ষার করানোর কারণে যখন এরকম আত্মরক্ষার একটা জায়গা তারা গ্রহণ করে, তখন তারাও নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা হারায়।