২৯ সেপ্টেম্বর পালিত হয় বিশ্ব হার্ট দিবস, যার মূল লক্ষ্য মানুষকে হৃদরোগের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করা এবং প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা। হৃদরোগ শুধু ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সমস্যা নয়; এটি একটি জাতীয় স্বাস্থ্য সংকট, যা আমাদের অর্থনীতি, পরিবার এবং সামগ্রিক সমাজব্যবস্থার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ হৃদরোগ ও স্ট্রোকে মারা যান—অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার প্রাণ হারায় এই রোগে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি অংশের মৃত্যু তামাকজনিত কারণে, যা পুরোপুরি প্রতিরোধযোগ্য।
তামাক : হৃদরোগের নীরব ঘাতক
তামাক ব্যবহার হৃদরোগের সবচেয়ে বড় ও প্রতিরোধযোগ্য ঝুঁকিগুলোর একটি। বিশ্বে প্রতিবছর ৮০ লাখের বেশি মানুষ তামাকজনিত রোগে মারা যান, যার মধ্যে প্রায় ৩০ লাখ মৃত্যু ঘটে হৃদরোগ ও রক্তনালির জটিলতায়। বাংলাদেশেও চিত্র ভয়াবহ—প্রতি বছর ১,৬১,০০০ জনেরও বেশি মানুষ তামাকজনিত কারণে অকালে মৃত্যুবরণ করেন।
ধূমপান কিংবা ধোঁয়াবিহীন তামাক—দুইটিই হৃদরোগের জন্য দায়ী। নিকোটিন ও কার্বন মনোক্সাইড রক্তচাপ বাড়ায়, রক্তনালিকে সংকুচিত করে এবং হৃদযন্ত্রে অক্সিজেন সরবরাহ কমিয়ে দেয়। প্রতিদিন মাত্র একটি সিগারেট খেলেও হৃদরোগের ঝুঁকি অধূমপায়ীদের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি। এমনকি পরোক্ষ ধূমপান থেকেও হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি ২৫–৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়।
এই প্রভাব শুধু স্বাস্থ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়—হৃদরোগে আক্রান্ত একজন ব্যক্তির চিকিৎসা ব্যয় অনেক সময় একটি পরিবারকে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রে ঠেলে দেয়। তামাকজনিত কারণে যে অসংখ্য মানুষ দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতায় ভোগেন, তাদের চিকিৎসা ব্যয় ও শ্রমঘণ্টার ক্ষতি যোগ করলে এই ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ দাঁড়ায় বছরে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার সমান (বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটি)। এর বিপরীতে তামাক খাত থেকে সরকার যে রাজস্ব আয় করে, তা তুলনামূলকভাবে অনেক নগণ্য। ফলে, তামাকের বিরুদ্ধে লড়াই কেবল স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য নয়, বরং এটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির লড়াইও বটে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে হৃদরোগ ও তামাক
বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগ (NCDs) এখন প্রধান মৃত্যুর কারণ, যার মধ্যে হৃদরোগের অবস্থান শীর্ষে। ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট মৃত্যুর প্রায় ৭১ শতাংশের পেছনে রয়েছে NCD, যার এক-তৃতীয়াংশের বেশি হৃদরোগজনিত। প্রতিবছর প্রায় ৩ লাখ মানুষ হৃদরোগে মারা যান, যার অর্ধেকেরও বেশি মৃত্যু ঘটে ৭০ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই।