
আওয়ামী লীগ মোকাবিলা : যে দেবতা যে ফুলে তুষ্ট
যদিও আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যভাগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঘোষিত হয়েছে, তা সত্ত্বেও রাজনৈতিক অঙ্গন স্বচ্ছ মনে হচ্ছে না। কোথায় যেন একটি অনিশ্চয়তার ছায়া দেখা যাচ্ছে। ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনের পর রাকসু ও চাকসুর নির্বাচন ধার্য করা হয়েছিল যথাক্রমে ২৫ সেপ্টেম্বর ও ১২ অক্টোবর। অথচ শেষ মুহূর্তে এ দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচনই পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। দুটি বিশ্ববিদ্যালয়েই এখন নির্বাচন হবে মধ্য অক্টোবরে। নির্বাচন পেছানো নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দল অর্থাৎ ইসলামী ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের মধ্যে বাগ্যুদ্ধ শুরু হয়েছে।
নিউইয়র্কে আখতার ও তাসনিম জারার ওপর আওয়ামী হামলা : ওইদিকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদানের জন্য ড. ইউনূস ছয়জন রাজনৈতিক নেতাকে তার সফরসঙ্গী করেছিলেন। নিউইয়র্কে জেএফকে অর্থাৎ জনএফ কেনেডি বিমানবন্দরে (এটি সাধারণত কেনেডি বিমানবন্দর নামেই পরিচিত) আওয়ামী লীগের গুন্ডা-পান্ডারা রাজনৈতিক নেতাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন। আরেকদিকে ভারতের একটি অখ্যাত নিউজ পোর্টালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাক্ষাৎকার বলে কথিত একটি নিউজ আইটেম নিয়ে দেশে তুমুল উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
বুধবার সন্ধ্যায় এ কলাম লেখার সময় জানা গেল, রাজধানীর উত্তরা, ফার্মগেট, তেজগাঁও ইত্যাদি এলাকায় আওয়ামী লীগ ঝটিকা মিছিল করেছে। এ ঝটিকা মিছিল থেকে এবং মিছিলের পর ২৪৪ আওয়ামী লীগ কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের তথ্য মোতাবেক আটক ব্যক্তিরা ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর ও গোপালগঞ্জ থেকে এসেছিলেন। ডিএমপির ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনের অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল ইসলাম জানান, বুধবার ঢাকায় যে ২৪৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের কাছ থেকে ১৪টি ককটেল ও একটি ব্যানার উদ্ধার করা হয়েছে। নজরুল ইসলাম আরও বলেন, এর আগে ডিএমপির ধারাবাহিক অভিযানে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে তারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টা করেছিল। অন্যদিকে একটি বাংলা সহযোগী বুধবার অপরাহ্নে তার অনলাইন সংস্করণে যে খবর প্রকাশ করেছে, তার শিরোনাম, ‘হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ছয় মামলার রায় নভেম্বরে : দুদক চেয়ারম্যান’। যদি এ খবরটি সঠিক হয়ে থাকে, তাহলে ধরে নেওয়া যায়, অক্টোবরের শেষে বা নভেম্বরের প্রথমে এ রায় যাতে বন্ধ করা যায়, তার জন্য আওয়ামী লীগ মরিয়া হয়ে চেষ্টা করবে।
এমনিতেই দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার জন্য এবং ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বানচাল করার জন্য গত ২ মাস ধরে আওয়ামী লীগ ধারাবাহিকভাবে ঝটিকা মিছিল করছে। এখন তাদের মিছিলের আগে বা পরে ককটেল ফোটানোর খবরও দেখা যাচ্ছে। শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে যদি আদালত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের রায় দেন, তাহলে আওয়ামী লীগের যারা গোলমাল সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে, তারা নিরুৎসাহিত হয়ে যাবে।
এসব খবরের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এনায়েত করিম নামক এক ব্যক্তির নাম। তার সম্পর্কে বাংলাদেশের পত্রপত্রিকা যেসব খবর দিচ্ছে, সেগুলো তার সঠিক পরিচয় প্রকাশ করছে বলে মনে হয় না। তার যে সঠিক পরিচয় এবং তৎপরতা তার সঙ্গে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর প্রত্যক্ষ সংযোগ রয়েছে বলে ধারণা করা যায়। ২৪ সেপ্টেম্বর আরেকটি খবরে প্রকাশ, ফরিদপুর সদর উপজেলায় চাঁদা না পেয়ে মাহিন্দ্রা স্ট্যান্ড দখলে নিতে হামলা চালিয়ে ১৬টি মাহিন্দ্রা ভাঙচুরের ঘটনায় জেলা যুবদলের সহসভাপতি মাসুদুর রহমান ও তার সহযোগী আনন্দ শুভ্র রায়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
আমরা এখন একটি একটি করে এসব খবর সংক্ষেপে আলোচনা করব। প্রথমে রাকসু ও চাকুস নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার খবর।
২.
দৈনিক যুগান্তর ২৪ সেপ্টেম্বর প্রথম পৃষ্ঠায় দ্বিতীয় প্রধান যে সংবাদটি প্রকাশ করেছে, তার শিরোনাম ‘হঠাৎ পোষ্য কোটার সিদ্ধান্তে নানা প্রশ্ন’। এ খবরের ইনসেটে যা বলা হয়েছে, তার শিরোনাম হলো, ‘নতুন তারিখেও রাকসু নির্বাচন নিয়ে সংশয়/উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৬২ সন্তানকে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয় কমিটি/কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করছেন বিএনপিপন্থিরা, এ কর্মসূচি থেকে সরে গেছেন জামায়াতপন্থিরা।’ নানা অজুহাতে এ পর্যন্ত তিনবার নির্বাচন পেছানো হয়েছে। প্রথমে ১৫ সেপ্টেম্বর, এরপর ২৮ সেপ্টেম্বর এবং সর্বশেষ ২৫ সেপ্টেম্বর ভোটগ্রহণের দিন নির্ধারিত ছিল। এখন তা পিছিয়ে ১৬ অক্টোবর নেওয়া হয়েছে। সূত্রগুলো জানায়, প্রথম তফশিলে ১৫ সেপ্টেম্বর ভোট হওয়ার কথা ছিল। ওই সময় নির্বাচনি প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বাড়তি সময় চায় ছাত্রদল। ছাত্র অধিকার পরিষদ ও বামপন্থি সংগঠনগুলো হল থেকে একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন এবং ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নের দাবি জানায়। তাদের ওই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন ২৮ সেপ্টেম্বর ভোটের তারিখ নির্ধারণ করে। ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে পূজার বন্ধ শুরু হওয়ার তারিখ থাকায় শিক্ষার্থীরা ভোট এগিয়ে আনার দাবি জানান। ওইদিনই ২৫ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করা হয়। এরই মধ্যে পোষ্য কোটা ইস্যুতে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটে। এতে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা এবং অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়ায় আবারও ভোটের তারিখ পেছানোর দাবি জানায় ছাত্রদলসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভোটের তারিখ ১৬ অক্টোবর নির্ধারণ করা হয়েছে।
নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. সেতাউর রহমান বলেন, কোনো না কোনো দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। নতুন তারিখে নির্বাচন নিয়ে এখনো সংশয় দেখছি না। তবে ছুটি শেষ হওয়ার পর ক্যাম্পাস খুললে তখন পরিস্থিতি বোঝা যাবে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- ডিম ছুড়ে মারা
- আওয়ামী লীগ